সব ছেড়ে ক্রিকেট প্রেমে মশগুল

পড়াশুনা ছেড়েছেন। বাবা-মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, হবেন বিশ্ব নন্দিত পেসার। টেপ টেনিস থেকে যাত্রা শুরু রিপন মণ্ডলের। সেখান থেকেই স্থানীয়দের নজর কাড়েন। বিশেষত্ব জোরে বল করতে পারা। সবার কথা একটাই, ‘তুই জোরে বল করতে পারিস, তোর ক্রিকেট বলে খেলা উচিৎ।’ ব্যাস, শুরু এক নতুন দিগন্তের পানে যাত্রা।

২০২২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপটা নিশ্চয়ই ভুলে যেতে চাইবে বাংলার যুবারা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হয়েই টাইগার যুবারা পৌঁছেছিলেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। শিরোপাটা ঘরে রেখে দেওয়ার লড়াই। কিন্তু না, এমন নিদারুণ বাজে পারফরমেন্স কেউ তো আর মনে রাখতে চাইবে না। অষ্টম পজিশনে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন দলের এ কেমন ভরাডুবি!

তবে গোবরে পদ্মফুল ফোঁটার মত করেই ২০২২ বিশ্বকাপে ফোঁটা ফুল রিপন মণ্ডল। আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার ছিলেন রিপন। ছিলেন আইসিসির টুর্নামেন্ট সেরা একাদশেও। এমন এক বোলারকে তো হারিয়ে যেতে দেওয়া যায় না। তাইতো তাঁর ঠিকানা হয় বাংলাদেশ হাই পারফরমেন্স ইউনিট। অথচ তিনি তো বছর পাঁচেক আগেও ছিলেন জাতীয় দলের থেকেও এক আলোকবর্ষ কিংবা তারও বেশি দূরে।

ছয় ফুটের খানিক বেশি লম্বা। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। শুধু ক্রিকেট খেলবেন বলেই পড়াশুনার পর্বটা একপ্রকার বন্ধই করে রেখেছেন। তিনি চেয়েছেন বিশ্বসেরা বোলার হতে, তাঁর আদর্শ তাই ডেল স্টেইন। স্টেইনের মত আগ্রাসী বোলিং করবার ইচ্ছেই তাঁর। ২০১৭ সালে প্রথম তিনি প্রাতিষ্ঠানিক ক্রিকেট দীক্ষা নেওয়া শুরু করেন। রাজধানীর মহাখালির এক ক্লাব দিয়েই তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক ক্রিকেট রপ্তের যাত্রা শুরু।

বয়স তখন হবে ১৪ কিংবা আরেকটু বেশি। সে বছরই তিনি তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটে নাম লিখিয়ে ফেলেন। বয়সভিত্তিক দল পার করে আসার গতানুগতিক নিয়ম না মেনেই তিনি পদার্পণ করেছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে। হঠাৎ উদীত হওয়া এক তারা হয়েই আগমন তাঁর। তবে ২০১৭ সালের তৃতীয় বিভাগে ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলেও তিনি পরবর্তী মৌসুমে ঠিকই খেলেন।

নিজের গতি, আর দারুণ লাইন-লেন্থের সাথে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং মিলিয়ে নজর কাড়েন বিসিবির কর্তাদের। উইকেটের ঝুলিও রেখেছিলেন পূর্ণ। উচ্চতা ভাল, ছোট বয়সেই বলে গতি রয়েছে। এমন একজন বোলার তো বাংলাদেশের ভীষণ প্রয়োজন। তাইতো তিনি চলে এলেন বিসিবির রাডারে। নিশ্চয়ই একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন রিপন মণ্ডল। দৃশ্যপটের দূর-দূরান্তে ছিল না যার অস্তিত্ব তিনিই কি না স্বপ্নের পথে হাটতে শুরু করেছেন।

বিসিবির আস্থার প্রতিদান তিনি দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। জন্মলগ্ন থেকেই কেউ কেউ প্রতিভার অধিকারী  হয়ে থাকেন। তেমনই এক প্রতিভাবান খেলোয়াড় রিপন মণ্ডল। বিসিবি তাই রিপনের পরিচর্যায় দিয়েছে বেশ মনোযোগ। তাঁকে রাখা হয়েছেন জাতীয় দলের পাইপলাইনে। রাজশাহীতে বাংলাদেশ টাইগার্স ও হাই পারফরমেন্স দলের মাঝে হওয়া চারদিনের ম্যাচেও রয়েছেন রিপন।

খেলছেন হাই পারফরমেন্সের হয়ে। ইতোমধ্যেই সকলকে মুগ্ধ করতে শুরু করেছেন। শুধু রিপন নন, এইচপি দলে থাকা মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি, মুশফিক হাসান, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধরাও মুগ্ধতা ছাড়াচ্ছেন। একটা মজার যোগ সাদৃশ্য রয়েছে এই চারজন পেসারের মাঝে। এরা প্রত্যেকেই উঠে এসেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে। আর তাঁরা প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশের আগামী দিনের পেস কাণ্ডারি হবার।

তবে এদের সবার চাইতে, রিপনের গল্পটা একটু ভিন্ন। তিনি ক্রিকেটের মায়াজালে নিজেকে জড়িয়ে ছেড়েছেন বাকি সবকিছু। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, পরিবার তাই বাঁধাও দেয়নি খুব একটা। নিশ্চয়ই বাবা মায়ের মুখ একদিন উজ্জ্বল করবেন রিপন মণ্ডল। হয়ে উঠবেন বাংলাদেশের আস্থাভাজন ও বিশ্বসেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link