২০১১ বিশ্বকাপ দলে তিনি ছিলেন না। কিন্তু, ডাক আসে ফাইনালের ঠিক আগে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ইনজুরিতে তাঁকে উড়িয়ে আনা হয় শ্রীলঙ্কা থেকে। মনে করা হচ্ছিল একটা সময় দলের বড় ভরসা হয়ে উঠতে পারেন এই সুরাজ রানদিভ।
তবে, রানদিভ উড়তে পারেননি। ক্যারিয়ারটা থমকে যায় ১২ টেস্ট, ৩১ ওয়ানডে আর সাত টি-টোয়েন্টিতে। একটা সময় যিনি ছিলেন লঙ্কান ক্রিকেটের ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সেই রানদিভ এখন পেট চালাতে অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করছেন বাস ড্রাইভার হিসেবে। মেলবোর্নে ফরাসি প্রতিষ্ঠান ট্রান্সদেভের বাস ড্রাইভার হিসেবে কাজ করছেন সাবেক এই স্পিনার।
এই পথে শুধু রানদিভই নন! আছেন চিনথাকা জয়াসিংহে, ওয়াডিংটন মোয়ায়েঙ্গার মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলা ক্রিকেটারও। যারা কিনা পেট বাঁচাতে বাধ্য হয়ে করছে ড্রাইভারের কাজ। পাশাপাশি ক্লাব ক্রিকেটেও খেলে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।
এই ট্রান্সদেভ কোম্পানিতে মোট ১২০০ জন শ্রমিক ড্রাইভারের কাজ করেন, যার মধ্যে রানদিভ সহ তিনজন রয়েছেন যারা তাদের দেশের জন্য একসময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছে।
সুরাজ রানদিভ তার এই চাকুরি ছাড়াও লোকাল খেলোয়াড় হিসেবে এখনো রয়েছেন বেশ সক্রিয়। ভারতের বিপক্ষে মেলবোর্নে অজিদের টেস্ট ম্যাচের আগে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে রানদিভকে তাদের বোলারদের বিপক্ষে বল করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই সুযোগ অবশ্য তিনি হাতছাড়া করেননি।
বর্তমানে রানদিভ বাস ড্রাইভিংয়ের পাশাপাশি ডানডেনং ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলছেন যেটা ভিক্টোরিয়া প্রিমিয়ার ক্রিকেটের অধিভুক্ত একটি ক্লাব। ভিক্টোরিয়া প্রিমিয়ার ক্রিকেট ক্লাবটি অস্ট্রেলিয়ার অঞ্চল ভিত্তিক ক্রিকেটে অংশ নিয়ে থাকে, যে দলে খেলেছেন জেমস প্যাটিনসন, পিটার সিডল, সারাহ এলিয়ট সহ আরো কিছু জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটার।
মোহাম্মদ মাশরুক মোহাম্মদ সুরাজ থেকে ২০০৯ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখেন সুরাজ রানদিভ। ২০০৮-০৯ সেশনে ঘরোয়া ক্রিকেটে ইনজুরি নিয়েও এক মৌসুমে ৪৩ উইকেট নিয়ে তাক লাগিয়ে দেন এই অফ স্পিনার! এরপরই খুলে যায় জাতীয় দলের দরজা।
তবে, রঙ্গনা হেরাথ আর অজন্তা মেন্ডিসের সময়ে জাতীয় দলে আসা যেনো কাল হয়ে দাড়ালো রনদিভের জন্য। ২০১১ সালে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের বদলি সুযোগ পান ওয়ানডে বিশ্বকাপে, সে বছর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএলে) চেন্নাই সুপার কিংসের হয়েও খেলার সুযোগ পান সাবেক এই অফ স্পিনার।
রানদিভ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলেছেন ১২ টি টেস্ট ম্যাচ। ৩.০৭ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৪৩ টি উইকেট! ব্যাট হাতে প্রায় নয় গড়ে করেছেন ১৪৭ রান। সংক্ষিপ্ত ফর্মেটে ওয়ানডেতে খেলেছেন ৩১ টি ম্যাচ ও টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন সাতটি ম্যাচ। ওয়ানডে ৩১ ম্যাচে ৫.০৬ ইকোনমিতে ৩৬ ও টি-টোয়েন্টিতে সাত ম্যাচে ৬.৬১ ইকোনমিতে নিয়েছেন সাত উইকেট।
চিনথাকা জয়াসিংহে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের হয়ে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। পাঁচ ম্যাচে মাত্র ৪৯ রান করেন জয়াসিংহে। ভারতের বিপক্ষে ২০০৯ সালের নয় ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক হয় জয়াসিংহের। বাজে পার্ফরমেন্সে দল থেকে বাদ পড়ার পর আর ফিরতে পারেননি সাবেক এই লঙ্কান ব্যাটসম্যান।
ওয়াডিংটন মোয়ায়েঙ্গা জিম্বাবুয়ে জাতীয় দলের মিডিয়াম ফার্স্ট বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিলেন। ২০০৫-০৬ সেশনে জিম্বাবুয়ের হয়ে একটি টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডে খেলেন এই পেসার।
তবে জীবনের চড়াই-উৎরাই থেকে নিস্তার পাননি তাঁরা কেউই। কষ্টের শুরুর পর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ালেও এখন সেগুলো শুধুই অতীত স্বপ্ন। জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে দু:খ কষ্ট ভুলে নেমেছেন পথে।