Social Media

Light
Dark

হিটম্যান, বিগ ইনিংস!

বর্তমান সময়ে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে আপনার চোখে সবচেয়ে বিপজ্জনক ক্রিকেটার কে? বিপজ্জনক এই অর্থে বুঝিয়েছি উইকেটে একবার সেট হয়ে গেলে প্রতিপক্ষের জন্য সবচেয়ে বড় থ্রেট মনে করেন কাকে?

ads

এবার একটু কল্পনা করুন, ঠিক কোমর বরাবর একটা বল ব্যাটসম্যান স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে গ্যালারিতে আছড়ে ফেললেন, প্রোপার বাউন্সার এবার একটা মোচড় দিয়ে ওয়েট ট্রান্সফার করে ব্যাকফুটে হুক হাওয়ায় ভাসিয়ে সীমানা দড়ির ওপারে, গুড লেন্থ ডেলিভারিতেও কি সাবলীল ধাচে এক্সট্রা কাভার দিয়ে সীমানা ছাড়া।

এই ব্যাটসম্যান এমনই যে উইকেটে একবার সেট হয়ে গেলে বোলাররা কোথায় বল ফেলবেন সেটাই তখন তাঁদের বোধগম্য হয় না। যেদিন টাচে থাকেন প্রতিপক্ষের অধিনায়কের সমস্ত ‘গেম প্ল্যান’ ধূলোর সাথে মিশিয়ে দিয়ে বোলারদের উপর রোলার কোস্টার চালাতে দেখা গেছে বহুবার। হ্যাঁ বলছিলাম একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ডাবল সেঞ্চুরির মালিক রোহিত শর্মার কথা।

ads

রোহিতের ক্যারিয়ারকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমভাগে আপনি যে রোহিত শর্মাকে খুজে পাবেন তিনি গড়পড়তা মাঝারি মানের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ২০০৭ সালে অভিষেকের পর ২০১৩ সালের আগপর্যন্ত তার ব্যাটিং পজিশন ছিল মিডল অর্ডারে। এরপর ২০১৩ সালে এসে ব্যাটিং পজিশনের প্রোমোশন হয়ে সরাসরি টিম ইন্ডিয়ার ওপেনার ব্যাটসম্যান বুনে গেলেন রোহিত শর্মা বদলে গেল ব্যাটিং পজিশন বদলে গেলেন রোহিত শর্মা। ২০১৩ সাল থেকে ওয়ানডেতে নিজেকে নতুন ভাবে চেনাতে শুরু করলেন।

২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভারত সফর। সাত ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ওপেনার রোহিত খেলেন ১৫৮ বলে ২০৯ রানের টর্নেডো ইনিংস যেখানে চারের চেয়ে ছয়ের মারই বেশি। ১২ চারের বিপরীতে ১৬ ছয়। রোহিতের অতিমানবীয় এই ইনিংসের উপর ভর করে ভারত ম্যাচ জিতে ৫৭ রানে। ২০১৩ সালের ওয়ানডেতে রোহিতের খেলা ২০৯ রানের ইনিংসটি ছিল ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস৷

২০১৪ সালের শ্রীলঙ্কার ভারত সফর। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে এবার ওয়ানডে ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস খেললেন রোহিত শর্মা। ১৭৩ বলের ২৬৪ রানের দানবীয় ইনিংস খেলার পর শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে যায় ২৫১ রানে। অর্থাৎ একজন রোহিত শর্মার রানই পুরো দল মিলেও তুলতে পারেনি।

পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫-তে ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস রোহিতের দখলে। কানপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৩৩ বলে ১৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলার পরও দলকে জেতাতে পারে নি। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ জিতে নেয় ৫ রানে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ( ১৬৩ বলে ২৩৭*) ইনিংস ছিল মার্টিন গাবতিলের।

২০১৬ তে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর। পার্থে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ভারত ৫ উইকেটে হারলেও রোহিত শর্মা সেদিন করেছিকেন ১৬৩ বলে ১৭১ রান। আগের তিন বছরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০১৬ সালেও ভারতের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস খেলেছিলেন রোহিত। ২০১৬ সালে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের তালিকার তিনে ছিল রোহিতের এই ইনিংস।

২০১৭ সালে মোহালিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পান রোহিত শর্মা। ১৫৩ বলে ২০৮ রানের ইনিংসটি ছিল ২০১৭ সালের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। ভারত সেই ম্যাচ জিতেছিল ১৪১ রানের বিশাল ব্যবধানে।

২০১৮ সালে মুম্বাইয়ে ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার চতুর্থ ওয়ানডে। রোহিতের ১৬২ রানের উপর ভর করে ৩৭৮ রানের পাহাড়সম টার্গেট বেধে দেন ক্যারিবীয়দের সামনে। হোল্ডারের দল অল আউট মাত্র ১৫৩ রানে৷ ওই ম্যাচে রোহিত শর্মার ১৩৭ বলে ১৬২ রানের ইনিংস ছিল সেই বছর ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। ২০১৮ সালের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের তালিকায় যেটি ছিল চার নাম্বারে। উল্লেখ্য সেবছর এই তালিকার এক নাম্বারে ছিল ফখর জামানের ২১০ রানের ইনিংসটি।

প্রতিবছর দলের পক্ষে ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করেছেন এই ভারতীয় পাওয়ার হিটার। এই হিসেবের হেরফের হয় নি গত দুই বছরেও। গতবছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৫৯ রানের ইনিংস ছিল ২০১৯ সালে ভারতের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। ২০১৯ সালের সেরা পাচঁ সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসের একটি ছিল রোহিতের এই ইনিংস। চলতি বছরেও এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১৯ রানের ইনিংসই ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান।

অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে টানা আট বছর দলের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলে আসছেন রোহিত শর্মা। এরমধ্যে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি সেই বছরের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। ওয়ানডে ক্রিকেট এখন পর্যন্ত ডাবল সেঞ্চুরি দেখেছে মোট আটটি যার তিনটি রোহিতের যেখানে একের অধিক নেই আর কারোর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link