আর্মব্যান্ডে বাঁচে জীবন

রোনালদোর মা তাকে জন্ম দিতে চাননি অভাবের তাড়নায়। গর্ভপাত করাতে গিয়েও কি ভেবে যেন ফিরে আসেন। সেদিন ফিরে না আসলে হয়তো ফুটবলবিশ্বও পেতো না তার এই সোনার ছেলেকে। ছোটবেলায় তাই খুব কাছে থেকে রোনালদো দেখেছিলেন দারিদ্যের নির্মমতা। মাদেইরার রাস্তায় খালি পায়ে খেলেই বড় হয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ফুটবলার। কিন্তু তা সত্ত্বেও কখনো ভুলে যাননি মাদেইরার সেই দিনগুলোর কথা। তাই তো যখনি সুযোগ পেয়েছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন মানুষের। বিশ্বের সবচেয়ে দানশীল ক্রীড়াবিদ তিনিই।

মানুষ সফল হবার নাকি শিকড়কে ভুলে যায়। আমাদের সমাজে বহুল চর্চিত একটি বাক্য। কিন্তু কেউ কেউ থাকেন যারা কিনা ভুলেন না তার আদি এবং অকৃত্রিক আবাসস্থল। চেষ্টা করেন শিকড়কে মজবুত করতে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো তাদেরই একজন।

রোনালদোর মা তাকে জন্ম দিতে চাননি অভাবের তাড়নায়। গর্ভপাত করাতে গিয়েও কি ভেবে যেন ফিরে আসেন। সেদিন ফিরে না আসলে হয়তো ফুটবলবিশ্বও পেতো না তার এই সোনার ছেলেকে। ছোটবেলায় তাই খুব কাছে থেকে রোনালদো দেখেছিলেন দারিদ্যের নির্মমতা।

মাদেইরার রাস্তায় খালি পায়ে খেলেই বড় হয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ফুটবলার। কিন্তু তা সত্ত্বেও কখনো ভুলে যাননি মাদেইরার সেই দিনগুলোর কথা। তাই তো যখনি সুযোগ পেয়েছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন মানুষের। বিশ্বের সবচেয়ে দানশীল ক্রীড়াবিদ তিনিই।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে যখন রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন তখন মাদ্রিদে তার বিলাসবহুল বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সেই টাকা তিনি ব্যয় করেছিলেন সিরিয়ার দরিদ্রপীড়িত মানুষকে বাড়ি তৈরি করে দিতে, প্রায় ৫০০০ সিরিয়ান মানুষ সেবার পেয়েছিল মাথা গোঁজার ঠাঁই। নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর তিনি ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ নামে দাতব্য সংস্থায় দান করেছিলেন বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬১ কোটি টাকা।

এছাড়া ২০১১ সালে জেতা গোল্ডেন বুট তিনি বিক্রি করে দিয়েছিলেন ফিলিস্তিনের গাঁজায় আহত শিশুদের চিকিৎসার অর্থ সহায়তা দিতে। ১০মাস বয়সি তুর্কিশ শিশু এরিক ওর্তিজ আক্রান্ত ছিল ব্রেন টিউমারে, দরকার হয়েছিল অপারেশনের। কিন্তু তার বাবা-মা প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা না করলে পারলে মেইল করেন রোনালদোকে। যদি রোনালদো তার বুট আর জার্সি দেন যেন সেটা বিক্রি করে তারা অর্থের ব্যবস্থা করতে পারে।

বিষয়টি জানতে পেরে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি রোনালদো, সাথে সাথে পাঠিয়ে দেন নিজের জার্সি আর বুটজোড়া। ২০১১ সালে ইন্দোনেশিয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পরে মার্তুইস নামের ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে আহতাবস্থায় পাওয়া যায় ছেঁড়া রোনালদোর পর্তুগালের জার্সি গায়ে। রোনালদো ছেলেটিকে নিজের বিমানে করে পর্তুগালে নিয়ে আসেন এবং তাকে নিজের একটি জার্সি উপহার দেয়ার পাশাপাশি তার সমস্ত দায়িত্ব নেন।

২০১৬ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পর ক্লাব থেকে পাওয়া বোনাসের পুরোটাই তিনি দান করে দেন এক দাতব্য সংস্থায়। এছাড়াও রোনালদো রক্তদান করেন বিধায় গায়ে কোনো ট্যাঁটু আঁকেন না। বারবার রোনালদো প্রমাণ করেছেন তারকার ঊর্ধ্বে তিনি একজন মানুষ।

সম্প্রতি ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা। সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে রেফারির ভুল সিদ্ধান্তে রোনালদোর গোল বাতিল হয়ে গেলে রাগে-ক্ষোভে তিনি আর্মব্যান্ড ছুঁড়ে মারেন। এক ব্যক্তি সেটা কুঁড়িয়ে নেন এবং নিলামে তোলার ব্যবস্থা করেন। নিলামে আর্মব্যান্ডটি ৭৫ হাজার ইউরোতে বিক্রি হয়। তিনি এই অর্থ ছয় বছর বয়সী এক শিশুর অপারেশনের জন্য দান করেন। তার দেয়া অর্থে দ্রুততম সময়ে শিশুটির অপারেশন হয় এবং শিশুটি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়।

জীবন অনেক অদ্ভুত। জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে যার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। রোনালদো রাগেই ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তার আর্মব্যান্ডটি অথচ ক্ষণিকের সেই রাগ জীবন বাঁচিয়ে দিল একটি শিশুর। রোনালদোরা আছেন বলেন হয়তো পৃথিবী সুন্দর।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...