৪৯ (২৪), ৫১ (২৪), ৪০ (২৩), ৫০ (২৪) – কি ভাবছেন? কোনো এক ব্যাটারের বিধ্বংসী ব্যাটিং ইনিংস নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই বড় কোনো তারকা ক্রিকেটারের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স? – না, এই পরিসংখ্যানটা এবারের আইপিএলে চার ম্যাচে বল হাতে কলকাতা নাইট রাইডার্সের পেসার প্যাট কামিন্সের পারফরম্যান্সের।
টেস্ট ক্রিকেটে তিনি বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা। ওয়ানডেতেও তিনি বেশ সফল বোলার। তবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এবারের আসরে নামের পাশে ‘রান মেশিন’ তকমা পেয়েছেন এই অস্ট্রেলিয়ান পেসার। প্রতিপক্ষের কাছে পাড়ার বোলারদের মতোই প্রতি ম্যাচে বেধরক মার খাচ্ছেন এই অজি পেসার। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল বন্যায় ভাসছেন তিনি। ক্রিকেট সমর্থকরা ইতিমধ্যেই ‘ রান মেশিন ‘ ট্যাগটা নামের পাশে জুড়ে দিয়েছেন কামিন্সের।
আসরের শুরুটা ব্যাট হাতে বিধ্বংসী ইনিংসে। রেকর্ড গড়া ইনিংসে আইপিএল ইতিহাসে দ্রুততম ফিফটিতে লোকেশ রাহুলের সাথে যৌথভাবে শীর্ষে নাম লেখান তিনি। পুনের মাটিতে একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যাটার হিসেবে নিজেকে ভিন্ন ভাবেই চিনিয়েছিলেন কামিন্স। কিন্তু কে জানতো এই ছক্কাই অভিশাপে রূপ নিবে এই অজি পেসারের জীবনে।
ব্যাট হাতে দাপটের শুরু এবং শেষটা বলতে গেলে প্রথম ম্যাচেই। ব্যাটার কামিন্সের জন্য বলতে গেলে দুর্দান্ত এক আসর। কিন্তু বোলার কামিন্স? ব্যাট হাতে যে পরিমাণ ছক্কা হাঁকিয়েছেন তার দ্বিগুন তিনি হজম করেছেন বল হাতে।
এবারের আইপিএলে ‘ফিফটি’ শব্দটা কামিন্সের জন্য যেমন আশীর্বাদ তেমনি অভিশাপও। এখন পর্যন্ত চার ম্যাচে খেলেই দেখা পেয়েছেন তিন ফিফটির। নিঃসন্দেহে কামিন্সের জন্য দুর্দান্ত কিছু? – কিন্তু না, এই তিন ফিফটির একটি করেছেন ব্যাট হাতে, বাকি দুই ফিফটিই করেছেন বল হাতে!
৪ ম্যাচ, ৪ উইকেট। ৯৬ বল ,১৫০ রান। ইকোনমি ১২, গড় প্রায় ৪৮!
প্রথম ম্যাচটায় অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে কলকাতাকে জয় ঠিক এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু বল হাতে দলকে চার ম্যাচেই ডুবিয়েছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে শিকার করেন দুই উইকেট। অল্পের জন্য পঞ্চাশ স্পর্শ করতে পারেননি তিনি! পরের ম্যাচে অবশ্য ফিফটি মিস হয়নি। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে চার ওভারে দেন ৫১ রান, উইকেটের দেখাও পাননি। এরপর নিজের তৃতীয় ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ৩.৫ ওভারে দেন মাত্র ৪০ রান। কামিন্সের এবারের পারফরম্যান্স বিবেচনায় এই রানকে অবশ্য ‘কেবল’ কিংবা ‘মাত্র’ দ্বারা সহজেই বিশেষায়িত করা যায়।
এরপর সবশেষ রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে জশ বাটলারের কাছে তুলোধুনো হয়েছেন এই অজি পেসার। এবার বরাবর পঞ্চাশ। ৪ ওভারের স্পেলে ৫০ রান দিয়েছেন, ম্যাচে স্বস্তি বলতে ঝুলিতে বাটলারের মূল্যবান উইকেট। অবশ্য সেঞ্চুরির পর শেষবেলায় পাওয়া উইকেট টা মূল্যবান না বলে স্রেফ স্বস্তি বলাই শ্রেয়।
১৩ বছর বয়সে এক প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে গতি আর বাউন্সারে এতবার আঘাত করেছিলেন যে তাঁর মা পর্যন্ত বলেছিলেন, ‘আর মেরো না আমার ছেলেকে। দয়া করে ওকে বাউন্সার দেওয়া বন্ধ করো।’
টেস্ট ও ওয়ানডেতে কামিন্সের সেই বিধ্বংসী বাউন্সার কিংবা অগ্নিঝরা বোলিংটা এখনও আছে। আর তা দিয়েই ধরাশায়ী করছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও হয়ত একই কৌশলেই সফল হবার পণ করেছেন কামিন্স। তবে সেই কৌশলে যে তিনি চরম ব্যর্থ হয়েছেন সেটা তো প্রমাণিত। শুধু বাউন্স কিংবা পেস দিয়ে অন্তত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সফল হতে পারবেন না।
বোলিংয়ে বৈচিত্র্যতা না দেখাতে পারলে এভাবেই ম্যাচের পর ম্যাচ বল হাতে খরুচে হিসেবে থাকবেন তিনি। সময়ের অন্যতম সেরা এই পেসার আইপিএলে এখন রান মেশিন। ব্যাপারটা কামিন্সের জন্যও লজ্জাজনক। নিজের সামর্থ্যটা তিনি ভাল করেই জানেন। হয়ত ব্যর্থতার সাগরে তীরের দেখাটা পাচ্ছেন না এই পেসার।
সাদা পোশাকে এখন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতেও জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে কামিন্সের এমন হতশ্রী বোলিংটা তাঁর জন্য মোটেও শুভকর নয়। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজন একটি দুর্দান্ত স্পেল। ভুল শুধরে নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংটা করতে পারলে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের সামনে হয়ত এমন অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হবে না।
কিন্তু বৈচিত্র্যময় বোলিংটা না করতে পারলে আসরের বাকি সময়টা রান মেশিনের লজ্জাকর তকমা নিয়েই হয়ত কাটাতে হবে এই পেসারকে!
২০২০ আসরে ১৫.৫০ কোটি রুপিতে কামিন্সকে দলে ভেড়ায় কলকাতা। অবিশ্বাস্য মূল্যে কামিন্সকে দলে নেওয়ার পর থেকেই ছিল আলোচনা-সমালোচনা। এরপর সাদামাটা পারফরম্যান্সে সমর্থকদের নিন্দায় তুলোধুনো হয়েছেন বেশ কয়েকবার। এরপর চলতি আসরের মেগা নিলামে ৭.২৫ কোটি রুপিতে আবারও কামিন্সকে কিনে নেয় কলকাতা। অস্ট্রেলিয়ান এই পেসারকে পেতে নিলামঘরে অবশ্য বেশ যুদ্ধ করতে হয়েছে কলকাতাকে। কিন্তু নতুন আসরেও সেই সাদামাটা কামিন্স। এবারের রূপটা আরও হতশ্রী।
টানা তিন ম্যাচে হেরে প্লে অফের লড়াইয়ে খানিকটা পিছিয়ে আছে টুর্নামেন্টের শুরুতে শীর্ষে থাকা কলকাতা। কামিন্স দাপটে প্রথম ম্যাচ জিতলেও পরের টানা তিন ম্যাচেই হেরে ব্যাকফুটে কলকাতা। দলের এমন অবস্থার জন্য অবশ্য কামিন্সের দায়টাই অনেক বেশি। পেস বিভাগের নেতৃত্বে থাকা এই পেসার যেন ছুঁটছেন স্রোতের উলটো দিকে।