Social Media

Light
Dark

শচীন টেন্ডুলকার ৬ – স্টিভ ওয়াহ ১

ক্রিকেট ইতিহাসের সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করা একমাত্র ক্রিকেটারের নাম শচীন টেন্ডুলকার- এই তথ্য কে না জানে! ক্রিকেট ইতিহাসের মনোযোগী ছাত্র হলে আপনি এটিও জানেন যে, এক ক্যালেন্ডারের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিকও টেন্ডুলকার। ১৯৯৮ সালে শচীন সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন নয়টি সেঞ্চুরি। তবে সেই বছর অজিদের বিপক্ষে শচীন গড়েন অতিমানবীয় এক কীর্তি। নয়টি সেঞ্চুরি করার পরও কী এমন অতিমানবীয় কীর্তি গড়েছিলেন লিটল মাস্টার? চলুন জেনে নেয়া যাক।

ads

১৯৯৮ সালে এপ্রিলের শুরুতে পেপসি ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ। স্বাগতিক ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর জিম্বাবুয়েকে নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল সেই সিরিজ। প্রথম ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া। টসে জিতে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের ৮২ এবং অজয় জাদেজার অপরাজিত ১০৫ রানের সুবাদে অজিদের সামনে ৩১০ রানের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয় ভারত।

ব্যাটসম্যান শচীন সেদিন বল হাতে বলতে গেলে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন অজিদের ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ৩২ রান খরচায় পাঁচ অজি ব্যাটসম্যানকে সাজঘরের পথ ধরিয়েছিলেন। ভারত ম্যাচ জেতে ৪১ রানে। ওই ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ বল হাতে ঝলক দেখানো শচীন টেন্ডুলকার।

ads

একই সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ২২২ রানেই থামে স্টিভ ওয়াহর দল। সৌরভ গাঙ্গুলি আর শচীনের ১৭৫ রানের জুটির পর ভারত ম্যাচ জেতে ৬ উইকেটের ব্যবধানে। ৮৯ বলে ১০০ রানের খেলা শচীনের হাতে ওঠে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার। সিরিজের সপ্তম ম্যাচে হারের বৃত্ত ভাঙে অস্ট্রেলিয়া। বলা ভাল শচীন এই ম্যাচে আলো ছড়াতে পারেন নি। সেই সুযোগটাই নিয়েছিল অজিরা। ৪ উইকেটে জেতা সেই ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয় স্টিভ ওয়াহ।

ঠিক এর পরেই একই মাসে শারজায় বসে কোকাকোলা কাপ। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে তৃতীয় দল নিউজিল্যান্ড। কোকাকোলা কাপের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয় ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। টসে জিতে শুরুতে সুবিধা করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। শেষ দিকে মাইকেল বেভানের ৫৮ রানের ইনিংসই ছিল দলীয় সর্বোচ্চ। অজিরা নয় উইকেট হারিয়ে বোর্ডে তোলে ২৬৪ রান, যেটি ছিল জয়ের জন্য যথেষ্ট।

ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে শচীন তবে অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে মাত্র ২০৬ রানে অল আউট হয়ে যায় ভারত। ৫৮ রানে ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ভারত হারলেও ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার ওঠে ৭২ বলে ৮০ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলা শচীনের হাতে।

কোকাকোলা কাপের ষষ্ঠ ম্যাচে আবারো ভারত অস্ট্রেলিয়ার সাক্ষাৎ। টসে জিতে মার্ক ওয়াহর ৮১ আর বেভানের অপরাজিত ১০১ রানের সুবাদে ২৮৪ রানের পুজি পায় অস্ট্রেলিয়া। অজি বোলারদের আঁটোসাটো বোলিংয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫০ রানে থামে ভারতের ইনিংস। দলীয় স্কোরের অর্ধেকেরও বেশি রান আসে শচীনের ব্যাট থেকে। ১৩১ বলে ১৪৩ রানের ইনিংস সাক্ষ্য দেয় ম্যাচে একাই ব্যাট হাতে অজিদের বিপক্ষে লড়েছিলেন শচীন। স্বাভাবিক ভাবেই ম্যান অব দ্য ম্যাচও সেই শচীন টেন্ডুলকার।

কোকা কোলা কাপের ফাইনালে আবারো মুখোমুখি ভারত অস্ট্রেলিয়া। ইন্ডিয়া টসে জিতে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় অজিদের। ড্যারেন লিম্যান আর স্টিভ ওয়াহ দুজনেই করেন সমান ৭০ রান। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ওয়াহর দলের সংগ্রহ ২৭২ রান। আগের ম্যাচ ঠিক যেখানে শেষ করেছিলেন, এই ম্যাচে ঠিক সেখান থেকেই শুরু করলেন শচীন। তবে আগের ম্যাচের মত এবার হারেনি শচীনের দল। ১৩৪ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে আবারো ম্যান অব দ্য ম্যাচ শচীন টেন্ডুলকার। ম্যাচের ফলাফল বদলে যাচ্ছে কিন্তু ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরষ্কার হাত বদল হচ্ছে না।

অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মধ্যকার বছরের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ ছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচ। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে টসে জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্নক ক্রিকেট খেলেন শচীন। অজি বোলারদের কচুকাটা করে সেই ম্যাচ মাত্র ১২৮ বলে করেন অপরাজিত ১৪১ রান। ভারত বোর্ডে তোলে ৩০৭ রান। ২৬৩ রানে আল আউট হয় অস্ট্রেলিয়া। ভারত জয়ী হয় ৪৪ রানে। ম্যান অব দ্য ম্যাচের নামটা কি আবারও বলতে হবে? বলেই দেই। তিনি লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার।

১৯৯৮ সালে এক পঞ্জিকাবর্ষে ৯ সেঞ্চুরি করা শচীন অজিদের বিপক্ষে খেলা ৭ ম্যাচের ৬ টিতেই হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। বাকি একটিতে স্টিভ ওয়াহ। ক্রিকেট ইতিহাসে এক বর্ষপঞ্জিকায় নির্দিষ্ট দলের বিপক্ষে এরকম আধিপত্য বিস্তার করে কে কবে খেলেছেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link