বিসিবির জন্য ‘ওয়েক আপ কল’

উদীয়মান ক্রিকেটার সজিবুল ইসলামের মৃত্যুটা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নাড়া দিয়ে গেছে। এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে একটি সতর্কবার্তা দিয়ে গেল বলে সাবেক ক্রিকেটাররা মনে করেন। তারা বলেছেন, এরকম অনেকেই আছে যাদের মধ্যে হতাশা বেড়ে যাচ্ছে লকডাউনের পর ক্রিকেটে ফেরার ব্যাপারে।

রাজশাহীতে নিজের বাসা থেকে সপ্তাহ দুয়েক আগে পুলিশ অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটার সজীবের প্রাণহীন দেহ খুঁজে পায়।

সজীবের বাবা মোরশেদ আলী জানান, আসন্ন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের খেলোয়াড় তালিকায় নিজের নাম না দেখে সজীব হতাশ হয়ে পড়েন, ‘শেষ কয়েক দিন, সজীব হতাশ ছিল। সে আশাবাদী ছিল, এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ডাক পাবে। আশার কারণ উত্তরা স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে পারফরম্যান্স। কিন্তু ডাক না পেয়ে সে খুব হতাশ হয়ে পড়ে।’

সাবেক বাংলাদেশি অধিনায়ক খালেদ মাসুদ, যিনি রাজশাহীর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমির সাথে জড়িত তিনি বলেন, সজীবকে ফিরিয়ে আনা তো সম্ভব না। কিন্তু তিনি গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন সেইসব ক্রিকেটারদের জন্য যারা দীর্ঘদিন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার কারণে প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছেন।

‘আগে বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপ আয়োজন করেছিল ৪৫ জন ক্রিকেটার নিয়ে, এখনকার টি-টোয়েন্টি কাপে ৮০ জন খেলোয়াড় সুযোগ পাচ্ছেন। তাহলে সিস্টেমে থাকা বাকি ক্রিকেটারদের কী হবে?’- খালেদ মাসুদ প্রশ্ন তোলেন।

‘মাত্র ৮০ জন ক্রিকেটারকে ডাকা হয়েছে। ক্রিকেট এমন এক ইন্ডাস্ট্রি যেখানে ৩০০ থেকে ৪০০ খেলোয়াড় যুক্ত। তারা প্রিমিয়ার লীগ, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, জেলা লীগ এবং স্থানীয় সকল খেলায় খেলেন। এভাবেই একজন খেলোয়াড় জাতীয় দলের সিঁড়ি খুঁজে পান।’- তিনি যোগ করেন।

বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপ হচ্ছে বিসিবি আয়োজিত লকডাউন পরবর্তী দ্বিতীয় টুর্নামেন্ট। এর আগে তিন দলের পঞ্চাশ ওভারের টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়েছিল প্রেসিডেন্টস কাপ নামে।

প্রথম শ্রেণির খেলোয়াড়রাও বারবার বোর্ডকে বলছেন দ্রুত ঘরোয়া প্রতিযোগিতা শুরু করার জন্য। কিন্তু বোর্ড আরেকটি টুর্নামেন্ট করছে যেখানে সীমিত সংখ্যক খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করছে।

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের সর্বনিম্ন সম্মানী ছিল ৪ লাখ। এই সুযোগটা যারা মিস করে গেছেন এবং যেসব ক্রিকেটাররা এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক সংকটে আছেন, তারাই মূলত হতাশায় ভুগছেন।

খালেদ মাসুদ, যিনি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের কোচ বলছেন, যেসব খেলোয়াড়েরা নিচের দিকের লীগে কিংবা স্থানীয় লিগে খেলতেন, তারা খেলা ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছেন, ‘সেসব ক্রিকেটারদের কথা ভাবুন, যারা দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগ কিংবা স্থানীয় লীগে খেলেন। স্বল্প আয়ের মাধ্যমে তারা নিজেদের এবং পরিবারের খবচ চালাতেন। কিন্তু মার্চ থেকে সবকিছুই বন্ধ। কোন স্থানীয় লীগ কিংবা টুর্নামেন্ট নেই। কীভাবে এসব খেলোয়াড় বেঁচে থাকবে?’

সজীব ২০১৮ সালে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবে খেলতেন, যার মালিক ছিল বেক্সিমকো গ্রুপ। বেক্সিমকো গ্রুপ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপেও আছে বেক্সিমকো ঢাকা নামে। বিসিবি গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদও যিনি বেক্সিমকো ঢাকার সাথে যুক্ত। তিনি সজীবকে শাইনপুকুরে খেলার সময় থেকেই চেনেন। খালেদ মাহমুদ রাজশাহীর বাংলা ট্র্যাক ক্রিকেট একাডেমির হেড কোচ, যেখানে সজীব প্রশিক্ষণ নেন।

খালেদ মাহমুদ বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না রবিবারে সজীবের চলে যাওয়ার কথা শুনে, ‘আমি তাকে ভাল করেই চিনি। সে একজন ওপেনার এবং অকেশনাল মিডিয়াম পেসার ছিল। সে প্রথম বিভাগে আমার দল শাইনপুকুরেই খেলত। সজীব আমাকে তাঁর হতাশার কথা জানিয়েছিল। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না!’

বাংলাদেশের ক্রিকেটার নাজমুল হোসাইন এখনো ধাঁধায় আছেন, কেন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে দল না পেয়ে সজীবের মত কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। একই কথা বেরিয়ে এল বাংলা ট্র্যাক ক্রিকেট একাডেমির ফিল্ডিং কোচ রকিবুল আলম সেন্টুর মুখ থেকে।

সাবেক বিসিবি প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী পুরো ব্যাপারটা অনুধাবন করতে পারছেন, ‘কেন তারা এমন হতাশায় ভুগছে? কেউ কি কথা দিয়েছিল তাদের দলে নেবে? আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তারা কেন এত কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে!’

_______________

মূল লেখা: Sajib’s tragic death a wake-up call for BCB। লিখেছেন সামিউর রহমান। অনুবাদ করেছেন প্রশান্ত ভৌমিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link