বাবা সালাউদ্দিনকে ছাপিয়ে যাওয়ার মিশন সানদিদের

কোন একটা সেক্টরে বাবার আধিপত্য, পুত্রের কাঁধে একটা বাড়তি দায়িত্ব তুলে দেয়। সবাই তখন প্রত্যাশার প্রবল চাপ চাপিয়ে দেন পুত্রের মস্তিষ্কে। এই যেমন বাংলাদেশের স্বনামধন্য অভিনেতা নায়ক রাজ রাজ্জাকের ছেলে বাপ্পারাজের কথাই ধরুণ।

বাবা তুখোড় অভিনেতা ছিলেন। ছেলেও যে অভিনয় নেহায়েত খারাপ করেছেন তা কিন্তু নয়। তবুও দর্শকদের প্রত্যাশা মেটেনি। তিনি সেলুলয়েডে জীবন্ত হতে পারেননি। ক্রিকেট ময়দানেও এমনটা ঘটেছে। পাশের দেশ ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি রজার বিনি। তিনি ক্রিকেট ময়দানে ভারতের ক্রিকেটীয় উত্থানের সাক্ষী।

দাপটের সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও খেলেছেন তিনি। তবে তার ছেলে স্টুয়ার্ট বিনি তা পারেননি। এতসব খোশগল্পের কারণটা খুঁজে বের করবার চেষ্টা নিশ্চয়ই করছেন। এবার যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাবা-ছেলের একটা গল্প শোনার পালা।

কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন তো সবারই বেশ পরিচিত। সাকিব আল হাসান থেকে শুরু করে জাতীয় দলের বহু খেলোয়াড় যার থেকে দীক্ষা নেন, নিচ্ছেন। কোন সমস্যায় ছুটে চলে যান তার কাছে। নামডাক রয়েছে তার ক্রিকেট দুনিয়ায়। সেই বাবার ছেলে সানদিদও এসেছেন ক্রিকেটের দুনিয়ায়।

না জাতীয় দলের রাডারে চলে আসেননি। তবে জাতীয় দলের খুব কাছেই তাকে দেখা গেছে বিগত কয়েকদিনে। সানদিদ বল করেছেন বাংলাদেশের অনুশীলনে। বা-হাতি রিষ্ট স্পিনার সানদিদ ইতোমধ্যেই বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের যে ফেলছেন ভীষণ বিপাকে।

আঁটসাঁট লাইন আর লেন্থ, সেই সাথে ঘূর্ণি। সব মিলিয়ে তার বল খেলতে বেশ বেগ পোহাতেই দেখা গেছে, জাকির হাসান, সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মত খেলোয়াড়দের। তাইতো তাকে নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বাবা সালাউদ্দিন বলেই কিনা বাড়তি নজর কেড়েছেন ক্ষুদে এই ক্রিকেটার।

সানদিদ ঠিক কতদূর অবধি পৌছাবেন, তা বলা মুশকিল। তবে তার উপর কিন্তু প্রত্যাশার চাপ বেড়েই গেছে। শুরুতেই যে তিনি বাবার ফেলে আসা ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছাপিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। খেলোয়াড়ি জীবনে সালাউদ্দিন খুব একটা আলো ছড়াতে পারেননি। কিন্তু তার পুত্র পথ চলার শুরুতেই ইতিবাচক এক বার্তা দিচ্ছেন।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই বার্তা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। অবশ্য তেমনটা হওয়ার খুব একটা সুযোগ নেই। কেননা ক্রিকেট জীবনের শুরুটাই তো তিনি করেছেন বিশাল বড় এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে। তিনি একজন রিস্ট স্পিনার, আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে চায়নাম্যান হওয়ার বেশ কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রথমত দেশের ক্রিকেটে এখনও রিস্ট স্পিনাররা খুব একটা সুযোগ পাননা নিজেদের মেলে ধরবার। তাছাড়া পরিচর্যায়ও থেকে যায় ঘাটতি। সেই ঘাটতি আর স্বল্প সুযোগের মাঝেই সানদিদকে করে নিতে হবে নিজের জায়গা। সেটা বেশ বড় চ্যালেঞ্জই বলা চলে।

আর অন্যদিকে সালাউদ্দিনের ছেলে বলে, তার দিকে সবারই বাড়তি নজর থাকবে। তাতে প্রত্যাশার চাপ বাড়বে। বাবার মত বড় হওয়ার প্রত্যাশা তো সবাই পূরণ করতে পারে না। শুরুতেই তেমন উদাহরণ নিয়ে হয়েছে আলাপ। আবার সালাউদ্দিন পিতা বলেই সানদিদের পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।

কেননা তার কাছেই তো আশ্রয় মেলে অফফর্মে থাকা ক্রিকেটারদের। সুতরাং তিনি জানেন খেলোয়াড়দের ঠিক কোথায় ট্র্যাকমিস করে থাকে। তিনি নিশ্চয়ই তেমনটা হতে দেবেন না ছেলেকে। তাছাড়া তার থেকে ভাল ঘরোয়া ক্রিকেটের খবর কেই-বা জানে। সুতরাং ছেলেকে যখন এতদূর অবধি নিরুৎসাহিত করেননি অতএব তিনিও বিশ্বাস করেন, তার ছেলে একদিন ছাপিয়ে যাবে তাকে।

জাতীয় দলকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে সানদিদের। সুযোগ হয়েছে জাতীয় দলের ব্যাটারদের বিপক্ষে বল করবার। এখন বাকি রইলো শুধু একদিন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়ানোর। সেই পথটুকু যে তাকেই পাড়ি দিতে হবে। বাবা স্রেফ পথ বলে দেবেন। শুধু বাবা নন। তাকে পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন রঙ্গনা হেরাথও।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link