তিন মূর্তির এক অধ্যায়

সেসময় ভারতের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের অধিনায়ক ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। টানা ব্যর্থতায় ধোনি একাদশ থেকে বাদ দিলেন শেবাগকে। আসলে ওই সফরে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করেছিলেন ধোনি।

২০১১ সাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে ২১৯ রানের ক্যারিয়ার সেরা ওয়ানডে ইনিংস খেলেছিলেন ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগ। একদিনের ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের পর দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে করেন ডাবল সেঞ্চুরি। ওই বছরই ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচেই খেলেন ১৭৫ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস।

অথচ, ক্যারিয়ার সেরা এই দুই ইনিংস হয়ত ইতিহাসের পাতাতেই থাকতো না! যদি না বছর তিনেক আগে শেবাগকে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে না থামাতেন  শচীন। ধোনির উপর জেদের বসে ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়ে ফেলতেন চেয়েছিলেন শেবাগ! কিন্তু শচীনের পরামর্শে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পেলেও ওয়ানডেতে যাচ্ছেতাই পারফরম করছিলেন শেবাগ। ব্যাট হাতে টানা কয়েক ম্যাচেই ছিলেন ব্যর্থ। সেসময় ভারতের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের অধিনায়ক ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। টানা ব্যর্থতায় ধোনি একাদশ থেকে বাদ দিলেন শেবাগকে। আসলে ওই সফরে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করেছিলেন ধোনি।

তবে, সেটা সহজ ভাবে নেননি শেবাগ। এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে, এই ওপেনার মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন – শুধু টেস্ট-ই খেলবেন, ওয়ানডে থেকে অবসরে যাবেন!

অস্ট্রেলিয়া সফরে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে ভারত। সেখানে দশ ম্যাচের পাঁচটিতে সুযোগ পান শেবাগ। এই পাঁচ ম্যাচেই তিনি ব্যাট হাতে ছিলেন চরম ব্যর্থ। পাঁচ ম্যাচে মোটে ৮১ রান করেন এই ওপেনার। এরপরই ধোনি ইচ্ছেতে বাদ পড়েন দল থেকে।

সেই ঘটনা মনে করে শেবাগ বলেছেন, ‘২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় ওয়ানডে থেকে অবসরের চিন্তা মাথায় আসে। টেস্টে ১৫০ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলাম। কিন্তু ওয়ানডেতে রান করতে পারছিলাম না। পর পর তিন-চার ম্যাচে ব্যর্থ হই। ধোনি আমাকে দল থেকে প্রথমে বাদ দেয়। তখন মনে হয়েছিল ওয়ানডেতে আর খেলব না, শুধু টেস্ট খেলব।’

শেবাগ যখন ভেবে ফেলেছিলেন রঙিন পোশাককে বিদায় জানাবেন – তখন শেবাগকে মানসিক সমর্থন দেন শচীন। আর এই সিদ্ধান্ত ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখতেও বলেন তিনি।

শেবাগ সেই সময়কার স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘শচীন আমার সিদ্ধান্ত বদলে দেয়। সে আমাকে এসে বলে, তোমার জীবনের একটা খারাপ সময় যাচ্ছে। অপেক্ষা কর; সফরটা শেষ করে বাড়ি ফিরে যাও আর এ ব্যাপারে ভাল করে ভাবো। এরপর সিদ্ধান্ত নেও তুমি আসলে কি করতে চাও। তাঁর কথাতেই আর ওয়ানডেতে তখন অবসর নেইনি।’

২০০৮ সালে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পর রঙিন জার্সিতে ভারতের হয়ে আরও পাঁচ বছর খেলেছেন এই তারকা। ২০০৮ সালে অবসরের ভাবনার পর থেকে ৬৮ ম্যাচ খেলেছেন শেবাগ। এই ৬৮ ম্যাচে ৪৫.৫৫ গড়ে তিনি করেছেন ২৯৬১ রান; সেঞ্চুরি করেছেন সাতটি। পুরো ওয়ানডে ক্যারিয়ারে যেখানে করেছেন ১৫ সেঞ্চুরি – তার প্রায় অর্ধেকই এসেছে ২০০৮ সালে সেই অস্ট্রেলিয়া সফরের পর!

সেদিন শেবাগের ভুল সিদ্ধান্তে শচীনের হস্তক্ষেপটা এই ভারতীয় তারকার ক্যারিয়ারে কতটা প্রভাব ফেলেছে সেটা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের শিরোপা জয়ের পেছনে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন শেবাগ। অল্পতেই নিজের ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চাওয়া শেবাগ পরবর্তীতে ভারতের তথা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ওপেনার বনে যান।

শেবাগ ক্যারিয়ার শেষ করেছেন বছর সাত-আট আগে। এখনও তাঁকে ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ওপেনার বলে স্মরণ করা হয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...