শাদাব উইদ স্টাইল

এদিন সব আলো নিজের করে নেওয়ার প্রত্যয় নিয়েই যেন মাঠে নেমেছিলেন শাদাব খান। দলের এই কঠিন সময়ে একটু আত্মবিশ্বাস জোগাতেই তিনি খেলে ফেললেন নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় এক ইনিংস।

প্রলয়ংকারী এক ইনিংস। বহুকাল ধরে মনে গেঁথে রবে এমন এক ইনিংসের উপহারই দিলেন পাকিস্তানের অলরাউন্ডার শাদাব খান। নিজের ব্যাটিং সত্ত্বার প্রমাণ রাখলেন। আর মনে করিয়ে দিলেন পাকিস্তানের মিডল থেকে লোয়ার মিডল অর্ডারের যেকোন পজিশনেই ব্যাটটা ঘোরাতে পারেন শাদাব খান। তিনি জানেন দলের প্রয়োজনে কি করে সামনে এগিয়ে আসতে হয়। বিপর্যয়ে পিছু হটার মানসিকতাকে পেছনে ফেলে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের ম্যাচটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত পাকিস্তানের জন্যে রীতিমত বাঁচা-মরার লড়াই। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে এই ম্যাচ জয় ব্যতীত অন্য কোন চিন্তা মাথায় আনতেই পারবে না পাকিস্তান।

এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পাকিস্তানের টপ অর্ডার আবারও ব্যর্থ। শুরুতেই প্যাভিলিয়নে ওপেনর মোহাম্মদ রিজওয়ান। বাবর কিছুক্ষণ রইলেন বাইশ গজে। তাতে অবশ্য ফায়দা হয়নি। ব্যাট থেকে বলার মত তেমন কোন রানই আসেনি। তবে প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে দিয়েছিলেন নবাগত তরুণ মোহাম্মদ হারিস।

তাঁর ১১ বলে করা ২৮ রানের ইনিংসটা পাকিস্তানকে খানিকটা স্বস্তি জোগাচ্ছিল। তবে তা আর দীর্ঘস্থায়ি হয়নি। লেগ বিফোরে কাঁটা পড়েন তিনি। আবারও অল্পতে থেমে যাওয়ার শঙ্কা পাকিস্তানের সামনে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণ এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা। তেমন একটা বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ৪৩ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। সেখান থেকে অতি অসাধারণ কিছু করা ছাড়া পাকিস্তানের জয়ের ভীত গড়া ছিল প্রায় অসম্ভব।

তবে তেমনটা হতে দেননি ইফতেখার আহমেদ। শক্ত হাতে দমন করেন প্রোটিয়া বোলারদের। তুলে নেন অর্ধশতক। তাঁর ৩৫ বলে করা ৫১ রানের ইনিংসটি পাকিস্তানকে খানিকটা নি:শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দেয়।

তবে এদিন সব আলো নিজের করে নেওয়ার প্রত্যয় নিয়েই যেন মাঠে নেমেছিলেন শাদাব খান। দলের এই কঠিন সময়ে একটু আত্মবিশ্বাস জোগাতেই তিনি খেলে ফেললেন নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় এক ইনিংস। তিন চার ও চারটি সুবিশাল ছক্কার বদৌলতে তিনি বনে যান এবারের আসরের দ্বিতীয় দ্রুত অর্ধশতক করা ব্যাটার।

ঠিক একদিন আগেও যা ছিল বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাসের দখলে। মাত্র ২০ বলে শাদাব তুলে নেন নিজের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক। দ্রুত গতির এই অর্ধশতকের বদৌলতে শেষ অবধি পাকিস্তান ১৮৫ রানের বিশাল সংগ্রহ পায়।

একটা সময় যেখানে মনে হচ্ছিল পাকিস্তান ১২০ এর কাছাকাছি কোথাও একটা থেমে যাবে। তবে তেমনটা হতে দেননি শাদাব খান ও ইফতেখার আহমেদ। তাদের দুই অর্ধশতক ও মোহাম্মদ হারিসের ঝড়ো ২৮ রানের ক্যামিও। এই সব কিছুই পাকিস্তানকে লড়াই করবার রসদ জুগিয়েছে।

কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে শাদাব খানের ইনিংসটি অন্তত খানিকটা বেশি আলো কেড়ে নেবে। মূলত একজন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেই শাদাব পাকিস্তান দলে সুযোগ পেয়ে থাকেন। তাঁর ব্যাটিং শৈলীর প্রদর্শনের খুব বেশি সুযোগ মেলে না। তবুও যখন তিনি সুযোগ পেলেন ঠিক তখনই কাজে লাগালেন। দলের বিপর্যয়ের মুহূর্তে জ্বলে উঠলো তাঁর ব্যাট। দলকে স্বস্তি দেওয়ার পাশাপাশি নিজের নামটি তুলে নিলেন রেকর্ড বইয়ে।

এনরিচ নর্কিয়া, কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডিদের মত বোলারদের বিপক্ষে শাদাবে সেই ছক্কাগুলো নিশ্চয়ই পাকিস্তানি সমর্থকদের ভীষণরকম আনন্দে ভাসিয়েছে। এই ইনিংস নিশ্চয়ই শাদাবের প্রাপ্তির খাতায় একটা বিশাল অংশ জুড়ে রয়ে যাবে।

এখানেই কি শেষ, শাদাব বল হাতেও ছিলেন দারুণ উজ্জল – দুই ওভারে ১৬ রান দিয়ে নেন দুই উইকেট। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচ শেষে জোটে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। একারণেই তো তিনি পাকিস্তানের মিস্টার টি-টোয়েন্টি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...