বাংলাদেশ ক্রিকেটে কান পাতলেই শোনা যায় বাংলাদেশ দলের উপর সাকিব আল হাসানের কর্তৃত্বের কথা। দল গঠন নিয়ে বোর্ড কর্তাদের হস্তক্ষেপের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অহরহ বাংলাদেশ টেস্ট ও টি টোয়েন্টি দলের বর্তমান অধিনায়কের দল পরিচালনার উদাহরণ টেনেছেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
এবার অস্ট্রেলিয়ায় চলমান টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দলের উপরে সাকিব আল হাসানের নিয়ন্ত্রণের আরেক ঝলক দেখা গেল। ক্রিকেটাররা তো বটেই টিম ম্যানেজমেন্ট সদস্যও পর্যন্ত অধিনায়কের নির্দেশনা ভঙ্গের ভয়ে তটস্থ।
গেল বারের বিশ্বকাপ থেকে টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাজে সময় চলছে বাংলাদেশ দলের। বিশ্বকাপের পর থেকে পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো বটেই জিম্বাবুয়ের কাছেও সিরিজ হেরে ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণে খাবি খাচ্ছেন সাকিবরা। পরিবর্তনের তাগিদে বিসিবি বাধ্য হয়ে মাহমুদুউল্লাহ রিয়াদের জায়গায় অধিনায়কের আসনে ফিরিয়ে আনেন দেশ সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে।
নিজের প্রথম দুই দায়িত্ব এশিয়া কাপ ও নিউজিল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে ডাহা ফেইল হলেও বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক খুবই তৎপর। নিউজিল্যান্ডের শেষ দুই ম্যাচে যেমন অর্ধশতক করে বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে দারুন কিছু করার আভাস দিয়েছেন ঠিক তেমনি দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দেরও উজ্জীবিত করছেন তিনি।
এমনকি সম্পূর্ণ দল অস্ট্রেলিয়া পৌঁছার পর বিশ্বকাপে যাতে তাদের মনোযোগে বিভ্রাট না ঘটে এজন্য সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলায় জারি আছে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। খেলোয়াড় তো বটেই সাকিবের এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে নেই টিমের সাথে থাকা বাকি সদস্যরাও। এমনকি বোর্ড কর্মকর্তা ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও আছেন এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায়। ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও ‘বিস্মিত’ এই নিষেধাজ্ঞার কথা শুনে।
হোবার্টের প্রথম ম্যাচের বাংলাদেশ দলের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। সাংবাদিকরা, সমর্থকেরা বরাবরই উৎসুক থাকেন প্রতিপক্ষ নিয়ে দলের মনোভাব জানতে। দলের পক্ষ থেকেও সাংবাদিকদের সাথে এতদিন এসব নিয়ে ম্যাচের আগে কথা বলা হতো। তবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের ভিন্ন উত্তর। দলের বাইরের কারো সাথে বলা যাবেনা কোনো কথা।
সাবেক বাংলাদেশি ক্রিকেটারের কাছে তার মনোভাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো কোনো সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছি না। দিন কয়েক আগে এক সাংবাদিককে বলেছিলাম দলের টেকনিক্যাল বিষয়ে প্রশ্ন না করতে। তবে সাকিব সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে দেখে রাগ করেছে। সে বললো, আপনি কথা বলতে কেন গেলেন? আমি তো বলেই দিলাম কথা বলা হবে না। এরপর থেকে নিজেকে নিয়ে বিব্রত বোধ করছি।’
তবে ক্রিকেটারদের চুপ থাকার কারণ নিজেও না জানার দাবি করেছেন এই বোর্ড কর্তা, বলেন, ‘ওরাই কথা বলতে চায় না। কেন চায় না বা কী চায় না, সেটি ওরাই ভালো বলতে পারবে। ’
বলাই যায় বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগে বাংলাদেশ দলে যেন কারফিউ চলছে। কথা বলুক আর নাই বলুক বাংলাদেশের সমর্থকদের মতো সাংবাদিকদেরও একটাই ইচ্ছা যেভাবেই হোক ফিরে আসুক দুর্দান্ত ফর্মের বাংলাদেশ।অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে বিশ্বকাপের আগের বাজে সব স্মৃতি ধুয়ে মুছে নিয়ে যাক। টাইগারদের মাঠের গর্জনে কেঁপে উঠুন সুদূর অস্ট্রেলিয়ার হোবার্ট, মেলবোর্ন, সিডনির মতো শহর। আগামীকাল হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করবে সাকিব আল হাসানের দল। ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় সকাল দশটায়।