জনপ্রিয়তায় মাশরাফির ধারের কাছেও নেই সাকিব

জনপ্রিয়তার নিরিখে সম্ভবত দুইজন থাকবেন দুই দিকে। পাল্লাটা অবশ্য মাশরাফি বিন মর্তুজারই বরং ভারী বেশি। তবুও সাকিব আল হাসানের জনপ্রিয়তা যে একেবারেই নেই সে কথা বলবারও যে উপায় নেই। দুইজনই তো দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন বিশ্ব ক্রিকেটের দরবারে।

তারা দুইজনই এখন নেমেছেন ভিন্ন এক ময়দানে। এবার তারা জনপ্রতিনিধি হওয়ার এক নতুন লড়াইয়ে নেমেছেন। মাশরাফির জন্য অবশ্য এটা নতুন নয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনেই তো তিনি পেয়েছেন সাংসদ হওয়ার স্বাদ। তবে সাকিবের যে এবারই প্রথম। যদিও আগের নির্বাচনেও গুঞ্জন ছিল সাকিবকে ঘিরে। শেষ অবধি সেই গুঞ্জন ধোপে টেকেনি।

এবার তাই সাকিব নেমেছেন আটঘাট বেঁধেই। প্রচারণার মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। সতীর্থদেরও পাশে পাচ্ছেন। তবুও যেন জনপ্রিয়তার ফারাকটা একেবারে খালি চোখেই অবলোকন করা যায়। দুই নির্বাচনী এলাকায় দেখা মেলে ভিন্ন চিত্রের। এই যেমন গাড়ি বহরের দৃশ্যই সেই চিত্রের পক্ষে বিপক্ষের তথ্য হতে পারে।

মাশরাফি বিন মর্তুজা নড়াইল-২ আসনের এ মাথা থেকে ও মাথা ছুটে বেড়িয়েছেন। তার প্রধান বাহন ছিল মোটরবাইক। তিনি যখনই নির্বাচনী প্রচারণায় বেড়িয়েছেন তখনই তাকে ঘিরে ধরেছে আরও শ’খানেক বাইক। সবাই তার প্রচারণায় অংশ নিয়েছে স্বত:স্ফূর্তভাবে। একেবারেই উল্টো না হলেও খানিক ব্যতিক্রম সাকিবের গাড়িবহর।

সাকিবের গণসংযোগের মূল বাহন ছিল মোটে তিনটি গাড়ি। সেই গাড়িতেই চড়ে বিভিন্ন সভায় অংশ নিয়েছেন সাকিব। জনপ্রিয়তার ঘাটতির মূল কারণ হতে পারে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা। তাছাড়া বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে সাকিব-তামিম দ্বন্দও খানিকটা প্রভাবিত করেছে হয়ত সামগ্রিক দৃশ্যপটে। সাকিব হয়ত এখনও হয়ে উঠতে পারেননি জনগণের নেতা।

অন্যদিকে, মাশরাফি বিন মর্তুজা যেন নিজের জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী। তাইতো নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে তিনি চলে গেছেন সাকিবের কাছে। সাকিবের নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় দলের সতীর্থদের সাথে নিয়ে র‍্যালি করেছেন। ভোট চেয়েছেন সাকিবের পক্ষে। তাতেই বরং প্রমাণিত হয়, মাশরাফি ঠিক কতটুকু নির্ভার নিজের জনপ্রিয়তা নিয়ে।

এসব কিছু ছাড়াও, সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ার জুড়ে অর্জনের কমতি নেই। তবে নানা সময়ে তিনি নানামুখী বিতর্কের সাথে জড়িয়ে গেছেন। ঠিক সে কারণেও হয়ত সাকিবের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। অন্যদিকে, মাশরাফি বিন মর্তুজার ক্রিকেট ক্যারিয়ার কেটেছে সংগ্রামে। তিনি লড়াই করবার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। পাশাপাশি নিজে থেকেছেন বিতর্কমুক্ত। সে কারণে জনপ্রিয়তায় মাশরাফি রয়েছেন এগিয়ে।

তাছাড়া মাশরাফি বরাবরই সময় দিয়েছেন নিজ এলাকায়। আগের আগের মেয়াদে উন্নয়নও করেছেন। এমনকি বরাবরই মাশরাফি নড়াইলের জনমানুষের সাথে কাটিয়েছেন নিজের অবসর সময়। সাকিব থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। তার অধিকাংশ সময়ই কেটেছে শহুরে জীবনে। অবসর সময়ে তিনি পরিবারকে সময় দিতে ছুটে গেছেন সুদূর বিলেতে। তাছাড়া নানামুখী ব্যস্ততায় সাকিব ঠিক মাগুরার হয়ে উঠতে পারেননি।

এসব কিছুই আসলে ফারাকটা গড়ে দিচ্ছে। এসব কিছুই আসলে দুইজনের জনপ্রিয়তার পার্থক্যটা বুঝিয়ে দিচ্ছে। সাকিবের হাতে হয়ত সুযোগ রয়েছে এই চিত্র বদলে ফেলার। তিনিও হয়ত মাশরাফির মত হয়ে উঠতে চাইবেন। হতে চাইবেন মাগুরার মাটি ও মানুষের একান্ত সাকিব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link