মারদাঙ্গা মার্করামের বিফল মহাকাব্য

উইকেট যেন ব্যাটারদের মৃত্যুকূপ। সেই উইকেটে দাঁড়িয়ে দৃঢ়তার গান শুনিয়ে গেলেন প্রোটিয়া ব্যাটার এইডেন মার্করাম। তিনি সম্ভবত খেলে গেলেন নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস।

পেসারদের স্বর্গ রাজ্য। সুইং, গতি, বাউন্সের পুন্যভূমি হয়েই আবির্ভূত হয়েছে কেপ টাউনের বাইশ গজ। সেখানে দাঁড়িয়ে স্রেফ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন দুই দেশের পেসাররা। গুণে গুণে ২৩ খানা উইকেট গিয়েছে টেস্টের প্রথম দিন। এমন এক উইকেট যেন ব্যাটারদের মৃত্যুকূপ।

সেই উইকেটে দাঁড়িয়ে দৃঢ়তার গান শুনিয়ে গেলেন প্রোটিয়া ব্যাটার এইডেন মার্করাম। তিনি সম্ভবত খেলে গেলেন নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস। তিন অংকের সেই ম্যাজিকাল ফিগারে এর আগেও পৌঁছেছেন মার্কারাম বহুবার। তবে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই এটাই প্রথম।

মোহাম্মদ সিরাজের প্রথম দিনের তাণ্ডবের সামনে দাঁড়াতে পারেননি কেউই। মাত্র ৫৫ রানেই অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর যে বহুদূর অবধি যেতে পেরেছে ভারত তাও নয়। ১৫৩ রানে নিজেদের শেষের ছয়টি উইকেট হারিয়ে ভারত থমকে গেছে অবাক বিস্ময়ে। লুঙ্গি এনগিডি, কাগিসো রাবাদারাও স্বস্তি দেয়নি ভারতীয় ব্যাটারদের।

৯৮ রানে পিছিয়ে থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটাও হয়নি যুতসই। প্রথম দিনের শেষ বেলায় তিন উইকেট হারিয়েছে প্রোটিয়ারা। বেঁচে গিয়েছিলেন স্রেফ এইডেন মার্করাম। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় দিনে বাইশ গজে হাজির হয়েছেন মার্করাম। ৩৬ রানে অপরাজিত থেকেছেন প্রথম দিন শেষে। সেই ইনিংসটা বড় করেছেন দ্বিতীয় দিনে।

সবাই আসা-যাওয়ার মিছিলে গা ভাসিয়েছেন। টিকে থাকা ছিল দুষ্কর। তাইতো মার্করাম বেছে নেন পাল্টা আক্রমণের রাস্তা। ভারতীয় বোলারদের দুর্ধর্ষ বোলিংয়ে দমে যাননি মার্করাম। দারুণ সব শটের পসরা বসিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ম্যাচে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন তিনি। তার দৃঢ়তায় একটা সময় লিড নিতে শুরু করে প্রোটিয়ারা।

ছোট-ছোট জুটি গড়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দলীয় সংগ্রহ। সবচেয়ে বড় জুটিটা গড়েন তিনি কাগিসো রাবাদাকে আরেক প্রান্তে রেখেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাইম পেসার রাবাদা যতটা সম্ভব সঙ্গ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। ৫১ রানের জুটিতে মার্করাম করেছেন ৪৯ রান। সেই জুটিতে ভর করেই লিড খানিকটা চক্ষুগোচর হয়েছে প্রোটিয়াদের।

বুমরাহের বলে পয়েন্ট দিয়ে চার হাঁকান মার্করাম। তাতেই ৯৯ বলে ব্যক্তিগত শতরান পেরিয়ে যান তিনি। নিজের কষ্টার্জিত এই সেঞ্চুরি আবার তিন উৎসর্গ করেছেন বিদায়ী অধিনায়ক ডিন এলগারকে। অবশ্য শতকের পর নিজের ইনিংসটি আর বেশিদূর টেনে নিয়ে যেতে পারেননি মার্করাম।

সিরাজের বলে আগ্রাসী ভঙ্গিমায় শট খেলতে চেয়েছিলেন মার্করাম। দলের রান আরও খানিকটা বাড়িয়ে নিতে চাইছিলেন দ্রুতই। সে প্রচেষ্টায় তাকে থামতে হয়েছে লং অফে। রোহিত শর্মার হাতে জমা পড়েন তিনি।  বেশ ভুগিয়েছেন মার্করাম ভারত দলকে। সেটাই ফুটে উঠেছে রোহিতের অঙ্গভঙ্গিতে।

১৬২ রানে মার্করাম আউট হওয়ার পর বেশিদূর যায়নি দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসও। ১৭৬ রানে লুঙ্গি এনগিডি আউট হলে, ভারতের জন্য জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৭৯ রানের। আরও কিছু রান যোগ করে আসতে না পারার আক্ষেপ অবশ্য নিশ্চয়ই ছিল মার্করামের। তবে সেসব ছাপিয়ে এই ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারের অন্যতম হাইলাটস হয়ে রবে নিঃসন্দেহে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...