সাকিব ফিরলেন ‘সাকিব’ হয়েই

উইকেটে এসে ব্যাট হাতে রান করবেন, বল ঘুরিয়ে উইকেট নিবেন- বছরের পর বছর ধরে এটাই যেন সাকিবের ট্রেডমার্ক পারফরম্যান্স। বাংলাদেশের হয়ে এখন অবধি সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে বাইরের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অনেকদিন ধরেই সাকিবের ‘সাকিব’ হয়ে ওঠা হচ্ছিল না। বাইরের লিগ গুলোতে ক্রমাগত বাজে পারফরম্যান্সের কারণে গেল বারের আইপিএল-এ ছিলেন অবিক্রীত।

তবে নিজেকে প্রমাণ করে স্ব-রূপে ফেরার দৃঢ় প্রত্যয় সাকিবের মাঝে সব সময়ই ছিল। সেই তাগিদেই সিপিএল খেলতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। কিন্তু সেখানে গিয়েও ভগ্নদশা সাকিবের। বোলিং-এ মোটামুটি ভাল করলেও ব্যাট হাতে প্রথম দুই ম্যাচেই ফিরলেন শূণ্য রানে।

তবে নামটা তো সাকিব। নিজেকে মেলে ধরার দিনে সকল আলো কেড়ে নেন তিনি। কট্টর সমালোচকদের কাছেও হয়ে ওঠেন বিরক্তিকর থেকে চিত্তাকর্ষক। সাকিব ঠিক সেভাবেই আজ ফিরলেন। দুই ম্যাচ পর হেসেছে তাঁর ব্যাট! একই সাথে বোলিংয়েও ছাড়লেন স্পিন বিষ, ২০ রানে নিলেন ৩ উইকেট। আর তাতেই ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সকে ৩৭ রানে হারায় গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্স।

সিপিএলে আগের দুই ম্যাচে বল হাতে জ্বলে উঠলেও ব্যাট হাতে বেশ বিবর্ণই ছিলেন সাকিব। টানা দুই গোল্ডেন ডাকে সিপিএলের এ আসরে ব্যক্তিগত রানের খাতায় খুলতে পারছিলেন না তিনি। দলীয় ৫৬ রানে আজ শাই হোপ সাজঘরে ফিরতেই চার নম্বরে ব্যাট হাতে উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান।

কিন্তু, আগের দুই ম্যাচে বাজে ব্যাটিংয়ের কারণে এ দিনও নিজের খোলস ছেড়ে বের হতে পারছিলেন না সাকিব। শুরুর দিকে তাঁর ব্যাটিংয়ে স্ট্রাগলের চিত্রটা বেশ ভাল ভাবেই ধরা পড়ছিল। প্রথম ১১ বলে করেন ১০ রান। তবে এর পরেই ছন্দ পেতে শুরু করেন সাকিব। সামিত প্যাটেলের এক ওভারেই হাঁকান ৩ বাউন্ডারি।

পরের ওভারে সুনিল নারাইনকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে মারেন ছক্কা। তবে সেই সুনীল নারাইনের কাছেই শেষ পর্যন্ত ধরাশায়ী হন সাকিব। ২৫ বলে ৪ চার ও ১ ছয়ে ৩৫ রানে ইনিংস শেষ হয় তাঁর। আর ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজের ফিফটি, শেষদিকে অধিনায়ক শিমরন হেটমায়ার ও ওডেন স্মিথের ক্যামিওতে ১৭৩ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় গায়ানা।

ব্যাট হাতে ৩৫ রানের ইনিংস খেলার পর সাকিব এ দিন বল হাতে ছিলেন আরও উজ্জ্বল। ব্যক্তিগত প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পান তিনি। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে টিম সেইফার্টকে ফেলেন লেগ বিফোরের ফাঁদে। এরপর ইনিংসের ১৭তম ওভারে আবারও উইকেট পান।

এবার সাকিব তুলে নেন আন্দ্রে রাসেলের উইকেট। সাকিবের বলে পুল খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রাসেল। ১৯তম ওভারে আবারও বোলিং প্রান্তে আসেন সাকিব। সে ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হজম করেন সুনিল নারাইনের কাছে। তবে সে ওভারেই তৃতীয় বলে নারাইনকে বোল্ড করে ত্রিনবাগোকে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে দেন সাকিব।

আর এর মধ্য দিয়ে ভাল ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও দারুণ এক দিন পার করেন তিনি। ৪ ওভার বল করে ২০ রানে নেন ৩ উইকেট। এ ছাড়া নিকোলাস পুরানকে দারুণ এক রান আউটের মাধ্যমে মাত্র ১ রানেই সাজঘরে ফেরান সাকিব।

ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- সব দিক দিয়েই এমন রাজসিক অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা গিয়েছে সাকিবের হাতেই। আর সাকিবের ‘সাকিব’ হয়ে ওঠার দিনে গায়ানা অ্যামাজনও পেল বড় স্বস্তি। প্লে-অফের দৌড়ে এগিয়ে থাকলো বেশ ভালোভাবেই। সাকিব দলে আসার পর টানা তিন জয়ে পয়েন্ট টেবিলে এখন তাদের অবস্থান দুইয়ে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবারে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বের ব্যাটনটা সাকিবের হাতে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এমন প্রত্যাশায় আছে পুরো দেশ। সাকিবের ‘সাকিব’ হয়ে ফেরার এই দিনে তাই সমর্থকদের সেই প্রত্যাশার পালে বাড়তি হাওয়া দিতেই পারে। কারণ অদ্যাবধি বাংলাদেশ ক্রিকেট নামক নৌকার প্রধান মাঝি তো তিনিই।

 

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link