অতি সাধারণ, অনন্য কেউ নই

মুমিনুল হক, কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন যে মুমিনুল। এইতো এবছরের শুরুতেও তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জিতে এলো। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পেসারদের বিপ্লব আনা মুমিনুল। চোখের পলকে সব যেন মিথ্যে হয়ে গেল। এত আলোর ভিড়ে মিরপুরে মুমিনুলকে দেখলে যেন মনে হয় অতি সাধারণ , অনন্য কেউ নন।

ক্রিকেট দুনিয়ায় এখন সব আলোচনাই একটা বিন্দুতে গিয়ে ঠেকে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আগামী মাসেই অস্ট্রেলিয়ায় পর্দা উঠতে চলেছে এই আসরের। বাংলাদেশের ক্রিকেটও ব্যস্ত এই বিশ্বকাপ নিয়েই। প্রস্তুতি হিসেবে দুবাইয়ে ক্যাম্প করছে বাংলাদেশ দল। সবার নজর সেদিকেই। নেটে কে কত বড় ছয় মারতে পারলো, কার ইয়োর্কারটা জায়গায় পড়লো এসবেই এখন মূল আকর্ষণ। অথচ মিরপুরের মুমিনুল যেন এই সবকিছুকে তুচ্ছ ঘোষণা করা এক সৈনিক। নি:শব্দে, একাকী চালিয়ে যাচ্ছেন ফিরে আসার লড়াই।

মুমিনুল হক, কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন যে মুমিনুল। এইতো এ বছরের শুরুতেও তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জিতে এলো। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পেসারদের বিপ্লব আনা মুমিনুল। চোখের পলকে সব যেন মিথ্যে হয়ে গেল। এত আলোর ভিড়ে মিরপুরে মুমিনুলকে দেখলে যেন মনে হয় অতি সাধারণ , অনন্য কেউ নন।

সকাল হলে মিরপুরের একাডেমী মাঠে ব্যাটিং করেন কয়েক ঘণ্টা। চেনা শট সব খেলেন। নেট বোলারদের পিটিয়ে নিজের হারানো আত্মবিশ্বাসটা ফিরে পেতে চান। মুমিনুলের জন্য এমন সময় অবশ্য নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের হয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটটাই খেলেন তিনি। ফলে একটা টেস্ট থেকে আরেক টেস্টের মাঝের সময়টায় মুমিনুলের যেন কিছুই করার নেই। অ্যাকাডেমি মাঠের নেট, কয়েকজন নেট বোলার, আর ব্যাটটাই যেন তাঁর সঙ্গী।

ক্যারিয়ারের লম্বা সময় এভাবেই কেটেছে মুমিনুল হকের। একটা টেস্ট ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করেছেন। তবে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এবারের অপেক্ষা যেন বড্ড বেশি লম্বা। এবারের মুমিনুল যেন বড্ড বেশি একাকী। কেননা এবার তিনি নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না তিনি কবে ফিরছেন কিংবা আদৌ কী ফিরছেন?

অনেকদিন ধরেই ব্যাট হাতে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। অধিনায়ক হিসেবে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছিলেন না। চিরচেনা সেই বড় ইনিংস গুলো আসছিল না। কেমন একটা হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। বাইশ গজের চাপটা আর বইতে পারছিলেন না যেন। মুমিনুল কেমন নুইয়ে পড়লেন। অগত্যা অধিনায়কত্ব ছাড়তে হলো। ব্যাটিংটায় মনোযোগ দিতে চাইছিলেন বুঝি।

তবে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খুব বেশি সুযোগ পাওয়া গেল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জুনে শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। এরপর আর একাদশ থেকেই বাদ পড়লেন। দেশের ক্রিকেটের এত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, একজন টেস্ট অধিনায়ক হঠাৎ কেউ না হয়ে গেলেন। তবে ফিরে আসার একটা প্রতিজ্ঞা ছিল নিশ্চয়ই।

সেজন্যই নিজের মত করে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন। হোম অব ক্রিকেটে সকাল বেলা গেলেই অধিকাংশ দিনই তাঁকে দেখা যাবে। নেটে বাহারি শট খেলছেন। কয়েকবছর আগের ছোট্ট মিমির কথা মনে পড়ে যায় যেন। সেই মুমিনুল কী আর ফিরবেন নাকি নেটেই থেকে যাবেন।

বাংলাদেশ আবার পরবর্তী টেস্ট খেলবে নভেম্বরে, ভারতের বিপক্ষে। অন্তত সে পর্যন্ত মুমিনুলকে অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। তারপরও তিনি মাঠে ফিরতে পারবেন কিনা তাঁর নিশ্চয়তা নেই। কোথাও প্রমাণ না করেই আবার দলে জায়গা হবার কথা না তাঁর। প্রমাণ করার সুযোগ অবশ্য মুমিনুলের সামনে আছে। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ভারতের খেলতে যাওয়ার কথা তাঁর। আর মুমিনুলের নিজের জায়গাটা ফিরে পাওয়াটা ভীষণ জরুরী। এর জন্য জাতীয় ক্রিকেট লিগটাকে পাবেন তিনি প্রস্তুতির জন্য। কিন্তু, টেস্টের প্রস্তুতি কি আর জাতীয় লিগ দিয়ে হয়।

তবে, ‘এ’ দল ও জাতীয় লিগে প্রমাণ করতে পারলে হয়তো আবার লাল বলের ক্রিকেটে নিজের জায়গাটা ফিরে পেতে পারেন। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট স্পেশালিস্টের শেষটা, একজন টেস্ট অধিনায়কের শেষটা এত মলিন হতে পারে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে মুমিনুল অনেক কিছুই দিয়েছেন, তবে দেয়ার ছিল আরও অনেক কিছুই। এই প্র্যাকটিস কিটের চেয়ে মুমিনুলকে সাদা পোশাকেই যে বেশি মানায়।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...