মোহাম্মদ শামি, ভারতের অধিকর্তা

মিড অনে দাঁড়িয়ে একটা রেগুলেশন ক্যাচ মিস করলেন মোহাম্মদ শামি। মুহূর্তেই ওয়াংখেড়ে জুড়ে নেমে এলো রাজ্যের হতাশা। নিজের উপর ক্ষুব্ধ শামি খানিক মাথা নাড়িয়ে নিজের এমন ভুলকে কোন ভাবেই মেনে নিতে চাইলেন না। ক্যাচটা যে ছিল কেন উলিয়ামসনের।

ম্যাচটা তখন প্রায় বেড়িয়ে যাচ্ছিল ভারতের হাত থেকে। কেন উলিয়ামসন ও ড্যারেল মিশেলের যুগলবন্দীতে ম্যাচ প্রায় নিজেদের আয়ত্ত্বে নিয়ে আসতে শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ড। ঠিক সেই মুহূর্তে ক্যাচ মিস। ম্যাচটাই সেখানে হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

তবে মোহাম্মদ শামি নিজেই তেমনটি হতে দিলেন না। তিনি চাইলেন না পরাজয়ের তিক্ত স্বাদের তিক্ততা দ্বিগুণ হোক। আক্ষেপের তীব্র আগুনে পুড়ে জীবনখানা হোক ছাড়খার। তাইতো তিনি এসেই আঘাত করলেন নিউজিল্যান্ডের গড়ে ফেলা দূর্গে। ১৯৯২ বিশ্বকাপের ওয়াসিম আকরামের মতই দুই বলে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন তিনি। কিউই অধিনায়ককেই নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করলেন শামি।

স্লোয়ার বল ফ্লিক করে ডিপ স্কোয়ার লেগে আটক উইলিয়ামসন। প্রাণ ফিরে পেলেন যেন শামি। সেই সাথে গোটা ভারত। ওয়াংখেড়ে জুড়ে আনন্দ উল্লাসের উপলক্ষ হয়ে উঠলেন শামি। খানিক আগেই যিনি ভাসিয়েছিলেন প্রচণ্ড হতাশায়।

তবে শুধু সেখানেই ক্ষান্ত হননি। ম্যাচের লাগামটা নিজেদের হাতে নিয়ে এলেন শামি সেই ওভারেই। ৩৩ তম ওভারের চতুর্থ বলে তিনি ফেরান টম লাথামকে। ব্যাস পেন্ডুলাম এবার ঝুলে গেল পুরো ভারতের দিকে। খলনায়ক থেকে মুহূর্তেই নায়কে পরিণত হলেন শামি।

তবে দিনটা অবশ্য শামির নামেই লেখা। ভারতের এই জয়ের অন্যতম নায়ক শামি হবেন বলেই তো সেই ক্যাচ মিস হওয়া। শুরুটাও তো তিনিই করেছিলেন দূর্দান্তভাবে। এক ওভারের ব্যবধানে ব্ল্যাকক্যাপসদের দুই ওপেনারকে ফিরিয়েছেন শামি।

প্রথমে ডেভন কনওয়েকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন। ফর্মের তুঙ্গে থাকা রাচিন রবীন্দ্রও রাহুলের হাতে বন্দী হলেন। দূর্দান্ত শুরু এনে দিলেন ভারতকে। তবে এরপরই ১৮১ রানের জুটি গড়েন উইলিয়ামসন ও মিশেল। তাতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার উপক্রম।

তবে সে যাত্রায় আবারও ত্রাণকর্তা হয়ে শামির আগমন। বিরাটের মত এদিন ইতিহাসের পাতায় শামিও জায়গা করে নিলেন। বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক বনে গেলেন। শেষের দিকে আরও তিনখানা উইকেট হয়েছে তার সঙ্গী।

১৩৪ করা ড্যারেল মিশেলও তার উইকেটেই পরিণত হয়েছেন এদিন। তাতে বিশ্বকাপের ইতিহাসে একমাত্র বোলার হিসেবে একই বিশ্বকাপে তিনবার ফাইফারের স্বাদ পেয়ে যান ডানহাতি এই ফাস্ট বোলার। তবে স্বল্পতেই সন্তুষ্ট হতে তিনি চাননি।

আশিষ নেহরাকে পেছনে ফেললেন শামি। টিম সাউদি ও লোকি ফার্গুসন তার উইকেটে পরিণত হন। তাতেই মাত্র ৫৭ রান খরচায় ৭ উইকেট মোহাম্মদ শামির নামের পাশে। অভাবনীয় এক যাত্রা এ যেন। হতাশ শামিই পরিণত হন উচ্ছ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে।

মাঝপথে অবশ্য বিশ্বকাপে ৫০ উইকেটের মালিকও হয়েছেন ভারতীয় এই পেসার। এভাবেই সম্ভবত ফিরে আসতে হয়। প্রবল প্রতাপের সাথে। বিশ্বকাপের শুরুতে যিনি বসে ছিলেন সাইড বেঞ্চে, তিনিই পরিণত হয়েছেন এক্স ফ্যাক্টরে। এভাবেই লিখতে হয় ফিরে আসার গল্প। এভাবেই ছাপ ফেলে যেতে হয়। এভাবেই সম্ভবত বোঝাতে হয় নিজের গুরুত্ব। এভাবেই খলনায়কের চরিত্র ঝেড়ে ফেলে হতে হয় মহানায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link