চিরায়ত উদযাপন নয়। কিছুটা নির্লিপ্ত ভঙ্গিমাতেই হেলমেট খুলে দু’হাত প্রসারিত করলেন। লাহোরে শান্তর শতক ছোঁয়ার দৃশ্যপটটা ছিল ঠিক এমনই। তবে সেই নির্লিপ্তততায় যে লুকিয়ে ছিল সদ্যজাত এক সন্তানকে দেওয়া বাবার উপহার। একটি শতক। যে শতকের কল্যাণে খাদের কিনারায় থাকা বাংলাদেশ এগিয়েছে দৌর্দণ্ড্য প্রতাপে।
না। পাল্লেকেলের মতো ভগ্নদশায় এবার আর শান্তকে একা লড়তে হয়নি। তাঁর সাথে লড়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। তবে আগের যে আশির ঘরে আটকে আফসোসে পুড়েছিলেন, তার আর পুনরাবৃত্তি এবার ঘটেনি। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আফগান ফিল্ডারদের অশান্ত করে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। ১০৫ বলে ৯ চার আর ২ ছক্কায় সাজিয়েছেন ১০৪ রানের ইনিংস।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুরুটা ভালই করেছিল নাইম-মিরাজ জুটি। শুরু আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে স্রোত ধরে ১০ ওভারেই ৬০ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। তবে দুই বলের ব্যবধানে হঠাতই রঙ বদল। ১০ তম ওভারে শেষ বলে মুজিব উর রহমানের দুর্দান্ত এক ডেলিভারি বোল্ড হয়ে ফেরেন নাঈম শেখ। এরপরে ১১তম ওভারে গুলবদিন নাঈবের তৃতীয় বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে ফিরে যান তাওহীদ হৃদয়।
৩ রানের ব্যবধানে দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশ তখন সাময়িক বিপদে। তবে আগের ম্যাচের মতোই আলোর দিশারী হয়ে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শান্ত-মিরাজের দারুণ রসায়নে জমে ওঠে বাংলাদেশের ইনিংস।
গুলবদিনকে মিড অনের ওপর দিয়ে চার মেরে শান্তর ছান্দসিক ইনিংসের শুরু। এরপরের বলেই দারুণ একটি কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি তুলে নেন শান্ত।
ব্যাস। এরপর থেকে ইনিংস জুড়ে চোখের প্রশান্তি জুগিয়েছেন শান্ত। শুরুতে অবশ্য ইনিংস বিল্ডআপের চেষ্টার রয়েশয়ে খেলেছেন৷ তবে খোলস ছেড়েছেন মোক্ষম সময়েই।
সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকা শান্ত অর্ধশতক তুলে নেন রাজকীয় ভাবেই। ফজল হক ফারুকীর কাছ থেকে লেগ সাইডে বল পেয়েছিলেন। বাই। আর সেই বলটিই সন্তোর্পণে চালিয়েছিলেন। দারুণ টাইমিংয়ে যে শটটি স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে হয় ছক্কা। আর সেই বাউন্ডারিতেই ৫৭তম বলে ফিফটিতে পৌঁছে যান শান্ত।
ফিফটির পর শান্ত অনুমিতভাবেই ছুটেছিলেন শতকের পথেও। শান্তর সেই ছুটে চলা তাঁকে পৌছে দেয় তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগারেও। মুজিবের বলে সিঙ্গেল নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাত্র ১০১ বলে। আর এরপরেই সেই নির্লিপ্ত উদযাপন।
কদিন আগেই বাবা হয়েছেন। সেঞ্চুরির উদযাপনেও মিশে থাকল সেটি। ইনিংস বিরতিতে তো বলেই দিলেন, সেঞ্চুরিটা তাঁর সন্তানের জন্যই উৎসর্গকৃত।
সেঞ্চুরি পূরণের কিছুক্ষণ বাদেই অবশ্য থেমেছেন শান্ত। রিভার্স সুইপ করেই দৌড় শুরু করেছিলেন। তবে ফিল্ডারের হাতে বল থাকায় ফাঁদে পড়েন রান আউট চক্রে। ১০৫ বলে ১০৪ রানের ইনিংস থামে সেখানেই।
তবে ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার দিনে শান্ত নিজের নাম তুলে নিয়ে এসেছে বেশ কটি রেকর্ডে। মিরাজের সাথে জুটিতে যুক্ত করেছিলেন ১৯৪ রান। এশিয়া কাপে যেটি বাংলাদেশের যে কোনো উইকেটেই এখন সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। এর আগে যে রেকর্ডটি ছিল ইমরুল কায়েস ও জুনাইদ সিদ্দিকের দখলে। ডাম্বুলায় ২০১০ এশিয়াকে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬০ রানের জুটি গড়েছিলেন তাঁরা।
মিরাজ, শান্তর সেঞ্চুরিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩৩৪ রানের রানপাহাড়ে বসেছে বাংলাদেশ। এখানেও হয়েছে রেকর্ড। এশিয়া কাপে এটিই যে এখন বাংলাদেশের দলগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
মিরাজ, শান্তর সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের ৩৩৪ রানের বড় সংগ্রহ। সব মিলিয়ে লাহোরের মাটিতে বাংলাদেশ যেন ছুটছে দারুণ আগ্রাসনেই। বাকি কাজটা এখন বোলারদের। বোলাররা ছন্দ দেখাতে পারলে নিশ্চিত ভাবেই স্বপ্নিল একটা দিন পার করবেন শান্ত। শান্তর এই বাইশ গজের অশান্ত যাত্রা চলতে থাকুক।