মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনটা পুরোপুরি হতে পারত বাংলাদেশের। তবে অপ্রয়োজনীয় বেশকিছু শট শেষ অবধি ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। প্রথম দিনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি সম্ভবত নাজমুল হোসেন শান্তর দুর্দান্ত সেই ইনিংসটি। কন্ডিশন মোটেও পক্ষে ছিল না কারোই। তপ্ত রোদে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষ বোলারদের প্রায় প্রতিটা পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পেরেছেন শান্ত।
শান্ত নিজেও স্বীকার করেছেন পরিস্থিতি মোটেও সহজ ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মোটেও সহজ মনে হয়নি। কিন্তু আমি যা পরিকল্পনা করেছিলাম তা বাস্তবায়ন করবার চেষ্টা করেছি। পরিষ্কার ধারণা ছিল আমি কি করতে চাই। প্রথম থেকে আমি কষ্ট করেই ব্যাট করেছি।’
সূর্য যখন মধ্য গগনে তখন তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছিল প্রায় ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। নি:সন্দেহে বৈরি একটা পরিবেশ যেকোন খেলার ক্ষেত্রেই। প্রায় প্রতিটা মুহূর্তেই খেলোয়াড়দের হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে। তাছাড়া ব্যাটাররা খানিকটা বেশি সময় ব্যয় করছিলেন বলেই কিনা খেলাও শেষমেশ হয়নি পূর্ণ ৯০ ওভার।
কন্ডিশন নিয়ে শান্ত আরও বলেন, ‘অনেক গরম ছিল। এরকম গরমে আমরা খুব বেশি খেলছি তাও নয়। এটা আসলে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। কোন খেলোয়াড় আমরা এটা নিয়ে চিন্তাও করিনি। আমরা যেভাবে অনুশীলন করেছি, আমাদের অনুশীলনে প্যাটার্নটাও ছিল এরকম যে এত গরমে আমরা কিভাবে খেলব, বা আমরা কিভাবে সমন্বয় করব।’
১৪৩ রানের মাথায় বোল্ড হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে নো-বলের কারণে সে যাত্রায় বেঁচে যান। সবার মত তিনিও হয়ত প্রত্যাশা করছিলেন ইনিংসটি আরও খানিকটা টেনে নেওয়ার। তবে ১৪৬ রানের মাথায় ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন তিনি। তাতে অবশ্য আক্ষেপ নেই শান্তর। তিনি বলেন, ‘আলহামদুল্লিলাহ আমি খুশি, যতটুকু হয়েছে। টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি অবশ্যই বিশেষ কিছু। তারপর আমাদের মাঠে খেলা হল। হ্যাঁ, অবশ্যই এটা বিশেষ কিছু।’
এমনকি নিজের এই উইকেট পতনের পেছনে কন্ডিশনকে নয় বরং বোলারকেই কৃতিত্ব দিতে চেয়েছেন তিনি। আফগান বোলার আমির হামজা বেশ পরিকল্পনা সাজিয়েই শান্তকে ফাঁদে ফেলেছেন। ডিপ মিড-উইকেট ও লং অনের মধ্যখানে একজন ফিল্ডারকে চাপিয়ে নিয়ে এসেছিলেন হামজা। ঠিক সেখানটায় ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন শান্ত।
নিজের আউট নিয়ে শান্ত বলেন, ‘আমার ভুল ছিল। তবে ও (আমির হামজা)-তো পরিকল্পনা করেই বল করেছে। মিড অনটা পেছনে ছিল। সেই ফিল্ডারটাকে ওপরে নিয়েছে। ওই ফিল্ডারটাকে (মিড উইকেটে থাকা) একটু চাপিয়েছে। ওরাও পরিকল্পনা করে বল করেছে।’
তবে শেষ সেশনে তিনটি উইকেট হারানো বাংলাদেশের রানের চাকা সব সময়ই ছিল সচল। এমনকি জাকির হাসানের আউট হওয়ার পর চাপে ছিল বাংলাদেশ। সেই চাপ সামলে দারুণভাবে ব্যাট করে গেছেন নাজমুল হাসান শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়। রানের গতি ছিল প্রায় সাড়ে চারের উপরে। এমনকি বাংলাদেশ দিন শেষও করেছে ৪.৫৮ রান রেটে ব্যাট করে।
শেষ সেশনে হুটহাট উইকেট পড়ে যাওয়াও দমাতে পারেনি বাংলাদেশের দ্রুত রান তোলার গতিকে। এই নিয়ে শান্ত বলেন, ‘আমাদের চিন্তাধারা বেশ পরিষ্কার। আমরা যে রকম পরিস্থিতি থাকবে তেমনই খেলার চেষ্টা করব। আমি আর জয় যখন ব্যাটিং করছিলাম বাজে বল গুলায় চেষ্টা করছিলাম রান বের করে নেওয়ার। সে অনুযায়ী ব্যাটিং করে গিয়েছি। এরকম না যে আগ্রাসী মনোভাব, প্রতি বলেই মারতে হবে। মারার বল পেয়েছি মেরেছি।’
দিনটা হয়ত পুরোপুরি হয়নি বাংলাদেশের। তবে এদিন দারুণ দিনের বার্তা দিয়ে রেখেছে টাইগাররা। যদিও আফগানদের বোলিং আক্রমণ নিয়ে খানিকটা দ্বিধা থেকেই যায়।