শিভিল কৌশিক, হারিয়ে যাওয়া পল অ্যাডামস

জীবন এক ঝটকায় কৌশিককে অনেকটা উপরে নিয়ে গিয়েছিল, এরপর সেখান থেকে ফেলে দিয়ে চুরমার করে দিয়েছে তাঁকে। কর্ণাটকের ছোটখাটো লিগে এখন খেলেন তিনি, তবে তাঁর বর্তমান রূপ দেখে বোঝার উপায় নেই একসময় তিনি ছিলেন টক অব দ্য টাউন - এটাই বোধহয় নিয়তির খেল।

ফ্রগ ইন দ্য ব্লেন্ডার – কথাটা শুনলেই পল অ্যাডামসের অ্যাকশন মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। ভারতেরও একজন নিজস্ব পল অ্যাডামস ছিল, নাম তাঁর শিভিল কৌশিক। মাথার পাশ দিয়ে ঘুরিয়ে বল করা, ডেলিভারির সময় মুখ থাকতো আকাশের দিকে তাক করা – আজব চিড়িয়া যেন!

এই স্পিনারের আইপিএল ক্যারিয়ারও শুরু হয়েছিল রহস্য দিয়ে; ২০১৬ সালে দল পাওয়ার আগে কেউ কোনদিন তাঁর নাম শুনেছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে, এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও আগে কখনো দেখা যায়নি তাঁকে। বলতে গেলে, গুজরাট লায়ন্স সেসময় ঘরের কোণা থেকে একটা প্রতিভা বের করে লাইমলাইটে নিয়ে এসেছিল।

সেই প্রতিভার তীব্রতা বুঝতে সময় লাগেনি, পুনে সুপারজায়ান্টসের বিপক্ষে অভিষেক হয় এই বাঁ-হাতির, আহামরি কিছু করতে না পারলেও পরের ম্যাচেই মুরালি বিজয়, শন মার্শ আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে আউট করে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। যদিও বিরাট কোহলির কাছে এক ওভারে ৩০ রান হজম করা তাঁর জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে আছে।

সবমিলিয়ে প্রথম মৌসুমে সাত ম্যাচ খেলে ছয় উইকেট শিকার করেছেন শিভিল, ইকোনমি ছিল আটের একটু বেশি। সম্ভাবনা জাগানিয়া পারফরম্যান্সই বটে; ক্রিকেটাঙ্গনে তাই জোরেশোরে আলোচনা চলছিল তাঁকে নিয়ে। কিন্তু ভাগ্যবিধাতা বোধহয় মুখ লুকিয়ে মুচকি হেসেছেন, ২০১৭ সালে অর্থাৎ পরের মৌসুমে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর ম্যাচ খেলার পর আর সুযোগ পাননি তিনি, তিন ম্যাচ উইকেট শূন্য থাকার মাশুল দিতে হয়েছে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়ে।

তারপর আর ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি এই উদীয়মানের, বরং সময়ের স্রোতে আরো দূরে সরেছেন। এখন তো তাঁকে ঠিকঠাক চেনে এমন মানুষ খুঁজতেই বেগ পেতে হয়, অথচ সেসব দিনে পাড়ার চায়ের দোকানেও কথা হতো তাঁর অ্যাকশন নিয়ে। গলির ক্রিকেটে তাঁকে নকল করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতো ছেলেরা।

জীবন এক ঝটকায় কৌশিককে অনেকটা উপরে নিয়ে গিয়েছিল, এরপর সেখান থেকে ফেলে দিয়ে চুরমার করে দিয়েছে তাঁকে। কর্ণাটকের ছোটখাটো লিগে এখন খেলেন তিনি, তবে তাঁর বর্তমান রূপ দেখে বোঝার উপায় নেই একসময় তিনি ছিলেন টক অব দ্য টাউন – এটাই বোধহয় নিয়তির খেল।

Share via
Copy link