দ্বৈত অধিনায়ক প্রথার নতুন চক্রে ভারত

ভারতীয় ক্রিকেট এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে রোহিত-বিরাট অধ্যায়ের অবসানের পথে, অন্যদিকে গিল-শ্রেয়াসের উত্থান হচ্ছে অধিনায়ক হিসেবে। সেই সময়ে দ্বৈত অধিনায়কের দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত ভারতের ক্রিকেট মানচিত্রে ভিন্ন এক ভবিষ্যতের নকশাই আঁকছে।

ভারতের ক্রিকেটে বড়সড় পরিবর্তনের গুঞ্জন। বিসিসিআই এবার সামনে আনছে নতুন পরিকল্পনা—দুই অধিনায়ক মডেল। তিন ফরম্যাটে এক নেতার বদলে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে দুই তরুণের কাঁধে। তাঁর একজন অবশ্যই শুভমান গিল। আরেকজন হতে যাচ্ছেন শ্রেয়াস আইয়ার।

রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলির মতো মহাতারকাদের যুগ ধীরে ধীরে শেষের পথে চলে এসেছে। তাঁদের ছায়াতেই বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম এখন এসে দাঁড়িয়েছে সামনের কাতারে। বিসিসিআইয়ের চিন্তাও সেদিকেই—পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনদের হাতে ভবিষ্যৎ তুলে দেওয়া। আর সেই ভবিষ্যতের নকশাতেই এবার দেখা দিয়েছে ‘দুই অধিনায়ক মডেল’।

সেই ধারাবাহিকতায় টেস্ট দলের অধিনায়ক বনে গেছেন শুভমান গিল। দক্ষ হাতে তিনি ইংল্যান্ডের ময়দানে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন তিনি সহ-অধিনায়ক হয়ে। তাঁকে দলে রাখতে গিয়ে আইপিএলের ‘স্টার’ অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার বঞ্চিত হয়েছেন।

তবে, ওয়ানডের দায়িত্ব শ্রেয়াস আইয়ারের হাতে তুলে দিয়ে ‘ড্যামেজ কনট্রোল’ করতে যাচ্ছে ভারতের নির্বাচক প্যানেল। রোহিত শর্মা যদি ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলে বোর্ড ঝুঁকবে শ্রেয়াসের দিকেই। বোর্ড মনে করছে, গিল ও শ্রেয়াসের মধ্যে এই বণ্টনটা ভারতের ক্রিকেটকে দীর্ঘমেয়াদে আরও ভারসাম্য এনে দেবে।

অন্যদিকে, টি-টোয়েন্টি দলের ছবিটা একটু আলাদা। সুরিয়াকুমার যাদব এখন দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু বয়স ও ফিটনেস বোর্ডকে ভাবাচ্ছে। আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্রুতগতি, ফিল্ডিং দক্ষতা আর অবিরাম ব্যস্ত সূচি সামলাতে তরুণদেরই দরকার। আসছে বছরের বিশ্বকাপের পর সুরিয়াও হারিয়ে যাবেন ভারতের ভাবনা থেকে, যেমন এখন হারিয়ে গেছেন বিরাট-রোহিত। সেখানেই বোর্ডের চোখ গিলের দিকে।

গিল শুধু টেস্টের অধিনায়কই নন, ধীরে ধীরে হয়ে উঠছেন ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তরুণ মুখ। তাঁকে দিয়ে টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব শুরু করলে দল ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে। তরুণ নেতৃত্ব মানে তরুণ দল—এটা বোর্ডের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনারই অংশ।

এর আগে অবশ্য বোর্ডকে রোহিত শর্মার ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবতে হবে। কারণ, এখন পর্যন্ত ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তিনি। তাঁর বিদায় হলেই কেবল নতুন অধিনায়ক নিয়োগের প্রসঙ্গ উঠবে। তাই শ্রেয়াসের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এশিয়া কাপের পর বোর্ডের বৈঠকেই হয়তো সব পরিষ্কার হবে। তবে, ভাবনা আর পরিকল্পনার জায়গাটা এই মুহূর্তে পানির মত পরিস্কার।

সব মিলিয়ে, ভারতীয় ক্রিকেট এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে রোহিত-বিরাট অধ্যায়ের অবসানের পথে, অন্যদিকে গিল-শ্রেয়াসের উত্থান হচ্ছে অধিনায়ক হিসেবে। সেই সময়ে দ্বৈত অধিনায়কের দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত ভারতের ক্রিকেট মানচিত্রে ভিন্ন এক ভবিষ্যতের নকশাই আঁকছে।

Share via
Copy link