এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানি কোনো সমর্থকের স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি নেই। এমন বিধিনিষেধ থাকা স্বত্ত্বেও শুক্রবার পাকিস্তান-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে দেখা গিয়েছে এক পাকিস্তানি সমর্থককে। যিনি শুধু স্টেডিয়ামেই প্রবেশ করেননি।
পাকিস্তানের পতাকা সজ্জিত পোশাক পরে স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়েছেন। বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ানদের সমর্থন জোগাতে ‘পাকিস্তান-পাকিস্তান’ চিৎকারে গলাও ফাটিয়েছেন। পাকিস্তানের এই সমর্থক খেলার মাঠে বেশ পরিচিতই বটে। তিনি মোহাম্মদ বশির। ‘বশির চাচা’ হিসেবেই পরিচিতি যার বেশি।
মূলত বশির চাচা এবারের বিশ্বকাপ দেখতে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের মাধ্যমে। বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে সমর্থন করার জন্য তিনি ভারতের মাটিতে ছুটে এসেছেন ৮২০০ মাইল দূর থেকে। যদিও ভারতে এসেই সম্মুখীন হয়েছেন অনাকাঙ্খিত এক ঘটনার। ভারতের মাটিতে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল হায়দ্রাবাদ বিমানবন্দরে। যদিও পুলিশের কর্মকর্তাদের নিজের আসল কাগজপত্র দেখিয়ে কিছুক্ষণ বাদেই মুক্তি পান বশির চাচা।
৬৭ বছর বয়সী বশির চাচা শরীরে হৃদরোগ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন বেশ কিছুদিন হলো। তবে পাকিস্তানের মানেই যেন এ ক্রিকেট পাগল সব ভুলে ফিরে যান নব উদ্যমে। এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই কথাই শুনিয়েছেন পাকিস্তানের এ ক্রিকেট সমর্থক। তিনি বলেন, ‘হায়দ্রাবাদের এ স্টেডিয়ামে আমিই একমাত্র পাকিস্তানি। তবে আমার কন্ঠ আর ক্রিকেটে প্রতি ভালোবাসা ১০০/১৫০ মানুষের সমান।’
স্টেডিয়ামে পাকিস্তানি সমর্থকদের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধের ব্যাপারে বশির চাচা এরপর একরকম দুঃখ প্রকাশ করেই বলেন, ‘এটা আসলে খুবই খারাপ লাগা ব্যাপার। স্টেডিয়ামে কোনো পাকিস্তানের দর্শক নেই। আমি নিশ্চিত, পাকিস্তানি সমর্থকদের স্টেডিয়াম প্রবেশে বাঁধা না থাকলে এই টুর্নামেন্ট ভিন্ন এক মাত্রা পেতো।’
আগামী ১৪ অক্টোবর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে গড়াবে বহুল প্রতীক্ষিত ভারত-পাকিস্তান মহারণ। এ ম্যাচটি নিয়ে যেন অনেকের অপেক্ষার শেষ নেই। বশির চাচাও এ ম্যাচটি নিয়ে আছে প্রবল উত্তেজনায়। তবে এই ম্যাচের মাধ্যমে তাঁর পুরনো ভারতীয় বন্ধু সুধীরের সাথে দেখা হবে। এটা ভেবেই পুলকিত বোধ করছেন তিনি। পাকিস্তানের বশির চাচার মতো ভারতের ক্রিকেট অঙ্গনে সমর্থক হিসেবে সুধীরও পরিচিত মুখ।
এ নিয়ে বশির চাচা জানান, ‘সুধীরের সাথে আমার দারুণ বোঝাপড়া। আমরা একসাথেই সেখানে থাকব। একসাথেই খেলা দেখব। আমরা দুজনই যুদ্ধের বিপক্ষে।’ এএফপিকে দেওয়া এ সাক্ষাৎকারে বশির চাচা মহেন্দ্র সিং ধোনির কথাও টেনে আনেন। ২০১১ বিশ্বকাপে মোহালির সেই সেমির টিকিট যে তিনি ধোনির কাছ থেকেই পেয়েছিলেন তা কৃতজ্ঞাভরে এখনো স্মরণ করেন তিনি।
তবে বশির চাচা তারুণ্য ফেলে এসেছেন বেশ ক’বছর আগেই। ম্যানচেস্টারে একবার তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপসহ ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত তিনি। তবে এত সীমাবদ্ধতার পরও ক্রিকেটের জন্যই ছুটতে পছন্দ করেন তিনি। তিনি জানান,’ আমি এখন ঠিক আছি। আমার ব্যাগে সব সময় ওষুধ থাকে। তবে যত যাই হোক, আমি তো ক্রিকেট নিয়েই বেঁচে থাকি। যতদিন আমি বেঁচে আছি, ততদিন আমি প্রতিটা ম্যাচ দেখার জন্য এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়াব।’
পাকিস্তানকে সমর্থন জানাতে ভারতে আসা বশির চাচা এখন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে বাস করেন। মজার ব্যাপার হলো, তাঁর সহধর্মিনীর আবার বেড়ে ওঠা ভারতের হায়দ্রাবাদে। তাই আগামী ১৪ অক্টোবরের ম্যাচে মন থেকে পাকিস্তানকে সমর্থন দিলেও ভারতের প্রতি যে সামান্যতমও বিদ্বেষ নেই সেটিও জানিয়েছেন বশির চাচা।