তবুও পছন্দের শীর্ষে বার্সেলোনা

হঠাৎ করেই একটা ছন্দপতন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটা ফুটবল ক্লাব হুট করেই কেমন যেন অপরিচিত হতে শুরু করে। কেমন একটা অগোছালো পরিস্থিতি! একের পর এক দু:সংবাদ ঘিরে ধরেছে ক্লাবটিকে। খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সেরও যাচ্ছে-তাই অবস্থা। এরই মাঝে দলকে একাই টেনে নেওয়া লিওনেল মেসি ছেড়ে দিলেন ক্লাব।

আর্থিক সংকটের মারপ্যাঁচে অশ্রুসিক্ত নয়নে ক্লাবের অন্যতম কিংবদন্তিকে বিদায় জানায় স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা। এরপর যেন একেবারে দিনের আলোর মত করে স্পষ্ট হতে শুরু করে মাঠের খেলার সব দূর্বলতা। দলের একেবারে নাজেহাল অবস্থা। এমনকি গেল মৌসুমে শঙ্কা ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে উঠতে না পারার। লিগে অবস্থানটা এক পর্যায়ে তেমনই ছিল।

সেই সাথে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে খেলতে হয়েছিল ইউরোপা লিগ। এমন এক দুর্দিনের মাঝেও এ সময়ের উদীয়মান তরুণ ফুটবলার ফ্যারেন তোরেস গায়ে জড়ান কাতালান জার্সি। ম্যানচেস্টার সিটির মত বিত্তবান এক ক্লাবের মায়া ত্যাগ করে নিজের স্বপ্নকে প্রাধান্য দিয়ে তোরেস বনে যান ব্রাউগানাদের একজন। সেখানেই থেমে থাকেনি বিশ্বের নানান  প্রান্তের তারকারদের বার্সেলোনা প্রেম।

এবারের দলবদলের শুরু থেকেই তারকা ফুটবলারদের আগ্রহের জায়গায় পরিণত হয় বার্সেলোনা। ক্লাবের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয়। এটা প্রায় প্রত্যেকটা খেলোয়াড় জানেন। তবুও তাঁদের পছন্দের তালিকার শুরুতেই থাকে বার্সা। এই যে কিছুদিন আগেই তো ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রাফিনহার জন্যে চাহিদার পুরো অর্থ খরচেই প্রস্তুত ছিল চেলসি। রাফিনহার সদ্য সাবেক ক্লাব লিডস ইউনাইটেডও ছিল রাজি।

তবে না রাফিনার প্রথম এবং একমাত্র পছন্দ বার্সেলোনা। তিনি নিজ প্রচেষ্টায় রোনালদিনহো, রিভালদো, নেইমারদের পথে হেটে পা রাখেন বার্সেলোনা শহরে। একটা ক্লাবের প্রতি ঠিক কতটা আবেগ কাজ করলে বিপুল অর্থের প্রলোভন এড়ানো যায়! কি আছে এই ক্লাবটাতে! আছে অনেক কিছুই। একটা ঐতিহ্য, গৌরবোজ্জ্বল অতীতে ঠাসা। আর রইলো বাকি অর্জন। সে ঝুলিটায় শিরোপা তো উপচে পড়া।

তাছাড়াও পৃথিবীর মাতানো বহু তারকা তো নিজেদের ক্যারিয়ারটা আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছেন এই কাতালান ক্লাবটির জার্সি পড়েই। আর্জেন্টিনার আরেক বিস্ময় তারকা ডিয়েগো ম্যারাডোনাও তো খেলেছেন এই ক্লাবের হয়ে। এত সব তারকারদের সিদ্ধান্ত আর তাঁদের অর্জন তো আর এক দুই মৌসুমের বাজে পারফরমেন্সে ফিঁকে হয়ে যায় না। তাইতো, চেলসির দুর্দান্ত ডিফেন্ডার ক্রিস্টেনসেন আর এসি মিলানের ফ্রাঙ্ক কিসেও এসেছেন খয়েরি-নীল পতাকাতলে।

এই যে বার্সার দুর্দিনেও তারকা সব খেলোয়াড়দের মিছিলে নতুন করে যুক্ত হয়েছে রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি। জার্মান বুন্দেসলীগায় প্রায় প্রতিটা মৌসুমে লেওয়ান্ডস্কি ছিলেন সেরা গোলদাতাদের একজন। তাকেও দলে ভেড়ানোর মত ক্লাবের সংখ্যা একদমই কম ছিল না। সে তালিকায় নাম ছিল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ও চেলসির। অর্থকড়ির অভাব নেই।

তবুও এই দুই ধনকুব ক্লাবকে প্রত্যাখ্যান করে লেওয়ান্ডস্কি অপেক্ষায় ছিলেন বার্সেলোনার। অবশেষে ঘোষণা এসেই গেল। বার্সেলোনার নতুন খেলোয়াড় হিসেবে নিজের নামটি লিখিয়ে ফেললেন নিজের নাম। বার্সেলোনার আক্রমণভাগটা এখন বিশ্বের যেকোন আক্রমণ ভাগের সাথে টক্কর দিতে একেবারে সিদ্ধহস্ত। আর ডাগআউটে বসে থাকা জাভি হার্নান্দেজ তো রয়েছে প্রতিপক্ষের সব রক্ষণ কৌশলের ছকে পানি ঢেলে দিতে।

তবে এমন নিদারুণ বাজে একটা মৌসুম কাটানোর পর তারকা খেলোয়াড়দের আগ্রহের কারণ সত্যির প্রশ্ন জাগায়। তবে একটু ইতিহাস ঘেটে দেখলেই আন্দাজ করে নেওয়া যায়, কেন এত আগ্রহ। সবাই তো আর অর্থের পেছনে ছোটে না। আবার বার্সেলোনায় যে বিনা পারিশ্রমিকে খেলবে তেমনটাও নয়। তবুও গৌরব বলে তো একটা কিছু আছে। আবেগ বলতেও একটা অনুভূতি তো আমাদের মাঝে রয়েছে। এসবকে উপেক্ষা করা যায়!

আর স্বপ্ন! একটা ক্লাবের জার্সি গায়ে জড়ানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে, নিজেকে প্রমাণের যে আপ্রাণ চেষ্টাটা চলে সেটা কি করে অগ্রাহ্য করা যায়! যায় না এই যে গর্ব, আবেগ, স্বপ্ন এসব কিছুর কাছে অর্থ খানিকটা অমূলক। তাইতো এখনও তারকাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে বার্সেলোনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link