রক্তের ঘ্রাণ পেলে হিংস্র বাঘ যেমন আরো হিংস্র হয়ে উঠে, নখের থাবায় ছিঁড়ে দিতে চায় শিকারের পুরো দেহ, মিশেল স্টার্কও তেমনি একজন। শিরোপার ঘ্রাণ পেলেই তাঁর শিরা-উপশিরায় রক্তের নাচন সৃষ্টি হয়, হাত নিশপিশ করে গোলা ছোঁড়ার জন্য। অযৌক্তিক কথা ভাবার প্রয়োজন নেই, নক আউট পর্বে তিনি যেভাবে পারফরম করেছেন সেটিই মূলত এমন তুলনার জন্ম দিয়েছে।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ কিংবা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) সর্বত্র স্টার্ক দুইটি ভিন্ন রূপ দেখিয়েছেন। গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোতে ছন্নছাড়া বোলিং করেছেন, ব্যাটাররা রান করেছে অনায়াসে; অথচ তিনিই আবার প্লে-অফ পর্বে আনপ্লেয়েবল হয়ে উঠেন, উড়িয়ে দেন ব্যাটিং লাইনআপের দম্ভ।
এইতো ২০২৩ বিশ্বকাপের কথা, শুরুর আট ম্যাচ খেলে কেবল ১০ উইকেট পেয়েছিলেন এই বাঁ-হাতি। কিন্তু সেমিফাইনাল ও ফাইনালে ঠিকই কাজের কাজটা করেছেন, দুই ম্যাচে ছয় উইকেট তুলে নিয়ে সামনে থেকে অবদান রেখেছিলেন দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে।
চলতি আইপিএলেও ঘটেছে একই দৃশ্য, রেকর্ড মূল্যে কলকাতা নাইট রাইডার্সের শিবিরে যোগ দেয়ার পর ছন্দ হারিয়ে বসেছিলেন স্টার্ক। গ্রুপ পর্বের বারোটি ম্যাচ খেলে কেবল বারো উইকেট নিতে পেরেছিলেন। অথচ তিনিই আবার কোয়ালিফায়ার আর ফাইনালে হয়ে উঠেছেন জয়ের নায়ক, দুই ম্যাচে শিকার করেছেন পাঁচ উইকেট।
পরপর দুই ম্যাচেই এই তারকার কাছে ধরাশায়ী হয়েছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিধ্বংসী টপ অর্ডার। কোয়ালিফায়ার ম্যাচে তো হয়েছিলেন ম্যাচসেরা, ফাইনালেও হায়দ্রাবাদকে দাঁড়াতেই দেননি তিনি।
নিজের প্রথম ওভারেই প্যাভিলিয়নে পাঠিয়েছিলেন ইনফর্ম অভিষেক শর্মাকে। কি দর্শনীয় এক ডেলিভারি, এই এক ডেলিভারিতেই যেন ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপি উশুল। রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে দারুণ ব্যাটিং করা রাহুল ট্রিপাঠীকেও স্থায়ী হতে দেননি – তাঁর তিন ওভারের স্পেলে দুই ব্যাটারকে হারিয়েই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল প্যাট কামিন্সরা।
বিশ্বকাপের আগে অজি কিংবদন্তি ফর্মে ফিরবেন সেটা অবধারিত বটে। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, বরাবরের মতই দুর্দান্ত রূপে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি। কলকাতাকে শিরোপার খুব কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, এখন অপেক্ষা আরেকটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে তাঁর ঝলক দেখার।