১০৩-৬ অবস্থা থেকে ২৩৪-৭। এই ১৩১ রান করতে কেটে গিয়েছে আজ তিনটি ঘন্টা। এই তিন ঘন্টা বাঙালি দেখেছে একজন বাঙালির ব্যাট হাতে পরাক্রম যিনি মূলত গ্লাভস হাতেই পরিচিত বিশ্বের এক নম্বর হয়ে। সেই সঙ্গে আজ কিছু লোকের মুখ অন্তত সাময়িক মুখ বন্ধ করা হয়েছে যারা বলতেন ব্যাটসম্যান হিসেবে অতটা পাতে দেওয়া যায়না শিলিগুড়ির বাঙালিকে।
এখন কেন তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবে এতটা খারাপ রেপুটেশন পেয়েছেন সেই কারণ খোঁজার চেষ্টা করছিলাম অনেকদিন ধরে। তথ্য বলছে অভিষেকের পরে তিন বছর চুটিয়ে ডোমেস্টিক প্রথম শ্রেণীর খেলা খেলেছেন ঋদ্ধিমান এবং সেখানে তার রেকর্ড খুব চমকপ্রদ নয়। অন্তত ৩৪ গড়ে ১২৯২ রান তো তাই বলছে। এরপরেই অর্থাৎ ২০১০ মরসুম থেকেই ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমানের জয়যাত্রা শুরু।
২০১১ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে দুই ইনিংসে করেন দুটি হাফ সেঞ্চুরি এবং পরবর্তী চারটি রঞ্জি মৌসুমে তার সর্বনিম্ন গড় ৪৩.২২। এই সময় অর্থাৎ ২০১০-২০১৫ মৌসুমে তিনি টেস্ট খেলেছেন মোট তিনটি। দুই বছর অন্তর খেলা এই টেস্ট ম্যাচ গুলিতে তার রান ১১১ এবং মাত্র ১৮.৫০ গড়ে। হিসেব বদলায় যখন তিনি নিয়মিত সুযোগ পান।
২০১৬-১৭ মৌসুমে মোট ২৫ টেস্ট ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফ সেঞ্চুরিসহ করেছেন ৭৮৯ রান এবং তাও ৪১.৫২ গড়ে। এরপরে যখন আবার তিনি কেপটাউন টেস্টে চোট পাওয়ার পরে ফিরে এলেন তারপরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দ্রুত রান তুলে ২১, তৃতীয় টেস্টে ২৪ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ইন্দোর টেস্টে ব্যর্থ ১২ এবং পিঙ্ক বল টেস্টে অপরাজিত ১৭- অর্থাৎ মাত্র ২৪.৬৭ গড়ে ৭৪ সঙ্গে ব্যর্থ মাত্র দুই ইনিংসে। এবার ফেরা অ্যাডিলেড পিঙ্ক বল টেস্ট যেখানে তার রান ৯ ও ৪(৩৬ অলআউটের মধ্যে)।
একবার ঋদ্ধিমান সম্পর্কিত বইতে পড়ছিলাম যেহেতু ধোনি থাকাকালীন তিনি ছিলেন সেকেন্ড কিপার সুতরাং ব্যাটিং প্রাক্টিস প্রায় পেতেননা বলা চলে। যদিও বা তা পেতেন সম্মুখে থাকা ক্লাব স্তরের নেট বোলারের বিরুদ্ধে যা দিয়ে অন্তত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারের অনুশীলন হয়না এটা সর্বজনবিদিত। একদিন রোমি মিত্র আক্ষেপের সুরে বলছিলেন যে যদি ঋদ্ধিকে দলের সঙ্গে ঘোরানো না হতো তবে হয়তো আরো বেশী ম্যাচের মধ্যে থাকতে পারতেন।
সব কিছুর সঙ্গে জুড়েছে তার চোটপ্রবণতা। হ্যামস্ট্রিং, আঙুল ভাঙা দীর্ঘকাল ভুগিয়েছে তার কেরিয়ারকে। আজ কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসে তিনি আবার ব্যাট হাতে হলেন উজ্জ্বল। তাও চোট নিয়ে, স্টান্স বদলে সামলালেন কাইল জেমিসন-টিম সাউদি-আজাজ প্যাটেলদের। উড়িয়ে দিলেন উইল সমারভিলকে। যখন ৬১ রানে ফিরছেন অপরাজিত থেকে তখন পিঠ চাপড়ে দিলেন অধিনায়ক-কোচ-সতীর্থ সবাই। এবং তা অবশ্যই যথাযোগ্য।
এরপরে প্রশ্ন এরপরেও কি আর টানা হবে ৩৭ বছরের কিপারকে? উত্তর হবে ‘না’। আজ যখন পেছনে ঋষাভ পান্তের মতো ক্রিকেটার আছেন এবং কিপিংয়ে স্পেশালিস্ট দরকার এতটা নয় বর্তমানে তখন তো আরোই আসবেন না প্রথম এগারোয়। আসন্ন টেস্টই হয়তো হতে চলেছে শেষ টেস্ট যেখানে ভারতীয় দলের গ্লাভস হাতে পড়বেন ঋদ্ধিমান সাহা। তার আগে এই ৬১ এর মূল্য অনেক। অন্তত জবাব দিলেন সব সমালোচনার।
সমালোচকরাও তো এবার বুঝুন ৪৯ রঞ্জি গড়, নিয়মিত সুযোগ পেয়ে ৪১ টেস্ট গড়, ৪৬ ইন্ডিয়া ‘এ’ গড় রাখা ব্যাটসম্যান, চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা ভারতীয় ব্যাটসম্যান অন্তত ব্যাট ধরতে জানেন। শুধু জানেন কেন? বেশ ভালো ব্যাটসম্যান বটেই।