এই সময়ের ক্রিকেট আম্পায়ারদের মধ্যে তিনি অন্যতম সেরা। আজকের প্রজন্মের কাছে এই পরিচয়েই বোধহয় তিনি অধিক পরিচিত। তবে ক্রিকেটার কুমার ধর্মসেনাও বা কম ছিলেন কোথায়।
একজন মুরালি কিংবা শেন ওয়ার্নদের আড়ালে কত তারকা জ্বলে উঠতে পারেনা তারও এক উদাহরণ ধর্মসেনা। মুত্তিয়া মুরালিধরনের সময়ের শ্রীলঙ্কার অনুল্লেখ্য তারকা ছিলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার একমাত্র বিশ্বকাপ জয়েরও সাক্ষী হয়েছেন বর্তমানের আইসিসি এলিট প্যানেলের এই আম্পায়ার।
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট তখন পরিকল্পনা করছে তাঁদের তরুণ এক স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনকে নিয়ে। সদ্য জাতীয় দলে আসা এই বোলারকে নিয়ে তখন লম্বা সময়ের পরিকল্পনায় ব্যস্ত দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট (এসএলসি)। ঠিক সেই সময়েই দলে আসেন আরেকজন স্পিনার কুমার ধর্মসেনা।
মাত্র ২২ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় তাঁর। তিনি মুরালির মত উইকেট টেকার ছিলেন না। তবে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের মাপা লাইন লেন্থে আঁটকে রাখতে পারতেন। ফলে অপর প্রান্ত থেকে মুরালি বা অন্য বোলাররা উইকেট তুলে নিতে পারতেন সহজেই।
তবে ধর্মসেনা নিজের তৃতীয় টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ইনিংসেই নেন ৬ উইকেট। ওই ম্যাচে মোট ৮ উইকেট তুলে নেন এই স্পিনার। তারপর ১৯৯৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষেই ওয়ানডে ক্রিকেটেও অভিষিক্ত হন তিনি। তারপর প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ারে শ্রীলঙ্কার হয়ে ৩১ টি টেস্ট ও ১৪১ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন তিনি।
৩১ টেস্টে তাঁর ঝুলিতে আছে ৬৯ টি উইকেট। এছাড়া ১৪১ ওয়ানডেতেও রয়েছে ১৩৮ টি উইকেট। তাছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে লোয়ার মিডল অর্ডারে তাঁর ব্যাটিংও শ্রীলঙ্কার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওয়ানডেতে প্রায় ২৩ গড়ে ১২২২ রানের মালিক তিনি।
১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ী শ্রীলঙ্কা দলেরও সদস্য ছিলেন তিনি। তবে ১৯৯৮ সালে প্রশ্ন উঠে তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে। অ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়ে মাঠে ফিরতে ফিরতে প্রায় দুই বছর লেগে যায় তাঁর। ফলে আর নিয়মিত টেস্ট খেলা হয়নি এই স্পিনারে। তবে ২০০৬ সালে অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত নিয়মিত ওয়ানডে খেলে গিয়েছেন।
অবসরের পরই আম্পায়ার হবার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০০৯ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার একটি ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে অভিষিক্ত হন তিনি। ২০১১ বিশ্বকাপে তিনি আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তাঁকে আইসিসি এলিট আম্পায়ারের তালিকাভুক্ত করা হয়। ২০১২ সালে তিনি আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ারের পুরষকার পান।
২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচেও আম্পায়ার ছিলেন তিনি। তিনিই প্রথম যিনি ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন এবং কোনো বিশ্বকাপ ফাইনালে আম্পায়ারের দায়িত্বও পালন করেছেন। ২০১৮ সালেও আবার তিনি বর্ষসেরা আম্পায়ারের মর্যাদা লাভ করেন।
ক্রিকেট মাঠে দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়ার কাজটায় তিনি দিন দিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের চেয়েও আলোকিত তাঁর আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার। তাঁর ঝুলিতে হয়তো ৮০০ উইকেট নেই তবে তিনি এখন বিশ্বসেরা আম্পায়ারদের একজন। অবসরের এত বছর পরেও এখনো নিয়মিত ক্রিকেট মাঠে নামেন। এটাই বা কম কী। যেই খেলাটা , যেই বাইশ গজকে এতটা ভালোবাসেন সেটা এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ তো আর কোথাও পেতেন না তিনি।