আইসিসি ট্রফি না জিতেও কালজয়ী নেতা

অন্য যেকোনো খেলার চেয়ে ক্রিকেট মাঠে একজন অধিনায়কের ভূমিকা রাখার সুযোগ বেশি। একজন দক্ষ অধিনায়ক বাইশ গজে তাঁর দলের ভাগ্য পাল্টে দিতে পারেন। এখানে কেবল দায়িত্ব মাঠের ভেতর নয়, মাঠের বাইরে। খেলোয়াড়দের মানসিকতা, অনুপ্রেরণা দেওয়া, উদ্বুদ্ধ করা, টিম ম্যানেজমেন্টে ভূমিকা রাখা – অধিনায়কের কাজের কোনো শেষ নেই। নেতার কাঁধে চেপে এভাবেই একটা দল এগোয়। আর এই এগোনোর চূড়ান্ত রূপায়ন হয় বড় কোনো ট্রফি জয়ের মধ্য দিয়ে।

তবে, কার্য্যত সফল অনেক অধিনায়কের ক্যারিয়ারে বড় কোনো ট্রফি জিততে পারেননি। বিশ্বজুড়ে অনেক নেতারই দেখা মিলেছে, যারা সাফল্য পেয়েছেন, নেতৃত্বগুনও প্রশংসিত হয়েছে – কিন্তু জিততে পারেননি কোনো আইসিসি ট্রফি। তেমনই কয়েকজনকে নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

  • মাহেলা জয়াবর্ধনে (শ্রীলঙ্কা)

তিনি লঙ্কান ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, সেরা অধিনায়কদের একজন। ডান হাতি ক্লাসিক এই ব্যাটসম্যান ১৪৯ টি স্টে, ৪৪৮ টি ওয়ানডে ও ৫৫ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেন। করেন ৩০ হাজারের ওপর আন্তর্জাতিক রান।

অধিনায়ক হিসেবে তিনি ৩৮ টি টেস্ট, ১২৬ টি ওয়ানডে ও ১৯ টি টি-টোয়েন্টি খেলেন। তাঁর অধীনে ২০০৭ ও ২০১১ – দু’টো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে শ্রীলঙ্কা – কোনোটাতেই জিততে পারেনি।

  • গ্রায়েম স্মিথ (দক্ষিণ আফ্রিকা)

খুব তরুণ বয়সে তিনি প্রোটিয়াদের নেতা বনে যান। বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক তিনি। অধিনায়ক হিসেবে তিনি ১০৮ টি টেস্ট, ১৪৯ টি ওয়ানডে ও ২৭ টি টি-টোয়েন্টিতে দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁর সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল বিশ্বসেরা। বিশ্বকাপ, নিদেন পক্ষে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের সকল সুযোগ ও সম্ভাবনাই দলটির ছিল। কিন্তু, গ্রায়েম স্মিথও দলটির ‘চোকার’ অপবাদ ঘুঁচাতে পারেননি।

  • ইনজামাম উল হক (পাকিস্তান)

পাকিস্তানের ব্যাটিং কিংবদন্তি ইনজামাম লম্বা সময় দলের অধিনায়কত্ব করেন। কাগজে কলমে সময়টা ছিল ২০০১ থেকে ২০০৭ – মানে মোট সাত বছর। এই সময়ে ৩১ টি টেস্টের ১১ টি জেতে পাকিস্তান। ৮৭ টি ওয়ানডেতে জিতে ৫১ টি। একটি টি-টোয়েন্টিতেও অধিনায়ক ছিলেন তিনি।

পরিসংখ্যান বিবেচনায় ইনজামাম ছিলেন পাকিস্তানের সফলতম অধিনায়ক। তবে, দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল তাঁর নেতৃত্বেই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বাজে সময় কাটায় পাকিস্তান। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে পাকিস্তান যখন প্রথম পর্ব থেকেই বাদ পড়ে তখন অধিনায়ক ছিলেন এই ইনজামাম।

  • এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)

আধুনিক জমানার ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন তিনি। ১১৪ টি টেস্ট, ২২৮ টি ওয়ানডে ও ৭৮ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি করেছেন ২০ হাজারেরও বেশি রান। তিনি জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিন ফরম্যাটেই। অধিনায়ক হিসেবে খেলেছেন তিনটি টেস্ট, ১০৩ টি ওয়ানডে ও ১৮ টি টি-টোয়েন্টি, জিতেছেন দু’টি টেস্ট, ৫৯ টি ওয়ানডে ও আটটি টি-টোয়েন্টি।

বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ তাঁর সামনেও ছিল। ২০১৫ বিশ্বকাপে কাছাকাছি গিয়েছিলেন। কিন্তু, সেবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে শেষ ওভারের লড়াইয়ে হেরে যান। আবারও ‘চোকার’ অপবাদ ঘুঁচাতে ব্যর্থ হয় প্রোটিয়ারা। সেদিন ভিলিয়ার্সের চোখের পানি কারোই চোখ ফাঁকি দেয়নি।

  • বিরাট কোহলি (ভারত)

মহেন্দ্র সিং ধোনির কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর থেকে যেকোনো ফরম্যাটেই সাফল্য পেয়েছেন কোহলি। তাঁর অধীনেই কালক্রমে টেস্টে অজেয় এক দলে পরিণত হয়েছে ভারত।

তবে, এখনো বড় কোনো ট্রফি জিততে পারেননি তিনি। কোহলির অধীনে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলে ভারত। আর ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে গিয়ে থামে ভারতের দৌঁড়। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত ফেবারিটের তকমা নিয়ে গেলেও শেষ অবধি ব্যর্থ হয়। এর আগে বিরাট হারেন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও। এরপরই সাদা বলের অধিনায়কত্বের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে নেয় বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)।

এখানেই একটু না বললেই নয় যে, এখানে আসতে পারতো সৌরভ গাঙ্গুলি কিংবা হ্যান্সি ক্রনিয়ের নাম। তবে, দু’জনই একটি করে আইসিসি ট্রফি জিতেছেন। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় আইসিসি নকআউট টুর্নামেন্ট (বর্তমান আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা, অধিনায়ক ছিলেন ক্রনিয়ে। ২০০২ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত ও শ্রীলঙ্কা। দু’দলের অধিনায়ক ছিলেন যথাক্রমে সৌরভ গাঙ্গুলি ও সনাথ জয়াসুরিয়া।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link