পান্ত নাকি কার্তিক? ভারতের হয়ে এবারের বিশ্বকাপে উইকেটের পিছনে গ্লাভস সামলাবেন কে? এই মুহূর্তে এটাই যেন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহেন্দ্র সিং ধোনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকেই ভারতীয় দলে নিয়মিত মুখ ঋষাভ পান্ত। দারুণ ব্যাটিং শৈলীতে তিন ফরম্যাটেই হয়ে উঠেছেন দলে অপরিহার্য সদস্য।
ওদিকে, সবশেষ আইপিএলে দুর্দান্ত পারফর্ম করে দলে ফেরা দীনেশ কার্তিকও আছেন দারুণ ছন্দে। ব্যাট হাতে দলের ফিনিশিংয়েও ভূমিকা রাখছেন বেশ। আইপিএলের পর থেকে ভারতের হয়ে খেলেছেন বছরের প্রায় সবক’টি টি-টোয়েন্টি সিরিজ। অনেকের মতে, একাদশে দীনেশ কার্তিকেরই থাকার সম্ভাবনা বেশি। তবে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার আবার মনে করেন, পান্তেরই একাদশে থাকা উচিত। এর পিছনে যৌক্তিক কারণও দেখিয়েছেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ার্মআপ ম্যাচটা হয়েছিল গ্যাবায়। আর এই মাঠেই পান্তের দুর্দান্ত ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জিতেছিল ভারত। ওয়ার্মআপ ম্যাচের পরে স্টার স্পোর্টসের এক শো তে পান্তের সেই ইনিংসেই ফিরে গিয়েছিলেন সুনীল গাভাস্কার। তিনি বলেন, ‘এই সেই মাঠ, যেখানে আমরা ইতিহাস তৈরি করেছিলাম। চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ৩৩০ রান চেজ করেছিলাম। পান্তের সেই দুর্দান্ত ইনিংসের বদৌলতেই আমরা সিরিজ জিতেছিলাম। এরকম মাঠেই তো সে ভাল খেলবে। কিন্তু দু:খজনক ব্যাপার হলো, এবারের বিশ্বকাপে গ্যাবায় কোনো ম্যাচ নেই। তারপরও আমি মনে করি পান্তেরই একাদশে থাকা উচিৎ। সে এখানে ভাল রান পাবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তেমন একটা ফর্মে নেই পান্ত। তারপরও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কার্তিককে বাদ দিয়ে কেন পান্তকে বেঁছে নিলেন? এমন প্রশ্নে দারুণ এক পয়েন্ট তুলে ধরেছেন ভারতের এই ব্যাটিং গ্রেট। তিনি বলেন, ‘দলে একজন বাঁ-হাতি ব্যাটার ব্যবধান তৈরি করে। পান্ত না থাকলে ভারতের সব ব্যাটার ডানহাতি হয়ে যাওয়ায় ব্যাটিং লাইনআপ একমাত্রিক হয়ে যাবে। এ কারণে প্রতিপক্ষ অধিনায়কের জন্য ফিল্ডিং প্লেসমেন্ট করা বেশ সহজ হয়ে যাবে। তাই ভারতকে একজন বাঁহাতি ব্যাটার নিতেই হবে। সেটির জন্য পান্তই উপযুক্ত। কারণ এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
তবে গ্যাবায় হওয়া ওয়ার্মআপ ম্যাচে ছিলেন না পান্ত। উইকেটের পিছনে গ্লাভস হাতে দীনেশ কার্তিককেই এ ম্যাচে দেখা যায়। এতে অনেকে ধরেই নিয়েছেন, বিশ্বকাপের অন্তত প্রথম ম্যাচে কার্তিককেই ভারত একাদশে দেখা যাবে। সুপার টুয়েলভে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে অবশ্য আরো একটি ওয়ার্ম আপ ম্যাচ খেলবে টিম ইন্ডিয়া। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচটি হবে বুধবারে।
পান্ত-কার্তিককে একসাথে একাদশে খেলানো যায় কিনা সে পরীক্ষা নিরীক্ষাও চালিয়েছিল ভারতের টি ম্যানেজমেন্ট। বিশ্বকাপের আগে চার ম্যাচে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে দেখা যায় পান্তকে। আর ফিনিশিং রোলে খেলানো হয় কার্তিককে। কিন্তু সে চার ম্যাচের একটিতেও ওপেনিংয়ে নেমে বলার মতো কিছু করতে পারেননি পান্ত। তাই নিয়মিত টপ অর্ডার ব্যাটারদের উপরে ভরসা রাখছে ম্যানেজমেন্ট। সে ক্ষেত্রে পান্ত, কার্তিকের মধ্যে একজনকে নিশ্চিতভাবেই একাদশ থেকে বাদ পড়তে হচ্ছে।
কার্তিক ফিনিশিং রোলে এখন পর্যন্ত আস্থার প্রতিদান ভালভাবেই দিচ্ছেন। সদ্য শেষ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের শেষ ম্যাচেই ২১ বলে ৪৫ রানের ঝড়ো একটি ইনিংস খেলেছিলেন। অন্যদিকে, এশিয়া কাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত একটি ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংসও খেলতে পারেননি পান্ত। তাই একাদশে দীনেশ কার্তিককে দেখারই সম্ভাবনা বেশি বলেই অনেকে মনে করছেন।
তাছাড়া এবারের এশিয়া কাপেও পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পান্তের বদলে কার্তিককেই দেখা গিয়েছিল। তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচে দীনেশ কার্তিককেই দেখা যেতে পারে বলা যায়। তবে পুরো ডানহাতি ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট একাদশ সাজাবে কিনা সেটিও প্রশ্নের বিষয়। পান্ত নাকি কার্তিক, এই প্রশ্নে তাই শেষ পর্যন্ত চোখ রাখতে হবে ২৩ অক্টোবরে, ম্যাচের টসের সময়।