বন্য বোনো, সুপার সেভার ও প্রত্ন গোলরক্ষক

স্ট্রাইকার, ফরোয়ার্ডের খেলোয়াড়রা বরাবরই ফুটবল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকে। তাদের জোরালো কিকে বিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে যায়, গ্যালারি মেতে ওঠে বাঁধভাঙা আনন্দে-বিষাদে। নিমেষে লেখা হয়ে যায় রূপকথা। চোখের জলে ঝাপসা হয়ে ওঠা সমর্থক বা খেলোয়াড়দের দৃষ্টিপথ বেয়ে ভেসে যায় ভাঙা স্বপ্নের সাম্পান।

স্ট্রাইকার, ফরোয়ার্ডের খেলোয়াড়রা বরাবরই ফুটবল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকে। তাদের জোরালো কিকে বিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে যায়, গ্যালারি মেতে ওঠে বাঁধভাঙা আনন্দে-বিষাদে। নিমেষে লেখা হয়ে যায় রূপকথা। চোখের জলে ঝাপসা হয়ে ওঠা সমর্থক বা খেলোয়াড়দের দৃষ্টিপথ বেয়ে ভেসে যায় ভাঙা স্বপ্নের সাম্পান।

শুরু হয় চার বছরের অপেক্ষা। কিন্তু গোল না করে গোল বাঁচিয়ে ম্যাচ জেতানো আলাদা আনন্দের মাত্রা এনে দেয়। কোনও গোলকিপারের গ্লাভসে যদি লেখা হয় এমন ম্যাচ জেতানোর সোনালি আখ্যান তাহলে অকৃত্রিম আনন্দ পাই।

ফুটবলে বরাবরই আমার ফেভারিট পজিশন গোলকিপিং। মাঠে, স্কুলে যেখানেই খেলা হোক না কেন সুযোগ পেলেই তিনকাঠির তলায় বা আড়াআড়ি দূরত্বে রাখা চপ্পলের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়তাম।

ছোট থেকেই পিটার শিল্টন ছিল আমার রোল মডেল। ইংল্যান্ডের গিলরক্ষক, ব্যাস এটুকুই জানতাম। তখন ’৯১ কী ’৯২ হবে, ক্যাডবেরি ডায়েরি মিল্ক চকোলেটের সঙ্গে তখন ফুটবল প্লেয়ারদের পোস্টার দিত। শিল্টনের একটা পোস্টার পেয়েছিলাম। তখন সবেমাত্র ‘৯০ এর বিশ্বকাপ ফুটবল শেষ হয়েছে। দেখার বোঝার ক্ষমতা তখন হয়নি। বিশ্বকাপ বলে ফুটবলে একটা খেলা হয় এটুকুই জানতাম। গোল বাঁচিয়ে যে আনন্দ গোল করায় ততটা নেই। এমনই একটা বিশ্বাস ছিল।

১৯৯৫ সালের কথা। তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, বারাসতের সুভাষ একাডেমিতে ফুটবলে ভর্তি হয়েছিলাম। সেদিন রবিবার, সকাল থেকেই প্রবল মেঘলা, নিরন্তর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। রীতিমতো ট্রায়ালে স্প্রিন্টে নেমে, বৃষ্টির ভিতর খেলে গোল করে সেকেন্ড লিস্টে নাম উঠল। ফুটবল খেললে গিলকিপার হব। বৃষ্টির ভিতর ইচ্ছেটা নাছোড় আগুনের মতো জ্বলতে লাগল।

কয়েক মাস পরের কথা। ’৯৬ বিশ্বকাপ ক্রিকেট আসন্ন। চারদিকে আলোচনা, লেখালেখি চলছে তা নিয়ে। ক্রিকেটের ভূত মাথায় ঢুকল। গোলকিপার হবার স্বপ্ন খেয়ে ফেলল অনাহুত সেই ভুত।

এখনও যেকোনোও দলের গোলকিপার আমাকে টানে। প্রিয় বা বিপক্ষ যে দলেরই হোক না কেন। মুগ্ধ অবাক বিস্ময়ে অতিমানবিক সেভ দেখি। চির প্রতিদ্বন্দ্বী দলের গোলরক্ষক অবিশ্বাস্য সেভ করলেও মুখ থেকে বেরিয়ে পড়ে ‘বাহ’। দু’চোখ যেন সার্থক হয়ে যায়।

শেষ রাতে ইয়াসিন বোনোর প্রত্যয়ী ডাইভ আর সেভদুটো রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার বা রূপকথার থেকে কোনও অংশেই কম নয়। আমার ভিতরের না-হতে পারা সেই ছোট্ট গোলকিপারটাকে সময় আর স্মৃতির গর্ভ থেকে প্রত্নজীবের মতো তুলে আনল ‘সুপার সেভার’ বোনো।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...