নির্বাচকদের হেলায় হারানো এক অমরনাথ
ইনজুরি কিংবা ভুল সময়ে আবির্ভাবের সুবাদে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছেন। তবে নিজেকে সবচেয়ে দুর্ভাগাঁ ভাবতে পারেন সুরিন্দর অমরনাথ। ইনজুরি কিংবা বাজে পারফরম্যান্স নয়, স্রেফ নির্বাচকদের পরীক্ষানিরীক্ষা আর ভুল সিদ্ধান্তে স্বর্ণালি ক্যারিয়ারের আশা জাগিয়েও অল্পতেই থামতে হয়েছে অমরনাথকে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বড় কঠিন এক মঞ্চ ক্রিকেটারদের জন্য। পান থেকে চুল খসলেই সামান্য কারণে শেষ হয়ে যেতে পারে একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার। ইনজুরি কিংবা ভুল সময়ে আবির্ভাবের সুবাদে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছেন।
তবে নিজেকে সবচেয়ে দুর্ভাগাঁ ভাবতে পারেন সুরিন্দর অমরনাথ। ইনজুরি কিংবা বাজে পারফরম্যান্স নয়, স্রেফ নির্বাচকদের পরীক্ষানিরীক্ষা আর ভুল সিদ্ধান্তে স্বর্ণালি ক্যারিয়ারের আশা জাগিয়েও অল্পতেই থামতে হয়েছে অমরনাথকে।
অথচ কিংবদন্তি লালা অমরনাথের জ্যৈষ্ঠ পুত্র সুরিন্দর অমরনাথ সেই স্কুলজীবনেই ব্যাট হাতে নিজের প্রতিভার জানান দেন। তিনি এতটাই প্রতিভাবান ছিলেন যে জন্মগতভাবে ডানহাতি ব্যাটার হওয়া সত্ত্বেও বাবার পরামর্শে বাঁহাতি বনে যাবার পরেও রান বন্যায় ভাটা পড়েনি।
স্কুল ক্রিকেটে নিয়মিত রান করার সুবাদে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ডাক পেতে সময় লাগেনি। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে মাত্র ১৫ বছর বয়সে নর্দান পাঞ্জাবের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয় তাঁর।
১৯৬৭ সালে ভারত স্কুল দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে যান সুরিন্দর। সেই সফরেই লর্ডসে এমসিসি স্কুল দলের বিপক্ষে শেষ দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে মহাকাব্যিক এক জয় এনে দেন তিনি।
সেই ম্যাচে ইনিংসের শুরু থেকেই একা হাতে দলকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন কিশোর সুরিন্দর। অপরপ্রান্তে আসা যাওয়ার মিছিল থাকলেও তিনি ছিলেন অবিচল। সময়ের সাথে সাথে দিনের আলো ফুরিয়ে এলেও সুরিন্দরে ব্যাটের ঝলকানি থামেনি।
অথচ কোনো এক অজ্ঞাত কারণে জাতীয় দলে ডাক পেতে এক দশক অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। অথচ মাঝের সময়টাতে ঘরোয়া ক্রিকেটে দেদারসে রান করেছেন। অবশেষে ১৯৭৫ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে আনঅফিশিয়াল টেস্টে সুযোগ পান তিনি।
সেই সুযোগটা দুহাত ভরে নিয়েছিলেন সুরিন্দর, প্রথম টেস্টেই হাঁকান দারুণ এক সেঞ্চুরি। পরের টেস্টেও হাফ সেঞ্চুরি করার পর নির্বাচকরা আর উপেক্ষা করতে পারেননি, নিউজিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরগামী ভারত দলে জায়গা পান তিনি।
জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকে যেন বাবা লালা অমরনাথের কীর্তির পুনরাবৃত্তি ঘটান সুরিন্দর। অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেই দারুণ এক সেঞ্চুরি করেন। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম পিতা-পুত্র হিসেবে টেস্ট অভিষেকেই বিরল এক রেকর্ডের মালিক হন তাঁরা।
তাঁর চমৎকার স্ট্রোক প্লে দেখে মুগ্ধ হন সবাই। সুনীল গাভাস্কারের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ২০৪ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের ভীত গড়ে দেন। এই ম্যাচের পর সবাই ধরে নেয় তিন নম্বর পজিশনে অজিত ওয়াদেকারের যোগ্য উত্তরসূরী পেয়ে গেছে ভারত।
কিন্তু এমন চমৎকার শুরুর পরও পথ হারান সুরিন্দর। সেই সিরিজ তো বটেই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম দুই টেস্টে ব্যর্থ হবার পর একাদশে জায়গা হারান তিনি। মজার ব্যাপার হলো তাঁর অফফর্মের সুবাদে একাদশে জায়গা পান তাঁরই ছোটভাই মহিন্দর অমরনাথ। সেই সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোতে রান করে পরের সিরিজেও নিজের জায়গা পাকা করে নেন মহিন্দর, কপাল পুড়ে বড় ভাই সুরিন্দরের।