বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শুরু হওয়ার আগে সবার নজর ছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আর রংপুর রাইডার্সের দিকে। দুই দলই স্থানীয় এবং বিদেশি তারকাদের দলে নিয়েছে। এছাড়া ফরচুন বরিশালের স্কোয়াডও বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। অথচ নতুন দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের জার্সি গায়ে উঠেছিল এক দল অপরীক্ষিত তরুণ আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে দূরে থাকা ক্রিকেটারদের গায়ে।
তাই তো টুর্নামেন্টের ফেভারিট কারা – সেই প্রশ্নে এক ধাপ পিছিয়ে রাখা হত সিলেট অঞ্চলের প্রতিনিধিদের। কেউ কেউ তো বিপিএলের বৃদ্ধাশ্রমও বলেছেন তাদেরকে। কিন্তু খেলা মাঠে গড়াতেই বদলে গিয়েছে চিত্রপট; তিন ম্যাচের তিনটিতে জিতে এখন টেবিল টপার মাশরাফিরা। আর এর পেছনে মূল অবদান দেশীয় এক ঝাঁক তরুণের; পাশাপাশি অভিজ্ঞরাও অবদান রেখেছেন সময়ে সময়ে।
এক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হয় তৌহিদ হৃদয়ের কথা; বিপিএলের এবারের আসরে স্বপ্নীল সময় কাটাচ্ছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ না পেলেও পরের দুই ম্যাচে করেছেন টানা দুই ফিফটি। আবার দুই অর্ধশতক-ই এসেছে টি-টোয়েন্টির সাথে মানানসই স্ট্রাইক রেটে।
ফলে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ ম্যাচ সেরার পুরষ্কার এই ব্যাটারের হাতে উঠেছে। এখন পর্যন্ত ১৫৫ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ১১১ রান করেছেন তিনি, গড় ৫৫.৫! অভিষেক মৌসুমে সিলেট ভাল কিছু করতে চাইলে এই ডানহাতিকে ধরে রাখতে হবে এমন পারফরম্যান্স।
আরেক উদীয়মান তারকা জাকির হাসানও আছেন সিলেটের সাফল্যের নেপথ্যে। তিন ম্যাচেই দলের জয়ে অবদান আছে তাঁর। প্রথম ম্যাচে পরিস্থিতি অনুযায়ী ২১ বলে ২৭ রান করার পরের দুই ম্যাচে আবার খেলেছেন ঝড়ো ইনিংস। বিশেষ করে বরিশালের বিপক্ষে এই তরুণের ১৮ বলে ৪৩ রানের ইনিংসটিই বদলে দিয়েছে ম্যাচের গতিপথ। বলাই যায়, টেস্ট ফরম্যাটে যেমন ধৈর্য ধরে ব্যাট করতে জানেন জাকির হাসান, তেমনি টি-টোয়েন্টিতে পারেন দ্রুত রান তুলতে।
সিলেটের পেস লাইন আপে মোহাম্মদ আমির, মাশরাফি মুর্তজার মত বড় নাম থাকলেও আলাদাভাবে চোখে পড়ে রেজাউর রহমান রাজাকে। আসরের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রামের চার উইকেট তুলে নিয়ে দলের জয়ের পাশাপাশি নিশ্চিত করেছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার। অভিজ্ঞ রুবেল হোসেনকে বসিয়ে কেন রাজাকে খেলাচ্ছে টিম ম্যানেজম্যান্ট সেই উত্তরই বল হাতে দিয়ে যাচ্ছেন এই পেসার।
এছাড়া নাজমুল হোসেন শান্ত আহামরি কিছু করতে না পারলেও প্রথম দুই ম্যাচেও সামনে থেকে পারফর্ম করেছেন। প্রথম ম্যাচে তাঁর অবিচল ৪৩ রান এনে দিয়েছিল স্বস্তির জয় আর দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৮ রানের ইনিংসটি গড়েছে জয়ের ভিত।
সিলেটের টপ অর্ডারে স্থিতিশীলতা আনার দায়িত্ব ভালভাবেই সামলাচ্ছেন শান্ত। স্ট্রাইক রেট আরেকটু বাড়াতে পারলে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ওপেনার হওয়ার সব সম্ভাবনাই আছে এই বাঁ-হাতির। আবার তাঁর তড়িৎগতির ফিল্ডিংও সুফল বয়ে আনছে স্ট্রাইকার্সদের জন্য।
তরুণরা ছাড়াও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম, থিসারা পেরেরা দুইজনেই ছোট ছোট অবদান রাখছেন ম্যাচে। বরিশালের বিপক্ষে শেষদিকে দুই তারকা ঝড়ো ব্যাটিং না করতে পারলে হয়তো অবিশ্বাস্য সেই জয় পাওয়া-ই হত না সিলেটের। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকা মোহাম্মদ আমির, মাশরাফি মর্তুজারা দারুণভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন দলটিকে।
কাগজে কলমে কুমিল্লার মত শক্তিশালী না হলেও মাঠের খেলায় ভারসাম্য দেখা গিয়েছে সিলেট দলে। একক নৈপুণ্য নয় বরং ‘টিম গেম’ দিয়েই ম্যাচগুলো জিতে নিয়েছে তাঁরা। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে হয়তো নিজেদের প্রথম মৌসুমেই শিরোপা তুলে ধরতে পারবে সিলেট স্ট্রাইকার্স।