বাংলাদেশ যে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলবে, ধারণা করা যাচ্ছিল আগে থেকেই। ব্যাটারদের ব্যাটিং অনুশীলন কিংবা প্রেস কনফারেন্সে মেহেদী হাসান মিরাজের বক্তব্য সেই ধারণাকে আরো প্রবল করেছে। বাংলাদেশের একাদশে ৬ বোলার, মিরপুরের মাঠে সবুজ উইকেট ধারণাটিকে পাকাপোক্তই বানিয়েছে কেবল।
টসে হেরে সাকিব আল হাসান যখন এই সবুজ পিচে ৫ জন স্লিপ ফিল্ডার নিয়ে ফাস্ট বোলারদের হাতে বল তুলে দেন, তখন ফাস্ট বোলিং বিপ্লবের আরো একটা গল্প লিপিবদ্ধ হওয়ার অপেক্ষা। কিন্তু কে ভেবেছিল এখানেও সফলতার গল্প লিখবে একজন স্পিনার? তাও আবার সাকিব-মিরাজের মত অধিক সেলিব্রেটেড স্পিনার থাকতে, লাইমলাইটটা চলে যাবে তাইজুল ইসলামের কাছে?
মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে ঠিক সেটিই ঘটেছে। দিনের শুরুতেই দুই ফাস্ট বোলার শরিফুল-এবাদত দু’টি উইকেট তুলে নিলেও ম্যাচের ব্যালান্স স্বাভাবিক রেখে আয়ারল্যান্ড যখন লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার অপেক্ষায়, সেখান থেকেই তাইজুল ইসলামের শুরু। লাঞ্চের আগ মুহূর্তে সেট হয়ে যাওয়া আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবির্নিকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে প্রথম সেশন বাংলাদেশের করে নেন তিনি।
দ্বিতীয় সেশনে তাইজুল তুলে নেন আরো দুই উইকেট। সাথে মিরাজের এক উইকেটের কল্যানে দ্বিতীয় সেশনও বাংলাদেশের। তখন পর্যন্ত কোন এক অজানা কারনে সাকিব বোলিং করতে আসেন নি।
চা-বিরতির পরে সাকিব অবশ্য বোলিংয়ে এসেছেন, ৩ ওভার বোলিংও করেছেন। কিন্তু রান আটকে রেখে একপ্রান্ত থেকে বোলিং আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল তাইজুলের উপরেই। ফলও মিলেছে, ক্রমেই বিপদজনক হয়ে ওঠা টাকার এবং এডেয়ার এর উইকেট নিয়ে পূর্ণ করেছেন ইনিংসে ৫ উইকেটের কোটা। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশও আয়ারল্যান্ডকে আটকে দিতে পেরেছে ২২০ রানের আগেই।
আজকের ৫ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ১১ বার ৫ উইকেটের দেখা পেলেন। বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে তাইজুলের থেকে বেশিবার ৫ উইকেট পেয়েছেন কেবল সাকিব আল হাসান (১৯ বার)। বোলিং স্ট্রাইক রেটেও তার থেকে এগিয়ে কেবলমাত্র একজনই, ওই সাকিব আল হাসান। কিন্তু একপ্রান্ত থেকে টানা বোলিংয়ে আটকে রাখায় তাইজুলের থেকে এগিয়ে নেই কেউ আর।
আয়ারল্যান্ডের ইনিংসের ১১ তম ওভারে বোলিংয়ে এসেছিলেন তাইজুল ইসলাম। ৭৮ তম ওভারে অলআউট হওয়ার আগে আইরিশ ইনিংসের ৬৮ ওভারের মধ্যে ২৮ ওভারই এসেছে তাইজুলের মাধ্যমে। একপ্রান্ত থেকে একের পর এক ওভার পূর্ণ করেছেন তিনি।
একটানা একই জায়গায় বল করে বেধে রেখেছেন আইরিশদের রানের চাকা। ব্যাটারদের ভুল করতে বাধ্য করেছেন এবং যখনই কোন ব্যাটার ভুল করেছেন, উইকেট তুলে নিয়েছেন তাইজুল। দিনশেষে তার বোলিং ফিগার ২৮ ওভার ১০ মেডেন ৫৮ রান দিয়ে ৫ উইকেট সে সাক্ষ্যই দেয়।
তাইজুলের এমন বোলিং এই প্রথম নয়। একই পজিশনে নিয়মিত বল করতে পারেন বলে টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্যও তিনি। ৪০ টেস্টের ক্যারিয়ারে উইকেট নিয়েছেন ১৭০ এর বেশি। তারপরেও ক্রিকেটারদের নিয়ে আলোচনার টেবিলে বড্ড উপেক্ষিত তাইজুল। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক বড় তারকাদের নিয়ে আলোচনা হয়, উঠতি তারকারাও সমাদার পান, আলোচনায় থাকেন না কেবল দারুণ ধারাবাহিক তাইজুল ইসলাম।
আলোচনার মঞ্চে না থাকুক, পছন্দের খেলোয়াড়ের তলিকার উপরের দিকে না থাকুক, তাইজুল কেবল নিজের কাজটুকু করে যাক ধারাবাহিকভাবে, এতটুকুই প্রত্যাশা। বাংলাদেশের পেস বিপ্লবের সাথে তাইজুলের ধারবাহিকতা একাত্ম জয়ে গড়ে উঠুক এক পূর্ণাঙ্গ বোলিং আক্রমণ।