অধিনায়কের সেরা একাদশ

এবারের লেখার বিষয়টা বেশ অন্যরকম। অধিনায়ক একাদশ। মানে এমন এগারো জনকে নিয়ে তৈরি দল, যাতে সকলেই অধিনায়ক। তাহলে শুরু করা যাক। তবে তার আগে একটা কথা বলা ভালো। এটা যেহেতু টেস্ট দল, তাই বিবেচনায় শুধুমাত্র টেস্ট অধিনায়কত্বই আসবে।

এবারের লেখার বিষয়টা বেশ অন্যরকম। অধিনায়ক একাদশ। মানে এমন এগারো জনকে নিয়ে তৈরি দল, যাতে সকলেই অধিনায়ক। তাহলে শুরু করা যাক। তবে তার আগে একটা কথা বলা ভালো। এটা যেহেতু টেস্ট দল, তাই বিবেচনায় শুধুমাত্র টেস্ট অধিনায়কত্বই আসবে।

  • ওপেনারদ্বয়: মার্ক টেলর ও গ্রায়েম স্মিথ

অস্ট্রেলিয়ার সেরা সময়টা স্টিভের অধিনায়কত্বে। কিন্তু স্টিভের সাজানো বাগানের আসল মালি কিন্তু এই মার্ক টেলরই। বিশেষত বোলিং আক্রমণ। গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পি, ওয়ার্ন-স্টিভের দলের এই তিন স্তম্ভের গোঁড়াপত্তন কিন্তু টেলরের হাত ধরেই।

ওয়ার্ন বরাবর টেলরকে স্টিভের চেয়ে বড়ো অধিনায়ক মনে করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৬ বছরের সিরিজ না হারার রেকর্ডও কিন্তু ভাঙেন টেলর। হয়তো ব্যাট হাতে একটা দীর্ঘ সময় টেলর রান পাননি। কিন্তু তাঁর মগজাস্ত্রের জন্যে তিনি এই দলে থাকবেনই।

দ্বিতীয় ওপেনার হলেন গ্রায়েম স্মিথ।  স্মিথ হলেন সেই ধরণের অধিনায়ক, যিনি ‘লিড বাই একজাম্পল’ কথাটার সম্মান আজীবন রক্ষা করে গেছেন। মাত্র ৮ টেস্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল অধিনায়কত্বের ফার্নেসে। এবং শুরুতেই সেই ইংল্যান্ড সফর। ২৭৭ ও ২৫৯। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

ইংল্যান্ডে অধিনায়ক হিসাবে তিনটি সফর করে, তিন ইংরেজ অধিনায়ককে গদিচ্যুত করেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে পরপর দুবার সিরিজ জিতেছেন। ভারতে অধিনায়ক হিসাবে তিনটি সফর করে একটিও হারেননি। একজন টেস্ট অধিনায়কের থেকে আর কি চাওয়ার থাকতে পারে?

  • তিন নম্বর: স্যার ডন ব্র্যাডম্যান

অধিনায়কদের নিয়ে বানানো একাদশ, আর ১৯৪৮ এর ‘অপরাজেয়’ দলের অধিনায়ক তাতে থাকবেন না তা কি হয়? নিজের ৫২ টেস্টের মধ্যে ২৪টি টেস্টে অধিনায়কত্ব করেছেন। অধিনায়ক হিসাবে খেলেছেন সব অস্বাভাবিক ইনিংস।

অধিনায়ক জীবনের একেবারে গোঁড়ায়, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে সেই ২৭০ কে ভুলবে? আসলে ব্যাপারটা এই-ব্র্যাডম্যান ছাড়া কোনো কাল্পনিক টেস্ট একাদশ বানানো সম্ভবই না।

চার ও পাঁচ নম্বর: বিরাট কোহলি ও স্যার ফ্র্যাঙ্ক ওরেল

এই দুটো জায়গায় অনেক গুলো বিকল্প ছিল। লয়েড, ইয়ান চ্যাপেল, টাইগার পতৌদি, অস্ট্রেলিয়ার বিশাল বপু অধিনায়ক ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং, মাইকেল ক্লার্ক, হ্যান্সি ক্রনিয়ে, অ্যালান বোর্ডার, ভিভ রিচার্ডস, সৌরভ গাঙ্গুলি, ডগলাস জার্ডিন ইত্যাদি। কিন্তু এই দুজনকে বেছে নেয়ার পিছনে দুটো কারণ।

এক, সংশ্লিষ্ট দেশের ক্রিকেটে এদের প্রভাব। দুই, কিছু অবিস্মরণীয় ম্যাচ। ওরেল নিয়ে এটুকু জায়গায় লেখা সম্ভব না। তিনি ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক (যদিও জর্জ হেডলি একটি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন-কিন্তু পাকাপাকি ভাবে একটা সময়ের জন্যে ওরেলই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক)। ১৯৬০-৬১র অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ ভোলা সম্ভব না।

ওরেল ও বেনো-দুই অধিনায়কের সৌজন্যে সেই সিরিজ টেস্ট ক্রিকেটের ঝিমিয়ে থাকা পালে নতুন শীতল বাতাসের সঞ্চার করে। বেনো পরে লেখেন, ‘ওরেল যদি ওই সিরিজে ভালো না করতো, তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ও বিশেষত কৃষ্ণাঙ্গদের ক্রিকেট কুড়ি বছর পিছিয়ে যেত।’ অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের অধিনায়ক ছিলেন তিনি।

বিরাট কোহলি ঠিক উল্টো। চটজলদি দারুন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে বিরাট কোহলিকে খুব একটা দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু ধোনির ছেড়ে যাওয়া প্রায় ফসিল হয়ে যাওয়া একটি টেস্ট দলকে আবার এক নম্বরে উন্নীত করার কৃতিত্ব তো তাঁকে দিতেই হবে।

পেস বোলিং ও ফিটনেস-এই দুই মন্ত্র এবং বিদেশে জেতার স্পৃহা। এসব একজন অধিনায়কের সদিচ্ছা ছাড়া খুব একটা হয় না। এছাড়া একটা দীর্ঘ সময় ধরে অধিনায়ক হিসাবে যেভাবে রান করেছেন দেশে বিদেশে, তা তাঁর অব্যব্যাহিত আগের খুব বেশি অধিনায়ক পারেননি।

  • অলরাউন্ডার: ইমরান খান

নাহ! তাঁকে এই দলে রাখা নিয়ে খুব বেশি ভ্রু কুঞ্চন দেখছি না। কাজেই এটা নিয়ে বাড়িয়ে লেখার মতো কিছু নেই।

  • উইকেট রক্ষক: ব্রেন্ডন ম্যাককালাম

জানি এই নির্বাচনের জন্যে অনেকেই আমাকে অর্বাচীন ভেবে বসবেন। কিন্তু কিছু করার নেই। এই ভদ্রলোক নিউজিল্যান্ডের মতো একটি দেশে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করেছেন।

উইলিয়ামসনের দল এই যে বিশ্বসেরা দল হলো, ম্যাকালামই তো ব্যাপারটা শুরু করেন। যদিও অধিনায়ক থাকাকালীন উইকেট রক্ষক ছিলেন না তিনি। কিন্তু এই দলের স্বার্থে তাঁকেই উইকেট রক্ষক হিসাবে রাখা যাক।

  • স্পিন বোলার: রিচি বেনো ও অনিল কুম্বলে

ওরেলকে রাখা হয়েছে, তাঁর পরম ক্রিকেটীয় প্রতিদ্বন্দ্বী বেনো থাকবেন না তা কি হয়? অসম্ভব ভালো অধিনায়ক ছিলেন। তাছাড়া চমৎকার ম্যাচ রিডিং। ব্যাটিংটাও দিব্যি।

আর অনিল কুম্বলে তো ভারতের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড অধিনায়ক। একেবারে ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে সুযোগ পান। সেইটুকু সময়েই দেখিয়ে দেন তিনি দীর্ঘকালীন অধিনায়ক হলে কি করতে পারতেন।

  • পেসার: ওয়াসিম আকরাম ও শন পোলক

এমনিতে পেস বোলিং অধিনায়ক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব যে পাওয়া যায় তা নয়। কাজেই এই দুই জনকে বেছে নেওয়া টা খুব একটা কঠিন ছিল না।

অন্যান্য পেস বোলিং অধিনায়কের তুলনায়, ওয়াসিম আকরাম অনেকটাই এগিয়ে। বেশ কিছু কঠিন ও স্মরণীয় টেস্ট ম্যাচ জিতেছে পাকিস্তান আকরামের অধিনায়কত্বে।

আর শন পোলক কিন্তু গড়াপেটা ও হ্যান্সি ক্রনিয়ে গেট পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক। একটি ফিক্সিং বিক্ষত দলকে অস্ট্রেলিয়ার পর সেরা টেস্ট দল তৈরি করা।

গল্পটা চেনা চেনা লাগছে তো? হ্যাঁ লাগারই কথা। কিন্তু পোলকের দুর্ভাগ্য তিনি ভারতে জন্মাননি। অধিনায়ক হিসাবে একমাত্র ২০০৩ বিশ্বকাপটা ছাড়া আর খুব বেশি লাল দাগ কিন্তু পোলকের সিভি তে নেই।

  • দ্বাদশ ব্যক্তি: ডগলাস জার্ডিন

এখন প্রশ্ন, এই অধিনায়ক একাদশের অধিনায়ক কে হবেন? এতগুলো ক্ষুরধার মাথার মধ্যে এমন একজনকে চাই যিনি খুব ভালো ম্যান-ম্যানেজার। ইমরান খান নন। কারণ জাভেদ মিয়াঁদাদ ও পাকিস্তানি সাংবাদিকদের সাথে তাঁর নিত্য খিটিমিটি। কোহলিও নন।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার কিছু নেই। কুম্বলে, আকরাম বা পোলককে করছি না কারণ চাই তাঁরা খোলা মনে বল করুন। মার্ক টেলর অধিনায়ক হলেই ব্যাটে রান পান না। ব্র্যাডম্যান, স্মিথ, বেনো বা ওরেলের মধ্যে যে কেউ হতে পারেন। আমি আমার পছন্দ হিসাবে ওরেল কে অধিনায়ক ও বেনোকে সহঅধিনায়ক বেছে নিলাম। বাকি মতামত পাঠকরা দিন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...