সালমান বাট, কলঙ্কিত প্রতিভা

এখন হয়তো ক্রিকেট বিশ্ব তাঁকে শুধু লর্ডস টেস্টের সেই কলঙ্কিত অধ্যায় দিয়েই মনে রেখেছে। তবে এর আগেও যে ছিল এক সোনালি ইতিহাস। সবটাই কী ঢাকা পড়ে গিয়েছে ওই একটি ম্যাচের কালিতে? যাকে পাকিস্তান ক্রিকেট ভেবেছিল কিংবদন্তি ওপেনার সাঈদ আনোয়ারের উত্তরসূরি হিসেবে। তখনো টিন এইজের তকমা না পেরোনো সালমান বাটকে নিয়ে পাকিস্তান যে স্বপ্ন দেখেছিল তা একসময় গিয়ে ঠেকেছিল আদালতের কাঠগড়ায়।

এখন হয়তো ক্রিকেট বিশ্ব তাঁকে শুধু লর্ডস টেস্টের সেই কলঙ্কিত অধ্যায় দিয়েই মনে রেখেছে। তবে এর আগেও যে ছিল এক সোনালি ইতিহাস। সবটাই কী ঢাকা পড়ে গিয়েছে ওই একটি ম্যাচের কালিতে? যাকে পাকিস্তান ক্রিকেট ভেবেছিল কিংবদন্তি ওপেনার সাঈদ আনোয়ারের উত্তরসূরি হিসেবে। তখনো টিন এইজের তকমা না পেরোনো সালমান বাটকে নিয়ে পাকিস্তান যে স্বপ্ন দেখেছিল তা একসময় গিয়ে ঠেকেছিল আদালতের কাঠগড়ায়।

পাকিস্তান ক্রিকেটে এক আশীর্বাদের মত আবির্ভূত হলেন সালমান বাট। মাত্র আঠারো বছর বয়সেই বাংলাদেশের বিপক্ষে মুলতানে টেস্ট অভিষেক। ওয়ানডে অভিষেকটা হয়েছিল আরো বছর খানেক বাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাউদাম্পটনে। তবে ততদিনে নিজের কবজির কাজে পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছেন। তিনি ব্যাট করতে নামা মানেই বাইশ গজে দারুণ স্পব কাট ও ড্রাইভের ফুলঝুরি। পায়ের কাজটা নিখুঁত বলা যায় না, তবে শরীরি ভাষা ও মেজাজ দিয়ে তা পুষিয়ে দিতেন।

১৯৮৪ সালের ৭ অক্টোবর লাহোরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন পাকিস্তানের এই ব্যাটসম্যান। ক্রিকেটটা দেরিতে শুরু করেছিলেন। তবে ক্রিকেটীয় প্রতিভা নিয়ে জন্মানো সালমান বাট দ্রুতই পেরিয়ে যেতে থাকেন বয়সভিত্তিক দলের গন্ডি। ২০০০ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলেন।

সেখানে নিজেকে প্রমাণ করে দ্রুতই সুযোগ পান পাকিস্তান ‘এ’ দলে। সবশেষ ২০০৩ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে অভিষিক্ত হন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। বাংলাদেশের বিপক্ষে মুলতান টেস্টে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। দারুণ কিছু করে দেখাতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলে একটা বার্তা দিয়েছিলেন।

সেই বার্তার জোরেই ডাক পান অস্ট্রেলিয়া সফরের দলে। অজিদের বিপক্ষেই নিজেকে প্রথম প্রমাণ করেন সালমান বাট। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে খেলেন ৭০ রানের ইনিংস। ওদিকে তৃতীয় টেস্টে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ১৮৫ বলে খেলেন ১০৮ রানের ইনিংস।

টেস্টে সালমান বাটের তখন থেকেই প্রিয় প্রতিপক্ষ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নিজের অভিষেক হয়েছিল অজিদের সাথেই। সেখানেও জয় এনে দিয়েছিলেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে। অজিদের বিপক্ষে ব্যাটসম্যান সালমান বাটও ছিলেন দারুণ সফল। নিজের অভিষেকের পর থেকে অজিদের বিপক্ষেই করেছেন সবচেয়ে বেশি টেস্ট রান। তাঁর তিনটি টেস্ট সেঞ্চুরির দুইটিই এসেছে অজিদের বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ টি টেস্ট খেলে ৪৪.৮৭ গড়ে করেছেন ৭১৮ রান।

ওদিকে ওয়ানডে ক্রিকেটে সালমানের প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। এই ফরম্যাটে বাট সবচেয়ে বেশি রান করেছেন ভারতের সাথেই। ভারতের বিপক্ষে ২১ ওয়ানডে ম্যাচে করেছেন ৯৯২ রান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দেশটির বিপক্ষে তাঁর ব্যাটিং গড় ৫২.২১। এছাড়া ভারতের বিপক্ষে ৫ টি ওয়ানডে সেঞ্চুরিও করেছেন এই ব্যাটসম্যান।

সব মিলিয়ে দ্রুত সময়েই পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপের বড় ভরসার নাম হয় উঠেছিলেন সালমান বাট। আফ্রিদির কাছ থেকে টেস্ট অধিনায়কত্বের দায়িত্বও পান। পাকিস্তানের হয়ে খেলা ৭৮ ওয়ানডে ম্যাচে ৩৬.৮২ গড়ে করেছেন ২৭২৫ রান। এই ফরম্যাটে ১৪ টি হাফ সেঞ্চুরির বিপরীতে আছে ৮ টি সেঞ্চুরি।

ওদিকে ৩৩ টেস্ট ম্যাচেও তাঁর ঝুলিতে আছে প্রায় দুই হাজার রান। এই ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটি গড় ৩০.৪৬। এখানে ১০ টি হাফ সেঞ্চুরি সহ আছে ৩ টি সেঞ্চুরির ইনিংসও। এছাড়া ২৪ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছেন। সেখানেও ২৮.৩৩ গড়ে করেছেন ৫৯৫ রান। সর্বোচ্চ ৭৪ রানের একটি ইনিংসও আছে।

সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যখন দারুণ সময় পাড় করছেন তখনই সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। ২০১০ সালে লর্ডস টেস্টে ইচ্ছাকৃতভাবে নো বল করেন পাকিস্তানের দুই পেসার মোহম্মদ আসিফ ও মোহম্মদ আমির। তাঁদের বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিং এর প্রমাণ মেলে। এরপরেই নাম আসে অধিনায়ক সালমান বাটের। তিনিও জড়িত ছিলেন এই ফিক্সিং কেলেঙ্কারির সাথে।

এই অপরাধে ক্যারিয়ারের মধ্য গগণে থাকা সালমান বাট ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন ১০ বছরের জন্য। পরে অবশ্য এই শাস্তি কমিয়ে আইসিসি ৫ বছরে নিতে এসেছিল। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর কখনো ফিরতে পারেননি তিনি। এমনকি এই অপরাধের জন্য জেলও খাটতে হয়েছিল তাঁকে। ২০১১ সালে তাঁকে ৩০ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। যদিও ২০১২ সালের জুন মাসেই মুক্তি পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

তবে কোনভাবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের হয়ে আর মাঠে নামা হয়নি প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যানের। ২০১০ সালেই থেমে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। যদিও ২০১৬ সালে নিষেধাজ্ঞা শেষে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছিলেন। তবে সেই যাত্রায় আগের মত হাসেনি তাঁর ব্যাট। আরেকজন সাঈদ আনোয়ার কিংবা শুধু একজন সালমান বাটের পুরোটাও পাওয়া হলো না পাকিস্তানের।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...