তামিমের ভবিষ্যৎ তামিমের হাতেই

তামিমের ভবিষ্যৎ খোদ তামিমের হাতেই ন্যাস্ত। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তামিম ইকবাল খান বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক আলো ঝলমলে চরিত্র। যখন বাংলাদেশ দল খাবি খেয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটে। তখনও একা হাতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। লাল-সবুজ জার্সিতে একাই লড়াই চালিয়েছেন বহু সময়।

তবে সব কিছুরই একটা শেষ থাকে। শেষটা অবশ্য তামিম করেই ফেলেছিলেন। ৬ জুলাই ভীষণ বেদনা-তুর এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তামিম ইকবাল সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। তবে ২৯ ঘন্টা বাদেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তামিম আবারও ক্রিকেটে ফেরার প্রতিশ্রুতি দেন।

আদৌ কি তামিম ফিরছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে? তামিমের ফেরা আর না ফেরাটা এখন পুরোপুরি তামিমের উপর। মূল কারণ তার পিঠের ইনজুরি। যেই ইনজুরিই ড্যাশিং এই ওপেনারকে তুলেছিল সমালোচনার কাঠগড়ায়। কোনভাবেই যেন কোমড়ের ইনজুরিটা তার পিছু ছাড়ছে না।

এটার শেষ সমাধান ছুরি-কাঁচির আঁচড়। অর্থাৎ অস্ত্রপচার। সুদূর যুক্তরাজ্যে তামিম নিজের এই ইনজুরির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবেন। সেখানকার ডাক্তাররা অস্ত্রপচারের পরামর্শই দেবেন, সেটা মেডিকেল সংশ্লিষ্ট বেশকিছু সূত্রই জানিয়েছেন। কিন্তু তাতে তামিমকে থাকতে হবে চার মাস বিশ্রামে। কোন ধরণের শারীরিক চাপ অন্তত এই সময়ে দিতে পারবেন না তিনি নিজেকে।

তাতে করে তামিম ইকবাল মিস করবেন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ। এখন প্রশ্ন হল, তামিম কি সত্যিই এই টুর্নামেন্টগুলো খেলার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান? হয়ত তিনি চান না। বিশ্বকাপ খেলবার সুপ্ত বাসনা সবার মনেই সুন্দর ঘর তুলে বসবাস করে। তামিমের তেমনই এক ঘর নিশ্চয়ই রয়েছে।

এক্ষেত্রে তামিমকে নিতে হবে বেশ শক্তিশালী ব্যথানাশক ইনজেকশন। তাতে অবশ্য দীর্ঘকালীন সমস্যার সমাধান হবে না। ব্যথা যেকোন সময় এসে হাজির হতে পারে। সেক্ষেত্রে দল পরে যেতে পারে বিপাকে। তামিম বরাবরই নিজের চাইতেও দলকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এবারও তেমনটি দিতে চাইলে তাকে অস্ত্রপচার করবার কঠিন সিদ্ধান্তই নিতে হবে।

ধরুন তামিম সেই সিদ্ধান্তই নিলেন। তিনি অস্ত্রপচার করে মাঠের বাইরে রইলেন মাস চারেক। এরপর তামিম আসলে ফিরে কি করবেন? বয়সটা তার ৩৪ পেরিয়েছে। পরবর্তী ওয়ানডে বিশ্বকাপ আসতে আসতে তামিমের বয়স ৩৯ এর দিকে হাঁটা শুরু করবে। নিশ্চিতভাবেই দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া ক্লান্ত শরীর তখন আর তামিমকে প্রশ্রয় দেবে না।

তাছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন বেশ অনেকদিনই হয়েছে। সেখানেও তার সুযোগ নেই আলো ছড়াবার। রইলো বাকি টেস্ট ক্রিকেটের গৌরব। অস্ত্রপচার শেষে তামিমের কন্ডিশন আদতে টেস্ট খেলার মত পরিস্থিতিতে থাকবে নাকি, সেটাও বড় প্রশ্ন। বয়সটাই প্রধান অন্তরায়। তাহলে তামিম অস্ত্রপচারের লম্বা বিরতি শেষে কিসের মোহতে ফিরবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে?

সেটা পরিষ্কার নয়। নিশ্চয়ই তামিমের ব্যক্তিগত কিছু পরিকল্পনা থাকবেই। সেটা সম্ভবত ২০২৪ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।  তবে এ কথা প্রায় নিশ্চিত, চার মাসের বিরতির পর জাতীয় দলে তামিমের জায়গাটা হয়ে যাবে নড়বড়ে। টিম ম্যানেজমেন্টকে এগোতে হবে ভবিষ্যতের ভাবনায়। তখন আসলে তামিমকে প্রচণ্ড লড়াই করেই ফিরতে হবে জাতীয় দলে। কিন্তু বেশি দিনের জন্য নয়।

এদিকে তামিম যদি এখন সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি এবারের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ দু’টোই খেলবেন। ইনজেকশন নিয়েই তিনি খেলবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কোন নিষেধ নেই। এখনও তামিমকে বিশ্বকাপের অধিনায়ক হিসেবেই ভাবছেন বোর্ড সভাপতি। তেমনটাই হওয়ার কথা।

কেননা তামিমের অবসর কাণ্ডের আগে হওয়া সকল পরিকল্পনায় বিশ্বকাপ অধিনায়ক তো তিনিই ছিলেন। সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে চান না বোর্ড কর্তারা। এমনকি টিম ম্যানেজমেন্টও সম্ভবত তামিমকে অধিনায়ক ভেবেই নিজেদের পরিকল্পনার ছক কষতে শুরু করবেন।

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে অমান্য করবার সুযোগ নেই। সেটা করা যায় না। খোদ তামিম ইকবালই তেমনটি জানিয়েছেন। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করতে না চাইলে তামিমকে এশিয়া কাপে নামতে হবে মাঠে। সেদিক থেকে আবার দলের অন্তর্গত বেশ কিছু বিষয়ে তামিমের আপত্তি রয়েছে। সেসব দ্রুততম সময়ে সমাধান করা সম্ভব নয়, তেমনটিও জানিয়েছেন তিনি।

মোদ্দা কথা তামিম এখন রয়েছেন বিশাল এক দুশ্চিন্তার ঘেরাটোপে। সবকিছুর সমাধান তামিমকেই করতে হবে। তামিমকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে অস্ত্রপচার করবার অথবা ইনজেকশন নেবার। আর যেকোন সিধান্তই তামিমকে দ্রুততম সময়ে জানাতে হবে বোর্ডকে। নতুন অধিনায়ক খোঁজার কাজটা তো অন্তত শুরু করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link