দূরবীণে চোখ রাখবো না-না-না

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে তামিম ইকবাল আর বাংলাদেশ দলের মাঝে যেন লুকোচুরি খেলা হয়েছে এতদিন। গত এক বছর থেকেই বিশ ওভারের ফরম্যাটে বেশ অনিয়মিত তামিম। আনুষ্ঠানিক অবসর না নিলেও তখন টি-টোয়েন্টি থেকে দুই মেয়াদে বিরতি নিয়েছিলেন তামিম।

তামিম নিজে বুঝতে পেরেছিলেন যে – তাঁকে দিয়ে টি-টোয়েন্টি হচ্ছে না। তবে, বুঝতে পারছিল না কেবল দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে, তামিম দুই নৌকায় পা রাখা থেকে আপাতত নিজেকে বিরত রেখেছেন। এবার আর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়, টি-টোয়েন্টিকে পুরোপুরি বিদায় বলে দিলেন দেশসেরা ওপেনার।

বাংলাদেশ ওয়ানডে দল এখন তামিম ইকবালের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অবস্থান করছে। সেখানে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করে উদযাপন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই প্রকাশিত হয়েছে তামিমের অবসরের সিদ্ধান্ত। না, তিনি খেলার আগে কিংবা পরে এই ঘোষণা দেন নি। নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের এক পোস্টে দুই লাইনের এক বার্তা দিয়েই সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাট থেকে নিজেকে আজন্ম ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। 

তামিম ইকবাল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিবেন সেই গুঞ্জন আর সংশয় অনেক আগ থেকেই ছিল। বারবার বিরতি, ইনজুরিসহ বিভিন্ন কারনে টি-টোয়েন্টি খেলা একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি তরুণদের সুযোগ করে দিতে ও প্রস্তুতির ঘাটতির কারণ জানিয়ে গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন তামিম।

সর্বশেষ তাঁকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে কবে দেখা গিয়েছে সেটিও মনে থাকার কথা নয়। দুই বছরের বেশি সময় হয়ে গিয়েছে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেবার ইনিংস ওপেন করতে নেমেছিলেন তামিম। এরপর থেকে একপ্রকার অলিখিত বিরতি চলছিল তার, কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে লম্বা সময়ের ছুটির কথা জানান চট্টগ্রামের খান।

গত জানুয়ারিতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে টি-টোয়েন্টি খেলতে চান না বলে জানিয়েছেন তামিম। এরপরই টেস্ট ও ওয়ানডেতে মনযোগ দেওয়ার কথা বলে এই সংস্করণ থেকে ছয় মাসের বিরতি নিয়েছিলেন তিনি।

তবে এই ছয় মাস একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট কাটে নি। বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে তামিমের টি-টোয়েন্টি ভবিষ্যৎ। বিশেষ করে গত দুই বছরেও একটি কার্যকর এবং দীর্ঘস্থায়ী ওপেনিং জুটি না পাওয়ায় তামিমকে নিয়ে আলোচনা একটু বেশিই হয়েছে। 

সাংবাদিকরাও তাই সুযোগ পেলেই প্রশ্ন করতে ছাড়েননি ওয়ানডে অধিনায়ককে। কবে ফিরবেন, আদৌ ফিরবেন কি না সবার এসব কৌতূহল মেটাতে গিয়ে কিছুটা বিরক্ত-ই হয়েছিল তামিম। তাই সেবারও নিজের ফেসবুক পেজে সবাইকে অপেক্ষা করার অনুরোধ করেন তিনি।

সেসময় তামিম বলেছিলেন, ‘বোর্ডের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নিয়মিতই আছে। এবং তারা খুব ভালোভাবেই জানে টি-টোয়েন্টি নিয়ে আমার ভাবনা কোনটি। আমি স্রেফ নিজে সেই কথাটুকু বলতে চাই, সেই সময়টুকু চাই। সময় হলে আমার সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই আমি জানাব। ৬ মাস হতে তো এখনও দেড় মাসের বেশি বাকি। কিন্তু সেই সময়টার অপেক্ষা কেউ করছে না। এটাই দু:খজনক।’

অপেক্ষা অবশ্য আর বাড়াননি তামিম। ছয় মাস শেষ হওয়ার আগেই জানিয়ে দিলেন সব প্রশ্নের উত্তর, মিটিয়ে দিলেন সবার কৌতূহল। এখন থেকে তামিম ইকবালকে দেখা যাবে শুধু টেস্ট আর ওয়ানডে ক্রিকেটে। বর্ষিয়ান এই ব্যাটারের জন্য অবশ্য এই সিদ্ধান্ত ভাল বলতেই হয়। তিন ফরম্যাটে খেলার মত শারিরীক সক্ষমতা হয়তো কমে আসছে বয়সের ভারে। তাই একটা ফরম্যাটকে বিদায় বলা হয়তো আশীর্বাদ হয়েই আসবে তামিমের জন্য। 

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তামিমের অভিষেক ২০০৭ সালে, কেনিয়ার বিপক্ষে। এরপর থেকে একযুগের বেশি সময় তিনি বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে এসেছিলেন। সবমিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৭৮ ম্যাচ খেলেছেন এই বামহাতি ব্যাটসম্যান।

বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৭৫৮ রান আছে তাঁর নামের পাশে। তাছাড়া ব্যাটিং গড় ২৪.০৮ আর স্ট্রাইক রেটটা প্রায় ১১৭। নূন্যতম পঞ্চাশ ইনিংস খেলেছে এমন বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে তামিমের গড় সর্বোচ্চ।

টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে মোট সাতটি অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন তামিম ইকবাল। আর একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে আন্তজার্তিক টি-টোয়েন্টিতে শতক হাঁকানোর কীর্তি আছে তাঁর। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ধর্মশালায় ওমানের বিপক্ষে তামিম খেলেছিলেন অপরাজিত ১০৩ রানের ইনিংস। তাছাড়া তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি আছে এমন খেলোয়াড়দের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন, বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান তাদের একজন। 

সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেননি তামিম ইকবাল। তবে এর আগে চারটি বিশ্ব আসরের সবকটিতেই খেলতে দেখা গিয়েছিল তাকে। সবমিলিয়ে বিশ্ব মঞ্চে ৫১৪ রান করেছেন তিনি। আর এখানে বাংলাদেশিদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাঁর। অবশ্য বাছাইপর্বের পরিসংখ্যান বাদ দিলে, মূলপর্বে তামিমের পারফরম্যান্স ঠিক তামিম সুলভ নয়।  

স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা হয়েছে অনেক। সমালোচনা হয়েছে টি-টোয়েন্টি অ্যাপ্রোচ নিয়ে। কিন্তু তামিমের অবর্তমানে যারা ব্যাটিংয়ে এসেছিলেন তাদের কেউই তাঁর চেয়ে আরেকটু ভাল করতে পারেনি। এমনকি কাছাকাছিও যেতে পারে তরুণ ওপেনাররা। তবে সময় শেষ হয়ে যায়নি। বারবার সুযোগ দিলে হয়তো তামিমের মত আরো একজন ভরসাযোগ্য ওপেনার পাওয়া যাবে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষ করে জিম্বাবুয়ে সিরিজ, এশিয়া কাপ, নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ। এরপর আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের জন্য বেশ ব্যস্ত সময়। আর এই সময়ে বাংলাদেশকে পরিকল্পনা করতে হবে অভিজ্ঞ তামিমকে ছাড়াই। নতুন কেউ তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগ নিতে পারে নাকি ওপেনিং পজিশন নিয়ে আরো ভোগান্তিতে পড়বে বাংলাদেশ সেটিই এখন দেখার বিষয়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link