বাংলাদেশের ‘বিগেস্ট থিঙ’

জন্ম ফিনল্যান্ডে। সেখানকার হিম-শীতল আবহাওয়ায় তার বড় হওয়া। ফিনল্যান্ডের সবুজে ঘেরা নান্দনিক প্রকৃতির মাঝে কেটেছে তার শৈশব, কৈশোর। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলকে ধ্যান জ্ঞান  হিসেবে নেওয়া সেই তরুণ ফিনল্যান্ড ছেড়েছেন এই ফুটবলের জন্যই। নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছেন নিজের প্রিয় পিতৃভূমি বাংলাদেশে। কারন কৈশর থেকেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর বাসনা তাঁর। বাবার গ্রামের বাড়ি নওগাঁয়। বাবার সাথে ছোটবেলায় এসে ঘুরে গেছেন বাংলাদেশে। বলছি তারিক রায়হান কাজীর কথা!

বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আসা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের নেহায়েত কম নয়। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয় দলে স্থায়ী আবাস গড়তে পেরেছেন কেবল জামাল ভূইয়া। বাংলাদেশের ফুটবলের বড় পোস্টার বয় এখন জামাল ভূইয়া এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কও তিনি। লাল-সবুজ ফুটবলের প্রতি তারিকের আগ্রহ মূলত তৈরি হয় জামাল ভূঁইয়াকে দেখে।

তবে, বাংলাদেশে খেলতে আসা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান মনে করা হয় তারিক কাজীকে। সবচেয়ে হাইপ্রোফাইলও এই ফিনল্যান্ড প্রবাসী ফুটবলার। কারণ ইউরোপের কোন দেশের বয়সভিত্তিক মূল দলে খেলা, সেদেশের শীর্ষ লিগে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কেউ এর আগে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আসেনি।

তারিক সর্বশেষ খেলেছেন ফিনল্যান্ডের ক্লাব ইলভেস টেম্পেরের হয়ে। এই ক্লাবটা কত বড় সেটা বোঝাতে একটা তথ্যই যথেষ্ট, ২০১৯ সালেও তারা হয়েছে ফিনিশ কাপ চ্যাম্পিয়ন। মোটামুটি নিয়মিতই তাঁরা খেলে উয়েফা ইউরোপা লিগে।

ফিনল্যান্ডের ক্লাব ইলভেস টেম্পেরের একাডেমিতে থাকাকালীন অন্যতম সেরা প্রতিভাবান ভাবা হতো তাকে। ইউরোপীয় ফুটবলের রঙিন ক্যারিয়ার ছেড়ে তিনি খেলতে এসেছেন ফুটবলের তলানীতে থাকা বাংলাদেশের হয়ে। রীতিমত উয়েফা ইউরোপা লিগে বাছাইপর্ব খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। ভাবা যায়! বাংলাদেশি রক্ত আছে, এমন কারো এই অভিজ্ঞতা আর কখনো হয়নি।

এই ফুটবলারের সামনে ছিল উজ্জ্বল ও বর্নিল ক্যারিয়ারের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা। তারিকের সামনে ছিলো ইউরোপের বড় আসরে খেলার এক রঙ্গিন হাতছানি! হয়তো সেই সুযোগও আসতো। কিন্তু আপাতত সেই সম্ভাবনার দরজা বন্ধ করে দিয়ে তারিক যোগ দিয়েছেন তার পিতৃভূমি বাংলাদেশের ক্লাব বসুন্ধরা কিংসে। কারন বাংলাদেশকে নিয়েই এখন তাঁর স্বপ্ন।

ফিনল্যান্ডের সাথে তুলনা করলে এখানকার আবহাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ তারেকের জন্য। ডেনমার্ক থেকে আসার পর শুরুতে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছিল জামালকে, সেটা হলো এদেশের আবহাওয়া। ফিনল্যান্ড থেকে আসা তারিকের কাছেও বাংলাদেশের আবহাওয়াটা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যত দ্রুত এই আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন ততই মঙ্গল বাংলাদেশের।

জামাল ভুইয়ার তুলনায় তারিক কাজীর খেলোয়াড়ি জীবন বৃত্তান্ত অনেক ভারী। তারিক খেলেছেন ফিনল্যান্ডের অনূর্ধ্ব- ১৭, অনূর্ধ্ব-১৮ ও অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে। ১৯ বছর বয়সী তারিক খেলেন রাইট ব্যাক পজিশনে। চলতি বছর বাতিল হওয়া বাংলাদেশ লিগে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে দুইটি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। এবং তাতেই নজর কাড়েন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ইংলিশ কোচ জেমি ডে এর।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে জায়গা পেয়ে যান। হয়তো সুযোগ পেয়ে যেতেন মুল স্কোয়াডেও কিন্তু ইনজুরির কারনে নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। হয়ত খুব সহসাই তাকে দেখা যাবে লাল-সবুজ জার্সিতে।

ফিনল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলা এক ফুটবলারের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই। শুধু দেখার অপেক্ষা বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে কতটা দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারেন তিনি। এর ওপরেই নির্ভর করছে তাঁর স্বপ্ন পূরণ!

তবে যে স্বপ্নের পেছনে ছুটছেন তারিক, তাঁর সেই স্বপ্নটা পূরণ হোক, এ আশাটা সকল বাংলাদেশি ফুটবল সমর্থকদের! তারিকের সবকিছুতে তুলনায় চলে আসেন জামাল ভুঁইয়া। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জামাল থেকেও বড় স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা তারিক কাজীকে নিয়ে! তারিক কি পারবেন এর প্রতিদান দিতে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link