বিরাট কোহলি অধিনায়কত্বের দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে যেন অধিনায়কদের আসা যাওয়া চলছে ভারতীয় ক্রিকেটে। চলতি বছরে সাতজন ক্রিকেটারকে অধিনায়কের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। বিরাট কোহলির পর তিন ফরম্যাটে দায়িত্ব নিয়েছিলেন রোহিত শর্মা।
কিন্তু বিভিন্ন কারণ মিলিয়ে রোহিত ছাড়াও লোকেশ রাহুল, ঋষাভ পান্ত, হার্দিক পান্ডিয়া, জাসপ্রিত বুমরাহকে টস করতে দেখা গিয়েছে। আবার সম্প্রতি শিখর ধাওয়ানকে ওয়ানডে সিরিজের অধিনায়ক করেই দল ঘোষণা করেছে ভারত জাতীয় দলের নির্বাচকরা। অবশ্য বাজে পারফরম্যান্স কিংবা কোন বিশেষ কোন কারনে এমন অস্থিতিশীল অবস্থা দিয়ে যাচ্ছে না ভারত জাতীয় দল।
অনিবার্য কারণ বশত বাধ্য হয়েই এমনটা করতে হচ্ছে নীতি-নির্ধারকদের। এই যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সাদা বলে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন রোহিত শর্মা কিন্তু সেসময় ইনজুরিতে পড়ায় সেই দায়িত্ব পালন করতে হয় সহ-অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে। কিছুদিন পরে ঠিক একই কারনে খেলা থেকে বিরতি নিতে হয় লোকেশ রাহুলকেও।
ফলে টি-টোয়েন্টিতে একবার ঋষাভ পান্ত এবং একবার হার্দিক পান্ডিয়াকে অধিনায়ক করেছিল ভারত। সর্বশেষ ভারত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছিল জাসপ্রিত বুমরাহের নেতৃত্বে। ম্যাচের আগমুহূর্তে রোহিত শর্মা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় টস করতে এসেছিলেন বুমরাহ। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রোহিতকে বিশ্রাম দিয়ে নতুন অধিনায়ক করা হয়েছে শিখর ধাওয়ানকে।
ভারত ছাড়াও অধিনায়কত্ব নিয়ে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছে আরো কয়েকটি দেশ। সেসব নিয়ে আজকের আয়োজন।
- অস্ট্রেলিয়া (২০২১): ছয় অধিনায়ক
গত বছরের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া ঘরের মাঠে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিটি ভারতের কাছে হেরে গিয়েছিল। আর সেটিই ছিল অধিনায়ক হিসাবে টিম পেইনের শেষ সিরিজ। সে বছরের অ্যাশেজের শুরুতে নানাবিধ বিতর্কের জেরে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। এরপর প্যাট কামিন্সকে টেস্ট দলের অধিনায়ক করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। আর তার নেতৃত্বেই ইংল্যান্ডকে ৪-০ ব্যবধানে পরাজিত করেছিল ক্যাঙ্গারুরা।
কিন্তু করোনা আতঙ্কে পরে তিনি একটি টেস্ট মিস করেন। এবং সেই টেস্টে স্টিভেন স্মিথকে তিন বছরের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্বের সুযোগ দেয়া হয়। আবার সাদা বলের খেলায় জুলাই মাসে নিয়মিত অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের হাঁটুতে চোট পাওয়ায় কিপার ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আবার আগস্টে বাংলাদেশ সফরে ম্যাথু ওয়েডকে অধিনায়ক করে দল ঘোষণা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে অ্যারন ফিঞ্চের অধিনায়কত্বে।
- শ্রীলঙ্কা (২০১৭): সাত অধিনায়ক
এক বর্ষপঞ্জিকায় সাতজন ক্যাপ্টেনের ঘটনা প্রথমবার ঘটেছিল শ্রীলঙ্কাতে। পাঁচ বছর আগে অধিনায়কত্ব নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল দলটিকে। শ্রীলঙ্কার বছর শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সফর দিয়ে। তাদের নিয়মিত অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস দুটি টেস্ট এবং দুটি টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দেন কিন্তু পরবর্তীতে ইনজুরির কারণে পাঁচমাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় তাকে।
এরপর দিনেশ চান্দিমাল একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজে অধিনায়কত্ব করেন এবং ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলেন। কিন্তু আবার ওয়ানডেতে উপুল থারাঙ্গার স্থলাভিষিক্ত হয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দেন৷ ফলে শ্রীলঙ্কা সীমিত ওভারে থারাঙ্গার সাথে অটল থাকে। কিন্তু ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলাকালীন শ্রীলঙ্কার স্লো ওভার রেটের জন্য থারাঙ্গাকে নিষিদ্ধ করা হলে, ম্যাথুস পুনরায় দলের নেতৃত্বে ফিরে আসেন।
তবে শ্রীলঙ্কা জিম্বাবুয়ের কাছে ঘরের ওয়ানডে সিরিজ ২-৩ ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পর তিনি তিনটি ফরম্যাট থেকেই পদত্যাগ করেন। তাই চান্দিমালকে সীমিত ওভারে এবং নতুন টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে থারাঙ্গাকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। আবার এর পাশাপাশি লাসিথ মালিঙ্গা এবং চামারা কাপুগেদেরাও একটি করে ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বছরের শেষদিকে থিসারা পেরেরাকে শ্রীলঙ্কার সপ্তম অধিনায়ক করা হয়েছিলেন।
- ইংল্যান্ড (২০১১): ছয় অধিনায়ক
২০১১ সালের শুরুতে অ্যান্ড্রু স্ট্রসের নেতৃত্বে অ্যাশেজে ঐতিহাসিক ৩-২ ব্যবধানে জেতে ইংল্যান্ড। এরপর টি-টোয়েন্টিতে অ্যান্ড্রু স্ট্রসের বিশ্রাম কারণে অধিনায়কত্ব দেয়া হয় পল কলিংউডকে। বছরের শেষের দিকে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ার পর স্ট্রস ওয়ানডে অধিনায়কত্ব সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে মনোনিবেশ করেন।
তখন থেকেই মূলত ইংল্যান্ডের নির্বাচকরা দুই ফরম্যাটে আলাদা অধিনায়ক নির্বাচন করার যুগে প্রবেশ করে। স্ট্রস দায়িত্ব ছাড়ার পরে অ্যালিস্টার কুক এবং স্টুয়ার্ট ব্রডকে যথাক্রমে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক করা হয়েছিল।
আবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে কুককে বিশ্রাম দেওয়া হলে ইয়ন মরগান ইংল্যান্ডের বছরের পঞ্চম অধিনায়ক হন। এবং ব্রডের ইনজুরির কারনে একই বছর তিনটি টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন গ্রায়েম সোয়ান।
- জিম্বাবুয়ে (২০০১): ছয় অধিনায়ক
বর্তমান সময়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের পিছনের সারির দল হলেও একুশ শতাব্দীর শুরুর দিকে তারা ছিল অন্যতম পরাশক্তি। সেসময় তাদের নেতৃত্বে কিছুটা অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। হিথ স্ট্রিক ২০০১ সালের প্রথম ছয় মাস জিম্বাবুইয়ানদের নেতৃত্ব দেন, তার সময়কালে দলটি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ এবং ভারতের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্ট জিতেছিল।
কিন্তু বোর্ডের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেন। স্ট্রিকের আকস্মিক পদত্যাগের বিতর্কিত পরিস্থিতির কারণে গাই হুইটল প্রাথমিকভাবে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হোম ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য দলের নেতৃত্ব দিতে অস্বীকার করেছিলেন। ফলে গ্রান্ট ফ্লাওয়ার তাদের উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামেন, কিন্তু স্ট্রিক দ্বিতীয়বার অধিনায়কত্বে ফিরে আসার আগে আবার হুইটল জিম্বাবুয়ের হয়ে তিন ম্যাচে তৃতীয় অধিনায়ক হন।
জুলাই মাসে স্ট্রিককে আবার অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়, কিন্তু তিনি তার বোলিংয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য তিন মাস পরে পুনরায় পদত্যাগ করেন। এরপর লেগস্পিনার ব্রায়ান মারফি শারজাহতে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য টস করতে আসেন। এছাড়া বছরের শেষদিকে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল এবং স্টুয়ার্ট কার্লাইল বছরের দলের অধিনায়ক নিযুক্ত হন।