২০২৩ বছরজুড়েই দলগুলোর পরিকল্পনায় ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ। প্রায় প্রতিটা দলই তার ওয়ানডে ক্রিকেটে জোর দিয়েছিল বেশি। তবে এসবের মাঝেও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কিন্তু থেমে থাকেনি। বছরের শেষ দিন অবধি মাঠে গড়িয়েছে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
এই বছরে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে পারফরমারদের কমতি নেই। পারফরমারদের নিয়ে রীতিমত একটা একাদশ সাজিয়ে ফেলা সম্ভব। তেমনই এক একাদশে ভারতীয় খেলোয়াড়দের দাপট থাকছে স্বাভাবিকভাবেই। তবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাও ঠাই করে নিচ্ছেন সেই একাদশে।
- মোহাম্মদ ওয়াসিম (সংযুক্ত আরব-আমিরাত)
সহযোগী দেশ নিজেদের প্রমাণ মঞ্চ হিসেবেই খুঁজে নেয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে। তেমনই এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে দূর্দান্ত এক সময় পার করেছেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই ওপেনার ক্যারিয়ার সেরা এক বছর কাটিয়েছে বললেও ভুল বলা হয় না। প্রায় ১৬৩.১৫ স্ট্রাইকরেটে তিনি ব্যাটিং করেছেন। ২১ ম্যাচে তার সংগ্রহ ৮০৬ রান।
- যশস্বী জসওয়াল (ভারত)
ভারতের তরুণ তুর্কি যশস্বী জসওয়াল নজর কেড়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে। ২০২৩ সালেই তার অভিষেক হয়েছে টি-টোয়েন্টিতে। ১৫ ম্যাচ খেলেই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন বা-হাতি এই ব্যাটার। প্রায় ১৫৯.২৫ স্ট্রাইকরেটে ৪৩০ রান করেছেন জসওয়াল। অভিষেকের বছরেই টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ভারতের এই টপ অর্ডার ব্যাটার।
- সুরিয়াকুমার যাদব (ভারত)
আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাংকিং অনুযায়ী এক নম্বর ব্যাটার সুরিয়াকুমার যাদব। বছরজুড়েই তার অভাবনীয় ব্যাটিংয়ের মাতিয়ে রেখেছিলেন দর্শকদের। প্রায় ৪৮.৮৬ গড়ে রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। প্রায় ১৫৬ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে দুই দফা ছুঁয়ে দেখেছেন তিন অংকের ‘ম্যাজিকাল ফিগার’। ৫ বার হাফ সেঞ্চুরি করা সুরিয়া রান করেছেন ৭৩৩।
- নিকোলাস পুরান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
অধিনায়কত্ব ছেড়ে বরং ভালই করেছেন নিকোলাস পুরান। বিধ্বংসী এই ব্যাটার সেটার সুফল পেয়েছেন ২০২৩ সালে। মোটে ১৩ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ব্যাট চলেছে তার ১৬২.৭১ স্ট্রাইকরেটে। দুইটি ফিফটির কল্যাণে ৩৮৪ রান করেছেন ক্যারিবিয়ান এই ব্যাটার। ধুকতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যেন একাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
- সিকান্দার রাজা (জিম্বাবুয়ে)
সিকান্দার রাজা যেন সত্যিকার অর্থেই জিম্বাবুয়ের রাজা। অন্তত এই বছর টি-টোয়েন্টি-তে তিনি তেমনটিই প্রমাণ করেছেন। ১২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন বছরজুড়ে। রান করেছেন ১৫০ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে। ব্যাট হাতে ৫১৫ রান করা রাজা মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন বল হাতেও। ১৭ খানা উইকেট পুরেছেন নিজের পকেটে।
- রিঙ্কু সিং (ভারত)
দলের জয় নিশ্চিত করে ম্যাচ শেষ করে আসার দারুণ দক্ষতা রয়েছে রিঙ্কু সিংয়ের। আইপিএলের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নজর কেড়েছেন তিনি। ভারতের হয়ে অভিষেকটা হয়েছে তার এই বছরই। ১২টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। রান করেছেন ২৬২। তবে ১৮০.৬৬ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করা রিঙ্কু নিজের ফিনিশার রোলটি পালন করেছেন যথাযথভাবেই।
- সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
২০২৩ সালে খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি ‘নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার’ সাকিব আল হাসান। মোটে ৮ ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। তাতেই বরাবরের মত বেশ প্রভাব ফেলেছেন সাকিব। ১৩৩.৬৫ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন সাকিব। ১৩৯ রান করার পাশাপাশি ১২টি উইকেট নিজের করে নিয়েছেন সাকিব। তবে ইনজুরির কারণে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেননি তিনি।
- মার্ক অ্যাডায়ার (আয়ারল্যান্ড)
মার্ক অ্যাডায়ার অবশ্য একজন বোলিং অলরাউন্ডার। তবে ব্যাটের তুলনায় বল হাতেই বেশি কার্য্যকর ছিলেন তিনি গোটা ২০২৩ সালজুড়ে। ১৬ ম্যাচে ২৬ উইকেট শিকার করেছেন ডানহাতি এই অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে রানও করেছেন টুকটাক। প্রায় ১৩৩ স্ট্রাইকরেটে ১৬১ রান করেছেন আইরিশ এই ক্রিকেটার।
- রবি বিষ্ণয় (ভারত)
বর্তমান ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে যেকোন একাদশে একজন লেগ স্পিনার যেন অবধারিত। এই একাদশে সেই স্থানটি পূরণ করবেন ভারতের তরুণ লেগি রবি বিষ্ণয়। আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি ইতোমধ্যেই। ১১ ম্যাচে ভারতের জার্সিতে মাঠে নেমে শিকার করেছেন ১৮টি উইকেট। বল হাতে বেশ ভুগিয়েছেন তিনি প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের।
- আলজারি জোসেপ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
২০২৪ আইপিএল নিলামে রীতিমত কাড়াকাড়ি হয়েছে আলজারি জোসেপকে নিয়ে। ক্যারিবিয়ান এই বোলার যে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সার্কিটে। ৯ ম্যাচ খেলেছেন তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে। তাতেই ১৬টি উইকেট জমা পড়েছে তার নামের পাশে। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় তার স্ট্রাইকরেট। ডানহাতি এই পেসার প্রায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল ছুড়ে উইকেট তুলেছেন ১২.১ স্ট্রাইকরেটে।
- তাসকিন আহমেদ (বাংলাদেশ)
ইনজুরির বাঁধা থাকার পরও তাসকিন আহমেদ পারফরম করেছেন ২০২৩ সালে। টি-টোয়েন্টিতে মোটে ৮ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তবুও ঝলক দেখিয়েছেন তার বোলিংয়ের। ১৬টি উইকেট নিজের করে নিয়েছেন। মাত্র ১১.২ স্ট্রাইকরেটে উইকেট শিকার করেছেন। পাশাপাশি রান দেওয়াতেই দেখিয়েছেন কৃপণতা। মাত্র ৭.৩৬ ছিল তার ইকোনমি রেট।