শিরোনাম দেখে হয়তো কারো মুখ ছুটতে পারে। কেউ বা পাগলের প্রলাপ বলে এড়িয়ে যেতেও চাইবেন। তবে, আপনি যদি ক্রিকেটের ভক্ত হন, কিংবা নিদেনপক্ষে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) খবরাখবর রাখেন, তাহলে এর মর্ম আপনি জানেন। সত্যিই আইপিএলে এখন চলছে ‘কার্তিক’ মাস।
কিন্তু, বাংলা মাসের হিসাব তো অন্যরকম। মাত্রই নতুন বছর শুরু হল। এই বৈশাখের গরমে কোথা থেকে কার্তিক মাস আসলো? আকাশটা তো নীল নয়, তারপরও কেন শরৎকালের আলাপ চলছে? ধৈর্য্য ধরুন, বলছি।
বাংলা বর্ষ অনুযায়ী বৈশাখ মাস হলেও আইপিএল জুড়ে এখন কার্তিক মাস। এর নেপথ্যে আছেন দীনেশ কার্তিক। আইপিএলে তিনি বরাবরই দাপুটে। তবে, এবারে তাঁর দাপটটা যেন অন্যরকম রং পেয়েছে।
২০২২ সালের চলমান আইপিএল আসরে ৬ ম্যাচ খেলেছেন। আউট হয়েছেন মাত্র একবার। রান করেছেন ১৯৭। গড়ও তাই। তবে স্ট্রাইক রেট ২১০! বোলারদের ওপর তিনি যে রীতিমত স্ট্রিম রোলার চালিয়েছেন সেটা আর না বলে দিলেও চলে।
এর সর্বশেষ তোপটা গেল বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমানের ওপর দিয়ে। দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ইনিংসের ১৮ তম ওভারে দীনেশ কার্তিক তুলেছেন ২৮ রান। প্রতিটা বলেই হয় বাউন্ডারি কি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। ওভার শুরু হয় পরপর তিন বলে তিনটি বাউন্ডারি দিয়ে।
এরপর তিনি আরো এক কাঠি সরেষ, পরপর দুই বলে দু’টি ছক্কা। শেষ বলে আরো একটি চার। মোট ২৮ রান। মুস্তাফিজ তাই যদি এই আইপিএলে আর ফিরে আসতে না পারেন আদৌ – তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
অনেকটা যেন, চার বছর আগের নিদাহাস ট্রফি ফাইনালের স্মৃতিটা ফিরে আসলো মুম্বাইয়ের ওয়াঙখেড়ে স্টেডিয়ামে। সেবার ফাইনালের ১৯ তম ওভারে বাংলাদেশের বিপক্ষে একাই ২২ রান তুলেছিলেন কার্তিক। এবার ছয় রান বেশি করলেন। সেবার পেসার রুবেল হোসেন তাও একটা ডট বল সহ বাউন্ডারিহীন দু’টো ডেলিভারি পেয়েছিলেন, মুস্তাফিজের কপালে সেটাও জুটলো না।
বাংলাদেশ দল বরাবরই দীনেশ কার্তিকের প্রিয় প্রতিপক্ষ। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের যে একটা সেঞ্চুরি সেটাও কার্তিক পেয়েছেন এই বাংলাদেশের বিপক্ষেই। ২০০৭ সালের মে মাসে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে করেছিলেন ১২৯ রান।
মানে, সেটা হল পাক্কা ১৫ বছর আগের কথা। দীনেশ কার্তিকের অভিষেকের বছর তিনেক পরের কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হিসেব করলে দীনেশের ক্যারিয়ারের বয়স ১৫ বছর। ২০০৪ থেকে ২০১৯। তিন বছর হল তিনি জাতীয় দলের বাইরে। মাঝের ১৫ বছরেও যে যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন – সেটা তাঁর নিন্দুকও দাবি করবে না কখনও। মোটে ২৬ টি টেস্ট, ৯৪ টা ওয়ানডে আর ৩২ টা টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি ভারতের হয়ে।
খেলবেন কি করে? উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে তখন ভারতের সর্বেসর্বা হলেন স্বয়ং মহেন্দ্র সিং ধোনি। এর ফাঁকতালেই এই ক’টা ম্যাচে কার্তিকের সুযোগ মিলেছিল। সামর্থ্যটাও তিনি এই অল্প সময়েই যখন যা পেরেছেন দেখিয়ে দিয়েছেন।
তবে, এই সময়ে এসে সম্ভবত দীনেশ কার্তিকের আরেকটা সুযোগ প্রাপ্য। অন্তত, মিডল অর্ডারে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দীনেশের মত মারকুটে ব্যাটার ভারতবর্ষে আর নেই। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে কার্তিকের বয়স এখন ৩৭ ছুঁইছুই। কিন্তু, আধুনিক ক্রিকেটে বয়স নিয়ে রক্ষণশীলতার জায়গাটা কোথায়! দুয়ারে কড়া নাড়ছে আরেকটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ভারতের নির্বাচকরা দেখছেন তো কার্তিককে!