পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকা দুই দলের ম্যাচ। একদম উত্তাপহীন এক ম্যাচ হবে – সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। তবে, দু’টি দল মাঠে নামার পর থেকে বাতাসে যেন একটা কথাই ভাসছিল – ঢাকা বা চট্টগ্রাম, দুদলেরই যেন লড়াই করার সামান্যতম ইচ্ছাটাও মরে গেছে। জয়ের ক্ষুধাটাও যেন নেই।
খালি চোখে অবশ্য ম্যাচটা বেশ উত্তেজনাপূর্ণই ছিল। স্কোর কার্ড বলবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স আর ঢাকা ডমিনেটর্স এর মধ্যকার লো স্কোরিং ম্যাচে লড়াইটা হয়েছে বেশ। বোলিং নৈপুণ্যে শেষ পর্যন্ত ঢাকা ডোমিনেটর্সের বিপক্ষে ১৫ রানের জয় পেয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
অবশ্য স্কোরকার্ড সব সময় সত্যি কথা বলে কি! অদ্ভুত একাদশ, বাজে রকমের ফিল্ডিং মিস, ব্যাখ্যাতীত ক্যাচ মিস, রান করার অনীহা, জায়গা মত বল রাখতে না পারার নিয়মিত ব্যর্থতা – সমালোচনা করার মত অনেক কিছুই আছে এই ম্যাচে।
মঙ্গলবার দিনের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তবে শুরুটা মোটেও ভালো করেনি চট্টগ্রাম দল। দলটির হয়ে এদিন রান পাননি টপ অর্ডারের কোনো ব্যাটার। মেহেদী মারুফ থেকে উন্মুক্ত চাঁদ, আফিফ কেউই ব্যাটে রান পাননি।
এক মেহেদী মারুফ দৃষ্টিকটু ব্যাটিং করে ২১ বলে করলেন আট রান। অবশ্য পরে একটা দর্শনীয় ক্যাচ বলেছেন, যাকে ধারাভাষ্যকাররা ‘ক্যাচ অব দ্য টুর্নামেন্ট’ও বললেন। তবে তাঁর ব্যাটিংটা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।
মিডল অর্ডারে বলার মতো ৩০ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন উসমান খান। অবশ্য আসর জুড়ে ওপেনিং কিংবা টপ অর্ডারে খেলা উসমান মিরপুরে এবার ব্যাটিংয়েই নামেন পাঁচ নম্বরে। আর লোয়ার অর্ডারে এসে জিয়ার ৩৪ রানের ইনিংস মান বাঁচানো সংগ্রহের পথে এগিয়ে যায় চট্টগ্রাম।
নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেট সর্বসাকুল্যে ১১৮ রানের পুঁজি পায় চট্টগ্রাম। ওহ, এখানে একটু যোগ করা দরকার যে – জিয়া ব্যাটিংয়ে নামেন নয়ে, আর মৃত্যুঞ্জয় দশে। এই জিয়া জাতীয় দলে এক সময় ওপেনও করেছেন। চার উইকেট নিয়ে ‘ডেড রাবার’-এ জ্বলে ওঠেন আরাফাত সানি।
এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে নজর দেওয়া যাক। ১১৯ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ঢাকার শুরুটাও খুব ভাল হয়নি। অল্প রানের লক্ষ্যে রক্ষণাত্বক ভঙ্গিতে ব্যাট করার কৌশলই ঢাকার ইনিংসে কাল হয়ে দাঁড়ায়। সৌম্য সরকার দারুণ শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন। ১৬ বলে ২১ রানেই শেষ হয় তাঁর ইনিংস। জয়ের ক্ষুধা ওই একটু সৌম্যই দেখিয়েছেন। এরপরের অংশটা পুরোটাই অন্ধকার।
সৌম্য আউট হওয়ার পর ঢাকার ইনিংসের ভিত্তি গড়ার দায়িত্বটা আর কেউ নিতে পারেননি। টপ অর্ডারে খেলা বাকি দুই ব্যাটার আরিফুল হক, মামুন- দুজনই এ দিন ব্যর্থ হন। তারপরও নাসির হোসেনের ব্যাটে চড়ে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখছিল ঢাকা। কিন্তু নাসির আউট হওয়ার পর মোমেন্টাম পেয়ে যায় চট্টগ্রাম।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোসহ আস্কিং রান রেটের সাথে আর পরে পাল্লা দিতে পারেনি ঢাকা। তাই চট্টগ্রামের দেওয়া সহজ টার্গেটও পাড়ি দিতে পারেনি ঢাকা ডমিনেটর্স। শেষ পর্যন্ত ১৫ রানে ম্যাচটা জিতে নেয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। নির্ধারিত ২০ ওভারে ১০৩ রানে ইনিংস শেষ করে ঢাকা।
এ হার দিয়ে দু:স্বপ্নময় এক বিপিএল যাত্রা শেষ করল ঢাকা ডোমিনেটর্স। ১২ ম্যাচে মাত্র ৩ জয়ের বিপরীতে ১০ পরাজয়ের বিপিএল মিশন নিশ্চিতভাবেই ভুলে যেতে চাইবে নাসির হোসেনের দল। আসলে এই ম্যাচটাই ভুলে যেতে চাইবে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
ফিক্সিং বা স্পট ফিক্সিং বিপিএলের একদম ইতিহাসের সাথেই জড়িয়ে আছে। তাই, কোনো ম্যাচে একটু ‘এলোমেলো’ দেখলেই যেন সন্দেহবাতিক মন কেমন কেমন করে। আর এই ম্যাচটায় তো সন্দেহ করার মত অনেক উপাদানই আছে। তবুও প্রত্যাশা এটাই যে এই সন্দেহ সত্যি না হোক।