কোহলি বলেছেন, ‘আমি যখন টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়েছিলাম, তখন শুধু একজনের কাছ থেকে মেসেজ পেয়েছিলাম। তিনি হলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘অনেকেই টিভিতে আমাকে পরামর্শ দিতেন। তাঁদের অনেকের কাছেই আমার ফোন নম্বর আছে। অথচ কেউ একটু খোঁজও নেননি। সারা দুনিয়াকে সামনে রেখে পরামর্শ দিলে সেটার কোনো মূল্য নেই।’ অর্থাৎ কোহলির মতে তাঁকে এভাবে দুনিয়ার সামনে পরামর্শ না দিয়ে কেউ তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে উপদেশ ও সমর্থন দিতেন তাতে তিনি বেশি খুশি হতেন।
দীর্ঘদিন ভারতের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ও অন্যতম সফল অধিনায়ক ছিলেন তিনি। কিন্তু গত বছর টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর তিনি অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। তারপর তাঁকে ওয়ানডের দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়। এই বছর জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় সাথে টেস্ট সিরিজ হারের পর টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকেও সরে দাড়ান তিনি। ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে হঠাৎ দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে বেশ কঠিন একটি সময় পার করেছিলেন এই বিশ্বসেরা ব্যাটার। তাছাড়া সেই সময়টায় অফফর্মের জন্য নানবিধ সমালোচনার পাত্র তো হয়েছিলেনই।
কিন্তু কিছুতেই যেন কোহলির বক্তব্যকে সহজভাবে নিতে পারলেন না ভারতের কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার। বরং চটেছেন বেশ। এমনকি কোহলিকে পাল্টা বক্তব্য দিয়ে আক্রমণই করলেন যেন! হয়তো পূর্বে কোহলিকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে তিনিই সবচেয়ে বেশি আলোচনা- সমালোচনায় মুখর ছিলেন বলে কোহলির বক্তব্য তাঁরই গায়ে বিঁধলো। কোহলির বক্তব্যের জেরে গাভাস্কার বলেন, ‘ও ফোনে কিরকম বার্তার অপেক্ষায় ছিলো? অনুপ্রেরণা জোগানো বার্তা? কিন্তু ও তো নিজ ইচ্ছায় অধিনায়কত্ব ছেড়েছিল।’
তিনি আরও জানান কোহলি এখন দলে কেবল সাধারণ ক্রিকেটার হিসেবে আছেন। তাই এসব বাদ দিয়ে কোহলির উচিত হলো নিজের পারফরমেন্সের প্রতি জোর দেয়া। অবশ্য গাভাস্কার ১৯৮৫ সালে ‘বেনসন অ্যান্ড হেজেস ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ’ জেতার পর অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার পর তিনি যে কোহলির মতো কোন সহানুভূতিশীল বার্তা আশা করে বসে থাকেননি তাও উল্লেখ করতে ভুলেননি।
কিন্তু, এখানে ভাববার বিষয়টি হলো তিনি নিজে এমনটা করেননি বলে, তাই কোহলিকেও তাঁর মতো হতে হবে এমনটা তো নয়। গাভাস্কার সম্ভবত ভুলে গিয়েছিলেন নিজের আচরণ কখনো আদর্শমান হতে পারেনা অন্যের জন্য। অবশ্য ‘জেনারেশন গ্যাপ’ এর ফলে অধিকাংশ সাবেক ক্রিকেটারের মধ্যে এমন প্রবণতা দেখা যায়। আসলে একটা টাইম ফ্রেমে দাড়িয়ে থেকে, আরেক টাইম ফ্রেমে দাড়ানো নবীণের অবস্থানটা ঠিক মতো বুঝে ওঠাটা দায়।
তাই হয়তো মাঝেমধ্যেই বিরাটের সাথে সুনীল গাভাস্কারের মতের অমিল বেঁধে যায়, মনোমালিন্য তৈরি হয়ে যায়। একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে গাভাস্কারের উচিত অনুজদের প্রতি আরেকটু সদয় আচরণ করা, আরেকটু সমীচীন বক্তব্য দেওয়া। কারণ অগ্রজদের হেঁটে চলা পথেই, অদূর অভিষ্যতে এই অনুজরা হাঁটবে। নইলে ক্রিকেটীয় পরিবেশটা পরিচ্ছন্ন রাখাই যে দায় হবে!
চূড়ান্ত জবাবটাও দিতে অবশ্য পেরেছেন বিরাট কোহলি। তিন বছরের মত সময় অপেক্ষার পর সেঞ্চুরি পেয়েছেন। সেটাও এসেছে আবার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। হ্যাঁ, বিরাটরা এভাবেই জবাব দিয়ে থাকেন।