অসমাপ্ত লড়াইয়ের অসম্পূর্ণ গল্প

তবুও কোনো দল চাইলেও তাদের হেয় করতে পারবেননা, বরং এশিয়া কাপের মঞ্চে বড় বড় সব দল আফগানিস্তানকে সমীহ করেই মাঠের লড়াইয়ে নামে। এই সাফল্যই বা কম কিসে। তবে, আফগানরা সন্তুষ্ট নয়। তাঁদের এই লড়াই চলবে।

ক্রিকেটাঙ্গনে আফগানিস্তানের পথচলাটা খুব বেশিদিনের নয়। বলা যায়, আফগানিস্তানের ক্রিকেটীয় উত্থানটা যেন হুট করেই ঘটেছে। মূলত ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ কিংবা চলমান এশিয়া কাপের দিকে তাকালে করলে তাদের উন্নতিটা বেশ চোখে পড়ার মতো। এই দুই এশিয়া কাপের মঞ্চেই মাঠে নেমে শেষ অবধি সবটুকু দিয়ে যুদ্ধ করেছে তাঁরা। তাদের চেয়ে শক্তিশালী দলকে হারিয়ে জয়ও পেয়েছে। তবে, এশিয়া কাপ জয়ের যে স্বপ্ন সেই লড়াইয়ের পূর্ণতা আসেনি। আসেনি কাঙ্খিত সাফল্য।

তবুও কোনো দল চাইলেও তাদের হেয় করতে পারবেননা, বরং এশিয়া কাপের মঞ্চে বড় বড় সব দল আফগানিস্তানকে সমীহ করেই মাঠের লড়াইয়ে নামে। এই সাফল্যই বা কম কিসে। তবে, আফগানরা সন্তুষ্ট নয়। তাঁদের এই লড়াই চলবে।

অথচ, দলটার ক্রিকেট ইতিহাস খুব আগের কথা নয়। ১৯৯৫ সালে আফগানিস্তানের প্রথম ক্রিকেট বোর্ড গঠিত হয় এবং ২০০১ সালে প্রথম জাতীয় দল। ২০১৭ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ফলে সমস্ত বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে তাঁরা। নতুন যুগের নতুন এই আফগানিস্তানকে আগের মতো যেন তেন দল বলা যাবে না।

নিজেদের ক্রিকেটীয় উন্নতিতে পাওয়ার হিটার তৈরি করলো, আধুনিক টি- টোয়েন্টির সাথে তাল মিলিয়ে খেলতে পারার মতো ব্যাটার তৈরী হলো, বিশ্বসেরা স্পিনার তৈরী করলো। বাদবাকি ‘আফগানিস্তান রান তাড়া করে জেতার মতো দল নয়’ – প্রচলিত এই সমালোচনাকেও প্রমাণসহ মুছে দিলেন তাঁরা এবারের এশিয়া কাপের মঞ্চে। আর সেই প্রমাণটা গত কয়েকটা এশিয়া কাপ জুড়েই চলছে।

২০১৮ সালের এশিয়া কাপে গ্রুপ বি-তে আফগানিস্তান ছিলো বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সাথে। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তে অনুষ্ঠিত আফগানিস্তানের প্রথম ম্যাচটি ছিলো শ্রীলঙ্কার সাথে। সেই ম্যাচটিতে শ্রীলঙ্কাকে ৯১ রানের বিশাল ব্যাবধানে হারায় তাঁরা। তারপর ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখ বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিল তাঁরা। ম্যাচটিতে আফগানিস্তান ১৩৬ রানের বিশাল জয় পায়। আপনি নিশ্চয়ই ইতোমধ্যেই টের পাচ্ছেন আফগানিস্তানের শক্তিমত্তা।

২০১৮ সালের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের পাশাপাশি আফগানিস্তানও সুপার ফোরের তালিকায় নিজেদের নাম লেখায়। শ্রীলঙ্কা টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে যায়। সুপার ফোরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সাথে হেরে এবং ভারতের সাথে ম্যাচ টাই করে বিদায় নিয়েছিলো আফগানরা। মজার ব্যাপার হলো সবসময় সুপার ফোরের অন্যান্য দলগুলোর ফাইনাল ভাগ্য অনেকটা নির্ভর করে আফগানিস্তানের উপর। কিন্তু আফগানিস্তান একবারো ফাইনালের টিকিট কাটতে সমর্থ হয়নি আজও।

২০২২ সালের এশিয়া কাপেও চমক দেখিয়েছে আফগানিস্তান। ধারণা করা হচ্ছিল এবার ফাইনালের মুখ দেখার লক্ষেই টুর্নামেন্টে এসেছে তাঁরা।  কিন্তু এবারও বিধি বাম। গ্রুপ পর্বের লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সুপার ফোরে পৌঁছায় তারা। কিন্তু সুপার ফোরে পৌঁছানোর পর শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের সাথে হেরে সুপার ফোর থেকে বিদায় নিয়েছে তাঁরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়লাভের কারণে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ফাইনালের টিকিট কাটতে সক্ষম হয়েছে।

গত এশিয়া কাপ, এমনকি এই এশিয়া কাপ দুটোতেই আফগানিস্তান তাদের সবটুকু শক্তি নিংড়ে দিয়ে চেষ্টা করেছে। কিন্তু  দুর্ভাগ্যবশত সুপার ফোরের চোকাঠ পেরোতে পারেনি একবারও। স্বপ্ন ও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঠিক ফাইনালের আগেই হোঁচটটা বারবার খেতে হচ্ছে। একদিন হয়তো ভাগ্য সহায় হবে, একদিন ফাইনালের মঞ্চে বুক চিতিয়ে খেলবে আফগানরা। অন্তত যেভাবে নিজেদের তাঁরা শক্তিশালী দল হিসেবে পরিণত করছে, সেই দিনটি খুব বেশি দূরে হবেনা এইটুকু তো অনুমেয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...