ম্যাক অ্যালিস্টার, এক রূপকথার লেখক

ম্যাক অ্যালিস্টারের পরিবার স্কটল্যান্ডের গ্লেনকো এবং আয়ারল্যান্ডের ডোনাবেট থেকে অভিবাসিত। এই স্কটিশ-আইরিশ পরিচয় তার ব্যক্তিত্বে একটি বৈচিত্র্য এনেছে। যা তাকে দক্ষিণ আমেরিকার আবেগ এবং ইউরোপীয় শিকড়ের মিশ্রণে অনন্য করে তুলেছে।

ভাগ্য যেন বেশ সহায় হয়েছিল অ্যালিক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের ক্ষেত্রে। একটি ইনজুরি পুরো বদলে দিলো একজন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার। ২০২২ বিশ্বকাপের আগে ইনজুরিতে পড়েন লো সেলসো। তার অভাব পূরণের জন্যই দলে জায়গা পেয়ে গিয়েছিলেন ম্যাক অ্যালিস্টার। আর তারপর তো তিনি ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার হয়ে।

১৯৯৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার সান্তা রোসা শহরে জন্মগ্রহণ করেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। ফুটবল তাকে রক্তে বইছে, কারণ তার পরিবারেই ফুটবলের ঐতিহ্য গভীর। তার বাবা কার্লোস ম্যাক অ্যালিস্টার এবং চাচারা ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। তার দুই ভাই ফ্রান্সিস এবং কেভিনও ফুটবল খেলে থাকেন।

ম্যাক অ্যালিস্টারের পরিবার স্কটল্যান্ডের গ্লেনকো এবং আয়ারল্যান্ডের ডোনাবেট থেকে অভিবাসিত। এই স্কটিশ-আইরিশ পরিচয় তার ব্যক্তিত্বে একটি বৈচিত্র্য এনেছে। যা তাকে দক্ষিণ আমেরিকার আবেগ এবং ইউরোপীয় শিকড়ের মিশ্রণে অনন্য করে তুলেছে।

অ্যালেক্সিস তার পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স থেকে। তার দারুণ দক্ষতা এবং মাঠে তার বহুমুখী ভূমিকা দ্রুতই আন্তর্জাতিক স্কাউটদের নজরে আসে। ২০১৯ সালে তিনি ইউরোপে পদার্পণ করেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ অ্যালবিয়নের হয়ে যোগদান করেন এই মিডফিল্ডার। ২০২২-২৩ মৌসুমে তিনি ব্রাইটনের সেরা স্কোরার হন এবং ইউরোপা লিগে ক্লাবকে তুলে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ব্রাইটনের হয়ে তিনি মোট ৯৮ টি ম্যাচ খেলে ১৬ টি গোল করেছেন।

২০২৩ সালে ম্যাক অ্যালিস্টার লিভারপুলে যোগ দেন। লিভারপুলের মধ্যমাঠে অপরিহার্য খেলোয়াড় হিসেবে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। সম্প্রতি, টটেনহ্যামের বিরুদ্ধে তার একটি অসাধারন পারফরমেন্সের নমুনা আমরা দেখতে পেয়েছি। লিভারপুলের হয়ে তিনি ইতোমধ্যেই ৪৮টি ম্যাচ খেলে ৬টি গোল করতে সক্ষম হয়েছেন।

তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও মন্দ নয়। তিনি আর্জেন্টিনার মূল দলের হয়ে মোট ৩৬টি ম্যাচ খেলেছেন এবং গোল করেছেন ৩টি। তিনি দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ টা হয়তো পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে বলা মুশকিল। তার খেলায় অবদান পরিসংখ্যান দ্বারা বোঝানো সম্ভব নয়। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ম্যাক অ্যালিস্টার ২০২২ সালের বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার সৃজনশীলতা এবং পরিশ্রম মাঝমাঠে ভারসাম্য আর গতির সমন্বয় ঘটায়।

তার ক্যারিয়ার সবেমাত্র উচ্চতার সিঁড়ি বাইতে চলেছে বলাই যায়। তবে ইতোমধ্যেই তার ঝুলিতে রয়েছে বেশ কিছু শিরোপা। উল্লেখযোগ্য একটি বিশ্বকাপ, একটি কোপা আমেরিকা, একটি ফিনালিসিমা এবং একটি ইংলিশ লিগ কাপ।

অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের এই গল্প শুধুমাত্র একজন ফুটবলারের সাফল্যের কথা নয়, এটি কঠোর পরিশ্রম, নম্রতা এবং সুযোগকে কাজে লাগানোর প্রমাণ। বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে প্রিমিয়ার লিগ, এবং এখন লিভারপুলের হয়ে তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স—সবই তার অসাধারণ দক্ষতা এবং মানসিকতার প্রতিচ্ছবি।

তবে এই গল্প এখানেই শেষ নয়। ২৬ বছর বয়সী ম্যাক অ্যালিস্টারের সামনে এখনও রয়েছে আরও অনেক অর্জনের সুযোগ। আর্জেন্টিনার হয়ে তার কিংবদন্তি হয়ে ওঠার যাত্রা এখনো চলছে। আর লিভারপুলের সমর্থকরা নিশ্চয়ই তার থেকে আরও বড় কিছু আশা করছেন।

ভবিষ্যতে, ফুটবল বিশ্বকে আরও কত বিস্ময় উপহার দেবেন ম্যাক অ্যালিস্টার, তা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকবে সবাই। কারণ তিনি নিজেই তার গল্পের লেখক। তার গল্পের পরবর্তী অধ্যায় হবে সাফল্য এবং গৌরবের আরেকটি উজ্জ্বল সংযোজন।

Share via
Copy link