রাত যতই গভীর হয়, চাঁদ কখনো কখনো আড়ালে চলে যায়। আলো হারিয়ে ফেলে, ঠিক যেমন বাবর আজম হারিয়ে ফেলেছেন ব্যাটের রাজকীয়তা। একসময় তাঁর ব্যাট কথা বলত, প্রতিপক্ষের বোলারদের কাঁপিয়ে দিত। পাকিস্তানের জয়ের গল্পগুলো লেখা হতো তাঁর রানের বন্যায়। কিন্তু আজ, সেই গল্প ফিকে হয়ে যাচ্ছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে বাবরের ব্যাট নীরব, তিনি ছায়ামানব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পাকিস্তানের টপ অর্ডারে।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে রান পাননি, দল যখন ট্রফির লড়াইয়ে, তখনও সেই একই গল্প। শুরুটা পেলেন, কিন্তু সেটাকে রূপ দিতে পারলেন না। ৩৪ বলে ২৯ রান—এটাই কি বাবর আজম? যে ব্যাটসম্যান একসময় পাকিস্তানের নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন, আজ তিনি যেন নিজের ছায়াও হয়ে উঠতে পারছেন না।
ভুল পথে হাঁটছেন বাবর? নাকি তাঁকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? বাবর আজমের ব্যর্থতার পেছনে কি কেবলই ফর্মহীনতা? নাকি পাকিস্তান দল ব্যবস্থাপনা তাঁকে এমন এক পথে হাঁটতে বাধ্য করছে, যেখানে তিনি স্বচ্ছন্দ নন?
ওয়ানডেতে বাবর আজম ওপেনিং করবেন — এই সিদ্ধান্ত যে হুট করে নেওয়া, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি তিন নম্বরের ব্যাটসম্যান। এখানে খেলেই তিনি আধুনিক সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটার হয়েছেন। অথচ, পাকিস্তান তাঁকে ওপেনার বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যেন একজন সম্রাটকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে সৈনিকের কাতারে দাঁড় করানো হচ্ছে।
ওয়ানডেতে বাবর আজম ওপেন করেছেন মাত্র দুইবার, সেটাও এক দশক আগে। তখনো কিছু করতে পারেননি। তাহলে এখন কেন তাঁকে নতুন করে পরীক্ষা করা হচ্ছে? বাবর কি পরীক্ষার বস্তু? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে কেন এই অহেতুক বিশৃঙ্খলা?
পাকিস্তান জানে, বাবর আজমই তাঁদের সেরা ব্যাটার। কিন্তু তাঁকে যদি নিজের স্বাভাবিক জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেটা কেবল তাঁর নয়, পুরো দলের জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বাবর একসময় ছিলেন পাকিস্তানের রানের স্তম্ভ। এখন সেই স্তম্ভ নড়বড়ে, আর সেটা শুধুই ব্যাটিং ফর্মের কারণে নয়—তাঁকে নিজের জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারণেও।
যদি বাবর আজমকে তিন নম্বরে ফিরিয়ে না আনা হয়, তাহলে পাকিস্তান নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনবে। ক্রিকেটে ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল সবসময় বড় হতে হয়, আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মঞ্চে সে মাশুল দিতে হলে পাকিস্তানকে পরবর্তী কয়েক বছর ধরে সেই ভুলের ভার বইতে হবে।
পাকিস্তান এখনো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু বাবর আজমের হারানো ফর্ম আর ভুল জায়গায় ব্যাটিং তাঁদের স্বপ্নভঙ্গের পূর্বাভাস দিচ্ছে। সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। পাকিস্তান কি তাদের সেরা ব্যাটসম্যানকে নিজের জায়গায় ফিরিয়ে আনবে? নাকি নিজের হাতে নিজের পতনের পথ তৈরি করবে?