Social Media

Light
Dark

রবিন উথাপ্পা, দ্য ওয়াকিং অ্যাসাসিন

সেবার ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। আগে ব্যাট করতে নেমে দিমিত্রি মাসকারেনহাসের শেষ ওভারের ৩০ রানের ঝড়ে ইংল্যান্ড শেষ করেছিল ৩১৭ রানে। বর্তমানে তিনশ রান তাড়া করে জেতা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হলেও ২০০৭ সালে এ ছিল পাহাড় ডিঙোনোর মতোন ব্যাপার।

ads

শচীন-সৌরভ ওপেনিং জুটিতে দারুণ শুরু করলেও ক্রমেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে থাকে ভারত। আড়াইশো পেরোনোর আগেই টপ অর্ডারের ম্যাচ ব্যাটসম্যান ফেরত গেলে মাঠে নামেন বাইশ বছরের এক তরুণ। অপরপ্রান্তে আসা যাওয়ার মিছিল চললেও একপ্রান্ত আগলে ছিলেন তিনি।

কখনো বোলারের মাথার উপর দিয়ে, আবার কখনো মিড অফ দিয়ে সীমানাছাড়া করে ম্যাচ জিতিয়ে যখন ফিরছেন তখন নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৩৩ বলে ৩৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস। ম্যাচজয়ী ইনিংস খেললেও আজো তার প্রসঙ্গে কেউ বলে না, সেই ম্যাচ হয়ে আছে শচীন-সৌরভের ম্যাচ হয়ে। তার পুরো ক্যারিয়ারটাই আসলে এমন, রান করলেও কখনো পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে পারেননি। তিনি রবিন উথাপ্পা, দ্য ওয়াকিং অ্যাসাসিন।

ads

ভারতের কর্ণাটকে জন্ম নেয়া উথাপ্পা ছোটবেলাতেই মজেছিলেন ক্রিকেটের প্রেমে। বাবা নিজেও খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, হকি আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন বহুদিন। সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকেই মাঠে যাতায়াত উথাপ্পার, কিন্তু হকির প্রেমে না পড়ে জড়িয়ে যান ক্রিকেট নামের মায়াজালে। কর্ণাটকের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম করার সুবাদে জাতীয় দলে ডাক পেতে খুব বেশি সময় নেননি। জাতীয় দলে খেলা শুরুর আগেই অবশ্য অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে এশিয়া কাপ জেতেন।

জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকেই প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন উথাপ্পা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ৯৬ বলে ৮৬ রানের দারুণ এক ইনিংস। ফলশ্রুতিতে সুযোগ পেয়ে যান ২০০৭ বিশ্বকাপ দলে, কিন্তু বিশ্বকাপটা দুঃস্বপ্নের মতো কাটে উথাপ্পার। গ্রুপপর্বের সবগুলো ম্যাচ খেলে করেন মাত্র ত্রিশ রান, ভারতও কাটায় তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ।

বাংলাদেশ আর শ্রীলংকার কাছে হেরে সেবার সুপার এইটের আগেই বিদায় নেয় তারা। তবে, টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উথাপ্পা ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল, ভারতকে বিশ্বসেরা খেতাব জেতাতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পাকিস্তানের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে করেন দারুণ এক ফিফটি।

তুলনামূলক ধারাবাহিক ভালো খেলা সত্ত্বেও ভারতের হয়ে নিয়মিত খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর। মূলত উইকেটরক্ষক পরিচয়টাই কাল হয়ে দাঁড়ায় উথাপ্পার জন্য। উইকেটকিপার এবং অধিনায়ক হিসেবে দলে মহেন্দ্র সিং ধোনির জায়গা ছিল অবধারিত, পাশাপাশি সুরেশ রায়না, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের উত্থান ক্রমেই উথাপ্পাকে সরিয়ে দিয়েছে জাতীয় দলের কক্ষপথ থেকে।

অথচ, তিনি ছিলেন জাতীয় দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এক ক্রিকেটার, কখনো নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভাবেননি। যখনই সুযোগ পেয়েছেন দলের কথা ভেবেছেন সবার আগে। রোহিত শর্মার ২৬৪ রানের সেই ম্যাচের কথাই মনে করে দেখুন না। বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে উথাপ্পার জন্য সেই ম্যাচটা ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ।

যখন ব্যাটিং এ নামলেন, তখনো ম্যাচের বাকি দশ ওভারের মতো। অন্য কেউ হলে চাইতেন নিজের রানটা বাড়িয়ে নিতে, নির্বাচকদের সুদৃষ্টি পেতে। কিন্তু উথাপ্পা কি করলেন, নিজে সিংগেল নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন রোহিতকে। যেন রোহিত তার ছন্দটা কাজে লাগিয়ে দলের রান নিয়ে যেতে পারেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। দলের জন্য এমনই নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন উথাপ্পা।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএল ক্যারিয়ার শুরু করলেও রবিন উথাপ্পাকে সবাই চেনেন কলকাতার খেলোয়াড় হিসেবেই। গৌতম গম্ভীরকে সাথে নিয়ে সামলেছেন নাইট রাইডার্সের ব্যাটিং অর্ডার, শিরোপা জিতিয়েছেন দুইবার। তবে উথাপ্পার সবচেয়ে বিধ্বংসী রূপটা দেখা গিয়েছিল ২০১২ আইপিএলে। সেবার ছয়শোর উপরে রান করে জিতেছিলেন আইপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ওরেঞ্জ ক্যাপের খেতাব, টানা আট ম্যাচে খেলেছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস।

শেষবার অবশ্য আইপিএলে মাঠে নেমেছিলেন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে।  ভারতের হয়ে সর্বশেষ ২০১৫ সালে মাঠে নামা উথাপ্পা ৪৬ ওডিয়াইতে করেছেন ৯৩৪ রান। তাতে কোনো সেঞ্চুরি না থাকলেও আছে ছয়টি ফিফটির মার। এছাড়া ১২ টি টোয়েন্টিতে করেছেন ২৫০ রান। প্রায় দুই যুগের ক্যারিয়ার শেষে রবিন উথাপ্পা অবসর নিয়ে ফেলেছেন।

আসলে উথাপ্পার মতো ক্রিকেটারদের ম্যাচ কিংবা রানসংখ্যা দিয়ে যাচাই করা সম্ভব না। তারা ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকেন খেলার প্রতি আত্ননিবেদনের জন্য, কর্ণাটকের সেই ছোট্ট শহর থেকে ইডেন গার্ডেন্সের যাত্রাটার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link