খুলনার হয়ে মাঠ মাতাবেন- এমনটাই প্রথমে জানা গিয়েছিল। কিন্তু বিপিএল খেলার জন্য যখন বিমানে চাপলেন তখন জানা গেল ভিন্ন এক তথ্য। খুলনা টাইগার্সের নাসিম শাহ হয়ে গেলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের। টুইট করে নিজেই একটা বার্তা দিয়ে রাখলেন, বাংলার মাটিতে গতির ঝড় তুলতে যেন একদম মুখিয়ে আছেন তরুণ এ পেস সেনসেশন।
অনুশীলনে বল করলেন স্বদেশী খুশদিল শাহর বিপক্ষে। আর তাতেই ঘটল এক দুর্ঘটনা। কুমিল্লার এখন পর্যন্ত সেরা তারকাকে গতির ঝড়ে বিধ্বস্ত করলেন। খুশদিলের হাত থেকে ঝরল রক্ত। আর তাতেই কুমিল্লার ম্যানেজমেন্টে নাসিম শাহ্কে ভেড়ানোর উচ্ছ্বাসের আড়ালে রক্তাক্ত খুশদিলকে নিয়ে আশঙ্কার এক মেঘ এসে ঘিরে ধরলো।
কুমিল্লার সে আশঙ্কা পরে ঠিকই উবে গিয়েছে। ঢাকা ডমিনেটর্সের বিপক্ষে খুশদিল, নাসিম শাহ্- দুজনকেই খেলাতে পেরেছেন টিম ম্যানেজমেন্ট। যথারীতি খুশদিল দ্যুতি ছড়িয়েছেন ব্যাটে, বলে- দুই ইউনিটেই। তবে এ ম্যাচে আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন নাসিম শাহ্। বিপিএলের অভিষেকে কেমন করবেন নাসিম- এমন প্রশ্ন জাপটে ধরেছিল সমর্থকদের মাঝেও।
টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা সমর্থক, কাউকেই হতাশ করলেন না নাসিম শাহ্। দুর্দান্ত বোলিং করলেন। সেটাকে শুধু ‘দুর্দান্ত’ বিশেষণে সীমাবদ্ধ রাখলে বড্ড ভুল হয়। ঢাকার ব্যাটারদের বিপক্ষে নিজের ২৪ বলেই যেন একেকটা গোলা ছুঁড়লেন।
প্রথমে শুরু করলেন মিজানুর রহমানকে দারুণ এক বলে স্ট্যাম্প ছত্রখান করে। এরপর একে একে তুলে নিয়েছেন আরো ৩ টি উইকেট। দিনশেষে নিজের বোলিং ফিগার রেখেছেন ১২ রানের ৪ উইকেট প্রাপ্তিতে।
নিজের করা তৃতীয় ওভারে একবার হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন নাসিম শাহ্। মুক্তার আলীকে উইকেটের পিছনে থাকা লিটন দাসের কাছে ক্যাচ বানিয়ে শুরু, এরপর আমির হামজাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে হ্যাটট্রিকের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান নাসিম।
তবে তাসকিন পরের বলটায় আর তা ঘটতে দিলেন না। কিন্তু তাতে কী! ততক্ষণে নিজের ঝুলিতে ৪ উইকেট নেওয়া হয়ে গিয়েছে নাসিম শাহ্র। সোনায় মোড়ানো অভিষেক বলতে যেমন বোঝায়, বিপিএলের অভিষেকে ঠিক তেমনটাই করে দেখালেন নাসিম শাহ্।
বিপিএল-এ আসার আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ওয়ানডে ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন নাসিম। এর মধ্যে একটি ফাইফারও পেয়েছিলেন। করাচিতে নাসিম যেখানে শেষ করেছিলেন ঢাকার মাটিতে এসে ঠিক যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন তিনি। বল হাতে আগ্রাসনের দিনে কুমিল্লাও পেয়েছে বড় জয়ের দেখা। কুমিল্লার দেওয়া ১৬৫ রানের লক্ষ্যে নাসিম শাহ্র দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১০৪ রানেই থেমে যায় ঢাকার ইনিংস।
শুরুটা দুর্দান্ত হলো। ওয়ানডে, টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট- সব ফরম্যাটেই চেনা ছন্দে আছেন নাসিম শাহ্। সেটা এবার টেনে আনলেন বিপিএলেও। প্রমাণ করে দিলেন, নিজের সেরা দিনে একাই গুড়িয়ে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে।
নাসিমের এমন রূপ সামনের ম্যাচ গুলোতে অব্যাহত থাকলে ‘নাসিম শাহ্’ নামক এক আতঙ্কের সামনেই পড়তে যাচ্ছে বিপিএলের বাকি দলগুলো। আর তাতে দলগুলোর মুখ থুবড়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।