১১২০ দিনের ‘সাধনা’

১০ নভেম্বর ২০১৮। তিন বছর আগেই সেই দিনটাতে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন খালেদ আহমেদ। এরপর কেটে গেছে তিনটি বছর। মাঝে নানারকম সব ইনজুরিতে লম্বা সময় মাঠের বাইরেও ছিলেন। তবুও বিসিবি খালেদের উপর থেকে ভরসার হাত সরিয়ে নেয়নি কখনো। একজন টেপ টেনিস বোলার থেকে টেস্ট ক্রিকেটার হওয়ার যাত্রার পুরোটায় পাশে ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। তবে তাঁর থেকে যে উইকেট প্রাপ্তির আশা, সেই আশা খালেদ পূরণ করলেন আজ বাবর আজমের উইকেট নিয়ে।

ঠিক ১১২০ দিনের ক্রিকেট সাধনা। প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলার পর থেকে আজকের দিন পর্যন্ত এই হিসেব। একটা টেস্ট উইকেট পেতে খালেদ সময় নিলেন গুণে গুণে ১১২০ দিন। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে খেলেছেন দুটি টেস্ট। সেখানে বোলিং করেছেন মোট ৬০ ওভার। তবুও ঝুলিতে ছিল না খালেদের জন্য সোনার হরিণ হয়ে উঠা একটা উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একটা উইকেট পাওয়ার জন্য কেউ এত বেশি বোলিং করেছেন কিনা সেটা খুঁজে বেশ করাও বেশ কঠিন কাজ।

সেই গবেষনার কাজে আপাতত যাচ্ছিনা। এখন বরং খালেদ আহমেদের টেস্ট ক্রিকেটার হয়ে উঠার গল্পে মনোযোগ দেয়া যাক। সিলেটে টেপ টেনিস বলে ক্রিকেট খেলে সময় কাটছিল তাঁর। বন্ধুদের সাথে মজার ছলে ক্রিকেট খেলাটাকে বেশিদিন চালিয়ে যেতে দেননি খালেদেরই বন্ধু ইমরান আলী এনাম। তিনি খালেদকে নিয়ে যান সিলেটের রানা মিয়ার ক্রিকেট একাডেমিতে। সেখানেই শুরু হয় খালেদের আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট দীক্ষা।

টেপ টেনিসের মত ক্রিকেট বলেও নিজেকে খানিক প্রমাণ করতে শুরু করলেন। কয়েকবছর বাদে ২০১৫ সালে সিলেট ডিভিশন দলেও সুযোগ পেয়ে যান। সেখানে সিলেটের আরেক পেসার এবাদত হোসেনের সাথে বোলিং জুটি গড়ে তোলেন খালেদ আহমেদ। এখন বছর পাঁচেক বাদে এসে এখন দুইজন কাজটা করছেন বাংলাদেশের হয়ে। সিলেটের ক্রিকেটের জন্য গর্বের কারণই বটে।

সে যাই হোক, সিলেট বিভাগের হয়ে যে খালেদ খুব নজরকাড়া কিছু করে ফেলেছিলেন এমন না। তবুও পেসারদের জন্য নরক হয়ে উঠা বাংলাদেশে খালেদরাই ভরসা। ২০১৫-১৬ সালে বিসিবির পেস বোলিং হান্ট থেকে উঠে আসেন এই পেসার। তবে খালেদের ক্যরিয়ারে সবচেয়ে বড় সুযোগটা আসে ২০১৭ সালে। সেবছর বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা ঢায়নামাইটসের হয়ে খেলেন। যদিও সেই মৌসুমে ৪ ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছিলেন মোটে দুইটা।

খালেদের পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই যেন উইকেট নিতে না পারার একটা প্রবণতা ছিল। তবে ২০১৭-১৮ মৌসুমের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে সেটাকে খানিক ভুল প্রমাণ করেছিলেন। সেই আসরে খালেদ ৩৪.৭০ বোলিং গড়ে নিয়েছিলেন ১৭ উইকেট। এরপরই ডাক আসে হাই পারফর্মেন্স ইউনিটে। সেখানে খালেদকে গড়ে তোলার মিশন চলে লম্বা সময় ধরে।

তারপর বাংলাদেশ ‘এ’ দল হয়ে ডাক পান জাতীয় দলে। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লাল বলের ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। তবে খালেদের পুরো এই জার্নিতে কখনোই উইকেট টেকার ছিলেন না খালেদ। তবে নির্বাচকরা সবসময় বলেছেন তাঁর মধ্যে বিশেষ কিছু আছে। সেই বিশেষ কিছুর খোঁজ অবশ্য এখনো চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচে অবশ্য দুই-একটা সুযোগ তৈরি করেছিলেন। তবে ক্যাচ মিসের কারণে উইকেটটা পাননি। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টনের কন্ডিশনও কাজে লাগাতে পারেননি। সেই টেস্টেও ছিলেন উইকেট শূন্য। এরপর এক অজানা কারণে ইনজুরিতে পড়ে লম্বা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন।

এবার ফিরে এসেও খুব দারুণ কিছু দেখাতে পারেননি। বিশেষ করে ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনে কন্ডিশনের সুবিধা নিয়েও একটা উইকেট তুলতে না পারায় বেশ সমালোচনা হয়েছিলেন খালেদ ও এবাদতের। তবে আজ দিনের শুরুতেই ফিরিয়েছেন বাবর আজমকে। ১১২০ দিন ধরে যে পথটায় হাটছেন তাঁর একটা দিশা খুঁজে পেলেন মাত্র। তবে অনন্ত এক পথে মাত্র পাঁ যে রাখলেন সেটাও নিশ্চয়ই জানেন খালেদ।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link