বহুল প্রতীক্ষিত ওয়ানডে বিশ্বকাপের অর্ধেক ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। ভারত, নিউজিল্যান্ডের আধিপত্য; দক্ষিণ আফ্রিকার বিধ্বংসী ব্যাটিং ছাপিয়ে এই সময়টায় বেশি লাইমলাইট দখল করেছে আফগানিস্তান এবং নেদারল্যান্ডস। পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে রশিদ, মুজিবরা; অন্যদিকে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বিস্ময়কর জয় পেয়েছে ডাচরা, হারিয়েছে বাংলাদেশকেও।
তুলনামূলক ছোটদলগুলোর এমন পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপ আসর জমে ওঠারই কথা। কিন্তু টুর্নামেন্টের ফরম্যাটের কারণে সেটা আর হলো কই, এখনো সেমিফাইনালের দৌড়ে এগিয়ে আছে ক্রিকেটের পরাশক্তিগুলোই। চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে হেরেছে ইংল্যান্ড, অথচ এখনো তাঁদের কোচ ম্যাথু মটের বিশ্বাস, সামনের ম্যাচগুলোতে ভাল করলে তাঁরা আবারো শিরোপা জিতবেন।
ক্রিকেটীয় বিনোদনের চেয়ে অর্থকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে সাজানো সূচিতে অর্থ ঠিকই বেশি পাওয়া যাচ্ছে; কিন্তু একই কারণে খেলাটার প্রতি আকর্ষণ কমছে দর্শকদের।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের কথাই ভাবা যাক। এক লক্ষের বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গ্যালারির এক তৃতীয়াংশও পূর্ণ হয়নি সেদিন। আর সবমিলিয়ে পুরো টুর্নামেন্টে দর্শকদের উপস্থিতি ৫০ শতাংশ, এমনটাই জানিয়েছে আয়োজকরা।
তবে ভারতের ম্যাচ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। ভারত-পাকিস্তান কিংবা ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ কেবল ডিজনি+হটস্টার-এ কোটি কোটি মানুষ দেখেছে। এমনকি ড্রাইভার, দোকানি সবাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে মোবাইলে খেলা দেখতে ব্যস্ত সময় কাটায়।
পথে ঘাটে অলিগলিতে সবার মুখে মুখে এখন রোহিত, বিরাটদের নাম; খেলা দেখার পাশাপাশি খেলা নিয়ে আলোচনা করতেও তাঁদের ব্যাপক আগ্রহ। কিন্তু বাকি নয়টি দলের বেলায় এমন উদ্দীপনার সিকিভাগও দেখা যাচ্ছে না। অর্থাৎ ক্রিকেটের প্রতি নিখাঁদ যে প্রেম, সেটা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
চলতি আসরের স্লোগান হলো ‘ইট টেইকস ওয়ান ডে – যা ফুটবল বিশ্বকাপের ‘ইট টেইকস ওয়ান এন্ড হাফ আওয়ার’ এর সাথে মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এটি মূলত সমর্থকদের উপস্থিতিকে উৎসাহ দিতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কাউকে দেড় ঘন্টা সময় দিতে বলা আর একদিন দিতে বলা একই ব্যাপার নয়। তাই তো ব্যক্তিজীবনে ব্যস্ত ক্রিকেটপ্রেমীরা চাইলেও সবসময় স্টেডিয়ামে আসতে পারেন না।
সেজন্যই বোধহয় ভারতের মত ক্রিকেটপাগল দেশেও বিশ্বকাপ উন্মাদনা আগের মত চোখে পড়ছে না। ভারতের ম্যাচগুলো বাদ দিলে বাকি দিন কার খেলা হচ্ছে সেটাই অধিকাংশ স্থানীয়রা জানে না; কিংবা বলা যায়, তাঁরা জানতে চায়ও না।