উন্মাদনার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে পারে একটি গোল। একটি গোল পরিবর্তন করে দিতে পারে পুরো একটি ম্যাচের গতিপথ। আর একটা গোল হয়ে যেতে পারে একরাশ বিষাদের উৎস। ফুটবলে তাইতো গোলদাতাদের মাথায় তুলে নাচা হয়। আর বিশ্বকাপের মঞ্চে এক একটি গোল যেন বিশাল বড় সব অর্জন।
বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি দল আর্জেন্টিনা। তিন বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তাঁরা। তাঁদের হয়ে জাতীয় দলে খেলা এবং বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলতে পারার সুযোগ সবাই পান না। আর যদিও বা পান তবুও গোলের ঠিকানা খোঁজেন হন্যে হয়ে। তবে কয়েকজন খানিক ব্যতিক্রম। বিশ্বকাপের মঞ্চে তিন বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বাধিক গোল করাদের নিয়ে থাকছে আজকের আলোচনা।
- গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা
এটা মানা হয় যে, আর্জেন্টিনার হয়ে খেলা স্ট্রাইকারদের মধ্যে সবচেয়ে ‘লিথ্যাল স্ট্রাইকার’ ছিলেন গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। তিনি একটা মন্ত্রেই বিশ্বাস করতেন। নামবেন, হন্যে হয়ে গোলের সুযোগ খুঁজবেন ও এরপর গোল করবেন। ক্যারিয়ার জুড়েই তিনি সে কাজটাই করে গেছেন। গোল না করে ক্ষান্ত হওয়ার পাত্রই যেন তিনি ছিলেন না। তাঁর এই গোলের ক্ষুধায় সবচেয়ে বেশি উপকৃত হত আর্জেন্টিনা।
তাইতো তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। মোট দশটি গোল পেয়েছেন তিনি বিশ্বকাপে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে চারটি গোল করেন তিনি। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে একটি বাড়িয়ে করেন পাঁচটি গোল। আর শেষ বিশ্বকাপ ২০০২ তে করেন একটি।
- গুইলের্মো স্ট্যাবিল
লক্ষ্যভেদে দারুণ পটু ছিলেন গুইলারমো স্টেবিল। বলকে জালের ঠিকানায় পাঠানোয় যেন তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। একটি টুর্নামেন্ট খেলেই তিনি বনে গেছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে আর্জেন্টিনার তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই তিনি গুণে গুণে আট খানা বল জালে জড়ান। ১৯৩০ এর সে এক আসরেই তিনি অংশ নিয়ে রয়ে গেছেন রেকর্ডের পাতায়।
- ডিয়েগো ম্যারাডোনা
আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবেই বিবেচিত হন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তাঁর পা থেকে বল নিয়ে নেওয়াটা যেন ছিল এক অসাধ্য সাধন। তিনি বল নিয়ে ছুটে চলা মানেই আতঙ্ক। প্রতিপক্ষের মনে কাঁপন যেন অবধারিত। তিনি বল পায়ে পেলে যেন হয়ে যেতেন ভয়ার্ত। ফুটবলের জাদুকর তিনি। তাঁর জাদু ছড়াত মুগ্ধতা।
তিনি গোল করতে তাঁর সতীর্থদের যেমন সহয়তা করতেন, ঠিক তেমনি তিনি নিজেও গোল করতেন নিয়ম করে। বিশ্বকাপের মঞ্চে তাঁর করা গোলের সংখ্যা আটটি। প্রথমবার তিনি ১৯৮২ বিশ্বকাপে। এরপর ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ে তিনি অবদান রেখেছিলেন সামনে থেকে, করেছিলেন পাঁচ গোল। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে তাঁর পা থেকে এসেছে এক গোল।
- মারিও কেম্পেস
মাত্র এক বিশ্বকাপ খেলেই মারিও কেম্পস আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি মাত্র এক বিশ্বকাপেই করে ফেলেন ছয়টি গোল। তাঁর ফিনিশিং দক্ষতা ছিল দারুণ। তাছাড়া তাঁকে ‘ফক্স ইন দ্য বক্স’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৭৮ সালের এক বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলতে তিনি আর্জেন্টিনাকে সহয়তা করেছিলেন।
- লিওনেল মেসি
২০২২ বিশ্বকাপের আগে তাঁর নামের সাথে একটা আক্ষেপ, একটা হতাশা জড়িয়ে ছিল। কারণ, সব জিততে পারলেও কেন যেন বিশ্বকাপটা জেতা হচ্ছিল না তাঁর। তবে, সব দু:স্বপ্ন কাটিয়ে তিনি হাতে তুললেন স্বপ্নের সোনালি ট্রফি। আর্জেন্টিনাকে ভাসালেন তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে। এই বিশ্বকাপে তিনি করেন সাতটি গোল।
তবে এর আগে তিনি আরও চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি। ২০১০ বিশ্বকাপটা তাঁর কেটেছে গোল খড়ায়। তাছাড়া নিজের প্রথম বিশ্বকাপ অর্থাৎ ২০০৬ বিশ্বকাপে একটি গোল করেছেন তিনি।
এরপর ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা উঠেছিল তাঁর হাত ধরেই। তিনি করেছিলেন চার গোল। যদিও সেবার বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও তাঁর আর শিরোপা জেতা হয়নি। ২০১৮ সালে তিনি আরও একটি গোলের দেখা পান। মোট মিলিয়ে তাঁর গোল সংখ্যা ১৩ টি।