একটা বৃত্ত কোনো জ্যামিতিক ফিগার নয়, একটা বৃত্ত-র সংজ্ঞা বোধ হয় ইংলিশ প্রবাদে রয়েছে – ‘দ্য শো মাস্ট গো অন!’ সেই কবে আমরা হাঁটতে শিখেছি। টলমল পায়ে প্রথম হাঁটার দিন যে মানুষগুলো আমাদের হাতটা শক্ত করে ধরে থাকতো আমাদের অবিরাম দৌড়ের এই মৌসুমে সেই বাঁধন আলগা করে কতদূরে চলে গেছে তারা।
তবু আমরা হেঁটে চলি অবিরাম। এই অবিরত দৌড়ের জীবন আমাদের নিয়ে যায় বার্ধক্যে। হাত ধরে অন্য কেউ – এই অনন্ত চিত্রনাট্য একটা বৃত্ত, এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে মিশে যাওয়ার সময় পেরিয়ে আসা একটা অধ্যায়। আমরা যাকে জ্যামিতিতে বলতাম ৩৬০ ডিগ্রী।
আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স নিজের বিখ্যাত স্টান্সটা নিয়ে দাঁড়ান জোহানেসবার্গের সিল্ক পিচে। কোকাবুরা ব্যাটের কার্ভটা চকচক করে ওঠে নতুন বলের সামনে। মুখের চুইং গামটা চিবোতে চিবোতে মনে পড়ে নেলসন ম্যান্ডেলার হাত থেকে নেওয়া শ্রেষ্ঠ সায়েন্স ফিকশন প্রজেক্ট মেকারের সম্মান, দক্ষিণ আফ্রিকা জুনিয়ার রাগবি দলের অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পাবার দিন, জোড়ালো লন টেনিসের শট থেকে ক্রিকেটের ব্যাট।
নিজের তৈরী করা গানের দলের রক মিউজিকের বিটে পিচের ওপর ড্রপ খাচ্ছে ইনসুইং বলটা। এবি ডি জানেন ক্রিকেট মানে শুধু ২২ গজ নয়। তাই ব্যাকফুটটা অফ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরে বের করে হাঁটু মুড়ে বসে ব্যাটটা পেতে দিলেন ধারালো ছুড়ির মতো। সাদা কোকাবুরা বলটা একবার ব্যাটের ফেসটা কিস করতেই কবজির মোচরে ঘোরালেন ব্যাটটাকে।
পৃথিবীর সমস্ত ক্রিকেটপ্রেমীর হাততালি কানে এল। ডি ভিলিয়ার্স জানেন ক্রিকেটের এই ‘চিয়ার আপ’ স্লোগান আসলে রাষ্ট্রতত্ত্বকে ভেঙে হয়ে উঠেছে বিশ্ব ক্রিকেটের জাতীয় সংগীত। আফ্রিকা থেকে ইংল্যান্ড- অস্ট্রেলিয়া হয়ে মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রির শট ছড়িয়ে পড়ল সারা পৃথিবীতে। খেলার মাঝেই ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এলেন এবি ডি।
সাংবাদিকদের সামনে ফ্যাকাশে মুখে বলে গেলেন নিজের শেষ ক’টা উপলব্ধি, ‘১১৪ টা টেস্ট, ২২৮ টা ওয়ানডে আর ৭৮ টা টি-টোয়েন্টি খেলার পর আমার মনে হয় নতুন কোনো খেলোয়াড়ের হাতে প্রোটিয়াস ব্যাটন তুলে দেবার সময় এসেছে, আমি ক্লান্ত- কিন্তু আমি চেষ্টা করেছিলাম।’
নিভে আসছে ওয়ান্ডারার্সের আলো, ইংল্যান্ডের এজব্যাস্টন-ট্রেন্টব্রিজে একের পর এক ফ্লাডলাইট জ্বলে উঠছে। বাইশ গজে আগুন ঝরাবে কত কত ব্যাটসম্যান। কিন্তু বাইশ গজের বাইরেও আছে একটা মাঠ। সেই মাঠে খেলতে নামবেন ডি ভিলিয়ার্স, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সেই খেলা হয়ে উঠবে সারা বিশ্বের আনন্দসংগীত- সুর-তাল-ছন্দে বাঁধা সেই গান হবে বিশ্বকাপের সিম্ফনি।
সেই সুরের কোথাও হয়ত বিষাদের ঘ্রাণ লেগে থাকবে, বেজে উঠবে – ‘তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি?’